—ফাইল চিত্র
জয়নগরের নিমপীঠ গ্রামীণ হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা ঘিরে অচলাবস্থা চলছেই।
হাসপাতাল থেকে টাকা মিলছে না— এই অভিযোগে গত ১১ জানুয়ারি হাসপাতালে প্রসূতি পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত সাতটি অ্যাম্বুল্যান্স বন্ধ করে দেন চালকেরা। ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও, এখনও পরিষেবা চালু হয়নি। অ্যাম্বুল্যান্স না থাকায় সমস্যায় পড়ছেন রোগীরা। অভিযোগ, হাসপাতালে আসতে না পেরে বাড়িতেই প্রসব হচ্ছে অনেক মহিলার।
কয়েক বছর আগে প্রসূতি পরিবহণের জন্য স্বাস্থ্য দফতর এই অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা শুরু করে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ জন্য দু’টি হেল্প লাইন নম্বর চালু হয়। বাড়ি বাড়ি সেই নম্বর পৌঁছে দেন আশাকর্মীরা। কোনও প্রসূতির হাসপাতালে পৌঁছনোর দরকার হলে, সেই নম্বরে ফোন করলেই অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছে যেত বাড়িতে। প্রসবের পরে শিশু-সহ মহিলাকে বাড়িতেও পৌঁছে দিত অ্যাম্বুল্যান্স। প্রসবকালীন কোনও জটিলতার জেরে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার প্রয়োজন হলেও এই অ্যাম্বুল্যান্সই তা করত। এ জন্য রোগীকে কোনও খরচ দিতে হত না। পুরো খরচটাই বহন করত হাসপাতাল।
গ্রামাঞ্চলে এখনও বাড়িতে প্রসবের চল পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। এর জেরে মা বা শিশুর নানা সমস্যা এমনকী মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। প্রসবকালীন সংখ্যা ও মৃত্যুর হার কমাতে প্রতিটি প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে আসতেই স্বাস্থ্য দফতর থেকে বিনামূল্যে এই মাতৃযান অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার সূচনা করা হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা গোটা মাসের খরচ লিখে জমা দিতেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মাধ্যমে সেই টাকা হাসপাতালে এলেই তা সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হত চালকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
চালকদের অভিযোগ, অগস্ট মাস থেকে সেই টাকা আর তাঁরা পাচ্ছেন না। প্রায় ছ’মাস টাকা ছাড়াই গাড়ি চালিয়ে অবশেষে তাঁরা রোগী পরিবহণ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। বকেয়া টাকা না পেলে আর পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
অ্যাম্বুল্যান্স চালক সুকুমার নাইয়া, সুদীপ সর্দাররা বলেন, ‘‘পরিষেবা বন্ধ করতে আমরা চাইনি। ছ’মাস কষ্ট করে গাড়ি চালিয়ে গিয়েছি। কিন্তু টাকা না পেলে কত দিন আর এ ভাবে চালিয়ে যাব! তাই বাধ্য হয়েই বন্ধ করে দিয়েছি। টাকা না পেলে আর চালানো সম্ভব নয়।’’
অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন রোগীরা। নিজেদের খরচে গাড়ি ভাড়া করে প্রসূতিকে হাসপাতালে আনতে হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে গাড়ি পেতেও সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে অনেক জায়গাতেই বাড়িতে প্রসবও হচ্ছে। আশাকর্মী তপতী পাইক বলেন, ‘‘অনেকেই হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করছেন। কিন্ত অ্যাম্বুল্যান্স যাচ্ছে না। আমরা বোঝাচ্ছি, যেমন ভাবে হোক হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য। যাঁরা পারছেন, গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে আসছেন। অনেকেই বাড়িতে প্রসব করাচ্ছেন।’’
গড়দেওয়ানি থেকে অন্তঃসত্ত্বা বোন তনুজা লস্করকে নিয়ে বুধবার হাসপাতালে আসেন ফরিদা গাজি। অ্যাম্বুল্যান্স না পাওয়ায় বিরক্ত ফরিদা বলেন, ‘‘বার বার ফোন করেও কোনও অ্যাম্বুল্যান্স আসেনি। বাধ্য হয়ে অটো ভাড়া করে বোনকে হাসপাতালে আনলাম। প্রায় ৫০০ টাকা ভাড়া নিল। তার উপরে এই অবস্থায় অটোতে এতটা পথ আসা রোগীর জন্য ঝুঁকির। হাসপাতালের উচিত অবিলম্বে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা শুরু করা।’’
অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা বন্ধ থাকায় প্রায় প্রতিদিনই ঝামেলা বাধছে হাসপাতালে। অভিযোগ, অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাকর্মী এমনকী আশা কর্মীদের উপরও ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন রোগীর পরিবারের লোকজন।
কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি?
হাসপাতাল সূত্রের খবর, সমস্যার কথা জেলা দফতরকে জানানো হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই টাকা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর পাঠায়। গত ছ’মাস সেই টাকা আসছে না। গোটা রাজ্য জুড়েই এই পরিস্থিতি। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। দ্রুত টাকা এসে যাওয়ার কথা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy