বনগাঁ-পাটশিমুলিয়া সড়ক থেকে বাঁ দিকে ইটের এবড়ো খেবড়ো রাস্তা ধরে পাঁচশো মিটার পথ এগোলে খেতের মধ্যে মাথা উঁচু করে রয়েছে সদ্য তৈরি একটি পাকা বাড়ি। বনগাঁর বোয়ালদহ এলাকায় ওই বাড়িতে এখনও পলেস্তারা পড়েনি। আরও কিছু কাজ বাকি। শনিবার গিয়ে দেখা গেল, দরজায় তালা দেওয়া। ঘরের ভিতরে উঁকি মেরে চোখে পড়ল, একটি ঘরে গ্যাসের সিলিন্ডার রয়েছে। অন্য ঘরে খাট-বিছানা পাতা।
পুলিশ জানতে পেরেছে, এই বাড়িটি বানাচ্ছিলেন মর্কেচুর রহমান নান্নু নামে বছর চল্লিশের এক বাংলাদেশি যুবক। শুক্রবার বিকেলে বনগাঁর চড়ুইগাছি এলাকার একটি খাল থেকে তাঁর পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। হাসপাতালে দেহ শনাক্ত করেন তার স্ত্রী লাভলি ইয়াসমিন। বোয়ালদহ গ্রামের বাসিন্দা শোহারব মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্বামীকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। বাংলাদেশ থেকে এসে প্রায় দেড় বছর শোহারবের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন নান্নু।
ঘটনাচক্রে বনগাঁ থানার পুলিশ ক’দিন আগে শোহারবকে গ্রেফতার করে। চোরাপথে বাংলাদেশ থেকে আসা লোকজনকে নিজের বাড়িতে সে আশ্রয় দিত বলে অভিযোগ। শোহারব আপাতত পুলিশি হেফাজতে। তার বিরুদ্ধে নতুন করে খুনের মামলা রুজু করে পুলিশ। তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সি সুধাকর।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, শোহারবকে খুনের ‘সুপারি’ দেওয়া হয়েছিল সীমান্তের ও পার থেকে। দুষ্কৃতীদের লাগিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে নান্নুকে খুন করা হয়। পুলিশ জানতে পেরেছে, খুনের রাতে নান্নুর সঙ্গেই ছিল শোহারব।
পুলিশ জানতে পেরেছে, যশোর জেলার ঘোজারহাট শ্যামনগরের বাসিন্দা নান্নু বছর দেড়েক আগে চোরাপথে এ দেশে পালিয়ে আসেন। ওঠেন শোহারবের বাড়িতে। পুলিশকে তাঁর স্ত্রী জানিয়েছেন, মিন্টু নামে এক নেতা ও ইদ্রিস নামে একজনকে খুনের অভিযোগ আছে স্বামীর বিরুদ্ধে। ইদ্রিস খুন হওয়ার পরেই এ দেশে পালিয়ে আসেন নান্নু। তাঁর স্ত্রীর দাবি, স্বামীকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এমন এক যুবক অবশ্য এ দেশে এসে রীতিমতো জাঁকিয়ে বসেছিলেন। জমি কিনে বাড়ি তৈরি করছিলেন। জমি কিনতে পঞ্চায়েতের অনুমতি নিতে না হলেও বাড়ি করতে অনুমতি লাগে। এ ক্ষেত্রে বাড়ি তৈরির জন্য নান্নু পঞ্চায়েত থেকে কোনও অনুমতি নেননি বলেই দাবি করেছেন স্থানীয় ঘাটবাওর পঞ্চায়েতের প্রধান জেসমিন আরা খাতুন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, মাস তিনেক আগে জমি কিনে বাড়ি তৈরি শুরু করেন নান্নু। মাঝে মধ্যে এখানেই থাকতেন। কয়েক দিনের মধ্যে পাকাপাকি ভাবে বাড়িতে উঠে আসার কথা ছিল। ভাল ব্যবহার করতেন এলাকায়।
নিহতের একটি এ দেশের আধার কার্ড পুলিশ উদ্ধার করেছে। সেখানে নাম আছে ‘নান্নু মণ্ডল’। বাড়ির ঠিকানা দেওয়া হয়েছে বনগাঁর জয়পুর গ্রামে। আধার কার্ডটি নকল না আসল পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy