রক্তদান: বনগাঁয়। নিজস্ব চিত্র
রোজা রেখেছিলেন তিন জনই। কিন্তু মানুষের জীবন বাঁচাতে রক্ত দেওয়াটা মহৎ কর্তব্য বলে বিবেচনা করলেন তাঁরা। তাই রক্ত দিলেন রোজা ভেঙেই। ‘তাঁরা’ মানে সফিকুল মোল্লা, আয়ুব আলি মণ্ডল, পিন্টু গাজি। রক্তদান করে গ্লুকোজ, দুধ এবং ফল খেয়ে রোজা ভাঙলেন তাঁরা।
এ দিন রক্ত দেবেন বলে অবশ্য রোজা রাখেননি অনেকেই। মন্টু খান, মুকুল শেখ, রহমান মোল্লারাও রক্তদানকে আনুষ্ঠানিক ধর্মাচরণের চেয়ে বড় কাজ বলে মনে করেছেন। তাই পাড়ায় আয়োজিত রক্তদান শিবিরে উত্তম ঘোষ, অভিজিৎ মণ্ডলদের পাশে শুয়ে তাঁরাও রক্ত দিলেন।
রোজার সময়ে কেন করলেন তাঁরা এরকম?
উত্তরটা দিয়ে দিলেন বনগাঁ পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের জয়পুর এলাকায় রক্ত দান শিবিরের আয়োজক সবুজ সঙ্ঘের সভাপতি রহমান মোল্লা। তিনি বলেন, ‘‘ধর্ম পালনের চেয়েও মানুষের জীবন বাঁচানোটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই রোজা না করেই আমরা রক্ত দিলাম।’’
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে রক্তের সঙ্কট হতে পারে— খবরটা আগেই কানে পৌঁছেছিল সফিকুল, মুকুলদের কানে। এ জন্য রবিবার সবুজ সঙ্ঘ আয়োজিত রক্তদান শিবিরে সামিল ছিলেন তাঁরা।
রক্তদান করে দুধ-ফল খেয়ে রোজা ভেঙে সফিকুল বলেন, ‘‘রক্ত মানুষের জীবন বাঁচায়। রক্তের সংকট হতে পারে শুনে রোজা ভেঙেই রক্ত দিলাম। মানুষের জীবনের চেয়ে বড় আর কী হতে পারে?’’ একই সুর মুকুল শেখদের গলায়। মুকুলের কথায়, ‘‘রক্ত দেব বলেই আমরা কেউ কেউ রোজা রাখিনি। আমরা মনে করি, রক্তদানের চেয়ে বড় সামাজিক কাজ আর কিছু হতে পারে না।’’
এ দিন রক্তদান শিবিরে স্থানীয় কাউন্সিলর হিমাদ্রি মণ্ডল বলেন, ‘‘এখানে সম্প্রীতির ভিত মজবুত। সব কাজ আমরা একসঙ্গে করি। মানুষের প্রাণ বাঁচানোই সব চেয়ে বড় ধর্ম।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের রক্তদান শিবির থেকে ৩০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। যা খুবই প্রয়োজন ছিল। সবুজ সঙ্ঘের সভাপতি রহমান মোল্লার কথায়, ‘‘হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে যাতে কোনও রক্ত-সঙ্কট তৈরি না হয় সে জন্যই আমরা রক্তদান করেছি। আমাদের রক্তে যদি কারও জীবন বাঁচে, তা হলে এর চেয়ে ভাল কিছু হয় না।’’
শিবিরে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ইনচার্জ তথা চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার। তাঁর কথায়, ‘‘রক্ত সঙ্কট হতে পারে জেনে যে ভাবে রোজার মধ্যেও মানুষ এগিয়ে এসে রক্ত দিলেন, তা সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। মহকুমাতে এমন ঘটনা এই প্রথম।’’
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোট ও রমজানের কারণে মে-জুন মাসে রক্তদান শিবির প্রায় হয় না বললেই চলে। ফলে এই সময়ে রক্তের অভাব দেখা দেয়। এ নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গোপাল পোদ্দার মহকুমার বিভিন্ন ক্লাব সামাজিক সংগঠন ও থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে হাসপাতালের রক্ত-সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। তাদের শিবির করতেও অনুরোধ করা হয়েছিল। তার মধ্যে এ দিনের সবুজ সঙ্ঘও ছিল।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লাড ব্যাঙ্কে ৩০০ ইউনিট রক্ত রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে প্রয়োজন হয় ২২ ইউনিট রক্ত। মে মাসে শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ হয়েছিল ৪৭৮ ইউনিট। কিন্তু রক্ত দিতে হয়েছিল ৫২৮ ইউনিট। বনগাঁ মহকুমার প্রায় ১২ লক্ষ মানুষের রক্তের একমাত্র ভরসা হাসপাতালের এই ব্লাডব্যাঙ্ক।
গোপাল পোদ্দার জানান, গত বছর মে মাসে শিবির থেকে ৭৫০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল। অন্য বছরগুলিতে এই সময় মাসে ১৫টি করে শিবির হয়। এ বার মাত্র ৫টি শিবির হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের আবেদনে সাড়া দিয়ে বাগদা থানা গোপালনগর থানা ও বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠন এগিয়ে এসেছে। ফলে রক্তের সম্ভাব্য সঙ্কট এড়ানো গিয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান। চলতি মাসে অবশ্য ১৫টি রক্তদান শিবিরেরই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy