Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভোটের উত্তাপের মধ্যেও প্রার্থী কথা বললেন গান-বাজনা নিয়ে

ভোটের শুরুতেই খোদ ব্যারাকপুর সদর পুরসভার শ্যামশ্রীপল্লি ও মন্মথনাথ স্কুলের বুথে বিরোধী এজেন্টদের যে ভাবে হুমকি দিয়ে বার করে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয় তাতে আমরা ভেবেছিলাম এ বারেও ভূতের তাণ্ডব চলবে। কিন্তু আধ ঘণ্টা যেতে না যেতেই ছবিটা ক্রমশ পাল্টে গেল।

বুথের বাইরে ভোটারদের লম্বা লাইন। ছবি: সুদীপ আচার্য।

বুথের বাইরে ভোটারদের লম্বা লাইন। ছবি: সুদীপ আচার্য।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিতান ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২২
Share: Save:

ভোটের শুরুতেই খোদ ব্যারাকপুর সদর পুরসভার শ্যামশ্রীপল্লি ও মন্মথনাথ স্কুলের বুথে বিরোধী এজেন্টদের যে ভাবে হুমকি দিয়ে বার করে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয় তাতে আমরা ভেবেছিলাম এ বারেও ভূতের তাণ্ডব চলবে। কিন্তু আধ ঘণ্টা যেতে না যেতেই ছবিটা ক্রমশ পাল্টে গেল।

মহকুমাশাসকের কন্ট্রোল রুমে ফোন বাজতেই যেন তেতে উঠল প্রশাসন। সেক্টর মোবাইল, আরটি মোবাইল ও রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াডেরা ভূত তাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এক ঘণ্টা পরে ওই বুথেরই সামনে দেখা গেল, ভোটারদের দীর্ঘসারি। রোদ মাথায় করেও সকলেই হাতে ভোটের কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনাতে নির্বাচন সামাল দিতে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল হ্যামরেডিও।

ব্যারাকপুর থেকে বীজপুর যাওয়ার মূল রাস্তা হল ঘোষপাড়া রোড। ওই রাস্তার ধারেই বিধানসভা কেন্দ্র। ছিল অনেক বুথ। এ রকমই একটি বুথ হাজিনগর হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জায়গার অভাবে ভোটারদের লাইন দিতে হয়েছে রাস্তার উপরেই। সাড়ে ৯টা নাগাদ আমরা সেখানে পৌঁছোই। ডান দিক বাম দিকে সাপের মতন লাইন গিয়েছে। অতবড় লাইনে পাহারা দিতে দাঁড়ানো মাত্র দু’জন জওয়ান। রাস্তা সুনসান। শিল্পাঞ্চলে এমন দৃশ্য প্রায় অমিল।

ভাটপাড়ার রিলায়েন্স জুট মিলের কাছে পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল একটি দুধ সাদা টয়োটা ফরচুনার। মাথা তুলে উঁকি দিতেই দেখা গেল তাতে রয়েছেন বিদায়ী বিধায়ক অর্জুন সিংহ। তাঁকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে বললাম, হালিশহরের শিশু নিগ্রহের ঘটনা। শুনে বিধায়কের চটজলদি উত্তর, ‘‘বিনাশকালে বুদ্ধি নাশ, বুঝলেন না! খুব খারাপ ঘটনা। কিছু বলার নেই।’’ কাদের ‘বিনাশকাল’, সেটা কিন্তু বোঝা গেল না।

সকাল সাড়ে ১০টা। প্রচণ্ড রোদের তাপ। ফাঁকা রাস্তায় আমরা গাড়ি নিয়ে ছুটলাম বীজপুরে। গিয়ে দেখি শুভ্রাংশু তখন বাড়ির নীচতলায় বাবা মুকুল রায়ের অফিসের চেয়ারে বসেছিলেন। বললাম, ভোট দেবেন না? তিনি বলেন, ‘‘বেলা তিনটের পর যাব। এরপরে হালিশহরে তাঁর দলের লোকজনের হাতে শিশু নিগৃহ হয়েছে শুনে বললেন, ‘‘দেখুন আমার এলাকায় কোনও গোলমাল নেই। আমি সকলের সঙ্গেই থাকি জানেন! এ সব পছন্দ করি না। তা-ও আবার শিশু! ছি! ছি! আমার খারাপ লাগছে।’’ তারপরে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, ‘‘বলে দেবেন আমি ওই পরিবারের পাশে আছি, থাকবও। বাড়ি মেরামতের যা খরচ, সেটাও আমি দেবো। এমনকি শিশুটির চিকিৎসাও করাব।’’

সাড়ে ১১টা নাগাদ শুভ্রাংশুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমরা নৈহাটিতে এলাম। তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিককে দেখে মনে হল ভোটের ব্যাপারে তাঁর কোনও মাথা ব্যথা নেই। নাটক, গান বাজনা এই নিয়ে এ দিনও তিনি আড্ডা মারলেন আমাদের সঙ্গে। আমাদের দেখেই বললেন, ‘‘মানুষ ভোট দিচ্ছে। কোনও চাপ নেই জিতছি।’’

ফেরার সময় ভাটপাড়ার ১০ নম্বর গলির কাছে রাস্তায় ফের দেখা হল অর্জুনের সঙ্গে। তখন কিছুটা চিন্তিত মনে হল। ওই গলিতেই নাকি মহিলাদের চুলের মুটি ধরে মারছে সিআরপিএফ। আমরাও দেখতে গেলাম। দেখলাম, বুথের চারপাশ কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘিরে রেখেছে। পুরো এলাকা ফাঁকা। অনেকটা দূরে রাস্তায় তখন অর্জুন তাঁর লোকজন নিয়ে দাঁড়ানো।

বিরোধীদের বক্তব্য, ওই বাহিনী ঢোকাতে না পেরে মহিলাদের মারার কথা বলছেন বিদায়ী বিধায়ক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

music election candidate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE