অনুষ্ঠানে দুই মন্ত্রী। মঙ্গলবার ছবি তুলেছেন নির্মল বসু।
নতুন সেতু, কংক্রিটের রাস্তা, জল প্রকল্প, রেশনের বিশেষ প্যাকেজ।
দুর্গাপুজোর আগে সুন্দরবন এলাকার জন্য একসঙ্গে অনেকগুলি সুখবর শোনালেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। মঙ্গলবার হাসনাবাদ ব্লকের টাকির সাংস্কৃতিক মঞ্চে সুন্দরবনের উন্নয়ন নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে খাদ্যমন্ত্রী জানান, মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য হল সুন্দরবনের সার্বিক উন্নতি। সেই উদ্দেশ্যেই কাজ শুরু হয়েছে।
এ দিনের বৈঠকে অনেকগুলি নতুন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য হাসনাবাদে ঘুনি বাঁশতলা থেকে হিঙ্গলগঞ্জের বাইলানি বাজার পর্যন্ত রাস্তা তৈরি হবে। তার জন্য ৬ কোটি ১১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জের সাহেবখালি নদীর উপর দুলদুলি এবং নেবুখালির মধ্যে ১০০ কোটি টাকা খরচ করে সেতুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিদ্যা নদীর উপরে বাসন্তীর গদখালি থেকে গোসাবা পর্যন্ত সেতু তৈরিতে বরাদ্দ হয়েছে ২৮৫ কোটি টাকা। টাকি রোডের সম্প্রসারণের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২৭ কোটি টাকা। শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি নয়, সুন্দরবনে পরিশুদ্ধ পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। এ বার সেই সমস্যা মেটাতে সাতটি গ্রাম পিছু একটি করে জল প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু উন্নয়ন নয়, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় এ বার কড়া হচ্ছে জেলা প্রশাসন। ম্যানগ্রোভ অরণ্য নষ্টের অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এ দিনের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে।
খাদ্যমন্ত্রী তথা হাবরার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘সুন্দরবনের রেশন দোকান থেকে ২ টাকা কিলো দরে চাল দেওয়া চলছে। এ ছা়ড়াও, দুর্গাপুজো এবং মহরম উপলক্ষে খাদ্য দফতরের উদ্যোগে রেশন দোকান থেকে তেল, চিনি এবং ময়দার বিশেষ প্যাকেজ মিলবে। এর জন্য রাজ্য সরকার ২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে।’’
খাদ্যমন্ত্রী জানান, হাসনাবাদ এবং পারহাসনাবাদের মধ্যে সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ওই সেতুর নাম দিয়েছেন বনবিবি সেতু। ওই সেতুর জন্য যাদের জমি নিতে হয়েছে এবং দোকান ভাঙতে হয়েছে তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য কর্মতীর্থ প্রকল্পের আওতায় ৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দু’টি মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করা হবে।
এ দিন টাকির সাংস্কৃতিক মঞ্চে সকাল ১১টা নাগাদ বৈঠকটি শুরু হয়। সেখানে জ্যোতিপ্রিয়বাবু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মণ্টুরাম পাখিরা, উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য, জেলা পরিষদের সভাধিপতি রেহেনা খাতুন, জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী, টাকির পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। এ ছাড়াও ছিলেন সুন্দরবন এলাকার প্রশাসনিক কর্তা এবং স্কুল শিক্ষকেরা। এ দিন মন্টুরামবাবু জানান, সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের অধীনে ইতিমধ্যেই সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ৩৬টি জেটি তৈরি হয়েছে। প্রতিটি জেটির জন্য খরচ হয়েছে ৩৫ লক্ষ টাকা। মণ্টুরামবাবুর দাবি, এক বছর পরে সুন্দরবনের কোনও গ্রামে মাটির রাস্তা থাকবে না। বৈঠক শুরুর আগে সবুজসাথী প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন করে পড়ুয়াদের হাতে সাইকেল তুলে দেওয়া হয়। মঙ্গলবারই সন্ধ্যায় সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা বলে পরিচিত ভবানীপুর ২ পঞ্চায়েতের মডেল বাজারে এক জনসভায় নিজের সাংসদ কোটার টাকায় তৈরি শ্মশান, কবরস্থান এবং শৌচাগারের উদ্বোধন করেন বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিশ আলি।
সুন্দরবনের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতির জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগ অবশ্য এই প্রথম নয়। মঙ্গলবারের বৈঠকে হিঙ্গলগঞ্জের সাহেবখালি নদীর উপর যে প্রস্তাবিত সেতুর কথা বলা হয়েছে সেটির এর আগে তিন বার শিলান্যাস হলেও কাজ হয়নি। এ বার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবে তো সরকার? ফের আশায় বুক বাঁধছে সুন্দরবন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy