Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
আয়লার দশ বছর পার, কেউ কথা রাখেনি

কংক্রিটের বাঁধ তৈরির কাজ বিশ বাঁও জলে

খনও পর্যন্ত যে ২২ কিলোমিটার আয়লা বাঁধের কাজ চলছে, তাতেই প্রায় ২২০ কোটি টাকা খরচ।

ভাঙন: ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে নদীপাড়। পাথরপ্রতিমার জি-প্লট এলাকায়। গ্রাফিক: জিয়া হক

ভাঙন: ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে নদীপাড়। পাথরপ্রতিমার জি-প্লট এলাকায়। গ্রাফিক: জিয়া হক

নির্মল বসু ও সামসুল হুদা
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ১১:০৯
Share: Save:

আয়লার পরে দশ বছরে বসিরহাট মহকুমার সুন্দরবন লাগোয়া এলাকায় মাত্র ১১ কিলোমিটার আয়লা বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। ক’দিন আগেই ফণীর ভ্রুকুটি যে কারণে রাতের ঘুম কেড়েছিল বাঁধ এলাকার অসংখ্য মানুষের।

মহকুমা সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সেচ দফতরের বসিরহাট ডিভিশনের অধীনে সাড়ে ৮ শো কিলোমিটার নদীবাঁধ আছে। ১১ কিলোমিটার আয়লা বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। আরও ১১ কিলোমিটার কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু হয়েছে।

২০০৯ সালে ২৫ মে উত্তর পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা আয়লার দাপটে তছনছ হয়ে যায়। রায়মঙ্গল, বড়কলাগাছি, কালিন্দী, বেতনি, ছোটকলাগাছি, কালিন্দী, ইছামতী, ডাঁসা-সহ বহু নদীর জল ফুলে-ফেঁপে উঠে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল অসংখ্য ঘরবাড়ি, গাছগাছালি। বহু প্রাণহানি ঘটে। চাষের জমি, মাছ চাষের ক্ষয়ক্ষতি হয়। বহু গবাদি পশুরও প্রাণ গিয়েছিল।

আশা করা গিয়েছিল, কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করে পাকাপাকি ভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলার ব্যবস্থা হবে। তা নিয়ে বিস্তর প্রতিশ্রুতি মেলে। কিন্তু কাজের কাজ যে বিশেষ কিছুই হয়নি, তার আরও বড় প্রমাণ ফণী। যার আগমনের আশঙ্কাতেই বহু মানুষকে নদীপাড়ের এলাকা থেকে তড়িঘড়ি সরে যেতে হয়েছিল নিরাপদ আশ্রয়ে।

তবে আয়লার পরে গ্রামের প্রভূত উন্নতি হয়েছে দাবি করেছেন হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘কংক্রিটের রাস্তা, বিদ্যুৎ, সেতু, বাঁধ, পানীয় জল-সহ বিভিন্ন পরিষেবার অনেক উন্নতি হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে গ্রামের মানুষ সুবিধা পেয়েছেন।’’

কিন্তু আসল যে কাজটা দরকার ছিল, কংক্রিটের বাঁধ, তার কাজ এত ঢিমেতালে এগোচ্ছে কেন? মহকুমা প্রশাসন ও সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এক মিটার আয়লা বাঁধ করতে খরচ ধরা হয়েছে ৯০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত যে ২২ কিলোমিটার আয়লা বাঁধের কাজ চলছে, তাতেই প্রায় ২২০ কোটি টাকা খরচ। সুন্দরবন এলাকায় আপাতত ২৭টি জায়গায় ২১ হাজার ৬১২ মিটার কংক্রিটের বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে সন্দেশখালির বেড়মজুর এবং হাসনাবাদের আবাদ শুলকুনি ও চকপাটলির ১৫৮ মিটার কাজ শেষ হয়েছে। হেমনগর, কালীতলা, পঁটিয়া মঠবাড়ি, মালেকানঘুমটি, সিংহেরকাটি, খোসবাস-সহ মোট ২০টি জায়গায় ১১,০৯৫ মিটারের কাজ চলছে। প্রশ্ন উঠছে, গত দশ বছরে যদি ২২ কিলোমিটার বাঁধের কাজ হয়, তা হলে কবে শেষ হবে গোটা এলাকার কাজ? তার মধ্যে তো পুরনো নদীবাঁধে আবার ভাঙন ধরতে পারে। আয়লা বাঁধের জন্য অধিকৃত জমির অনেকটা নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে। তা হলে ফের জমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন পড়তে পারে।

সুন্দরবনের সামসেরনগরের জঙ্গল লাগোয়া কুড়েখালি নদীর পাড়ে ঝুপড়িতে থাকেন রণদেব সর্দার, নিরঞ্জন বেরা, অহাব গাজি। তাঁদের আক্ষেপ, ‘‘আয়লায় সর্বস্ব হারিয়েছিলাম। অনেক টাকা, ঘর পেয়েছে। আমাদের মত কেউ কেউ কিছুই পায়নি। তাই ঝুপড়িতে কাটাই। পাকা বাঁধ না হলে কবে আবার ঠাঁইনাড়া হতে হবে, কে জানে!’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও আয়লা বাঁধ তৈরির কাজ তেমন এগোয়নি।

প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, ‘‘আয়লা পরবর্তী সুন্দরবনে নদী বাঁধ তৈরির জন্য দরবার করে কেন্দ্র থেকে ৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা আদায় করেছিলাম।’’ তিনি জানান, সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশের আদলে কংক্রিটের নদীবাঁধ তৈরির পরিকল্পনা ছিল বাম সরকারের। কিন্তু তারপরে পরেই রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়। তৃণমূল সরকার নদী বাঁধ নির্মাণের কাজ না করায় কেন্দ্রের টাকা ফেরত চলে গিয়েছে বলে দাবি সুভাষের।

সেচ দফতর সূত্রের খবর, জমিজটের কারণে সুন্দরবনে নদী বাঁধের কাজ অনেক জায়গায় করা যায়নি। তবে যে সব জায়গায় জমি পাওয়া গিয়েছে, সেখানে আয়লা বাঁধ তৈরি হয়েছে।

তৃণমূলের একাংশ ও স্থানীয় মানুষের অনেকেরই অভিযোগ, বাম আমলে আয়লা বাঁধ প্রকল্পে তৎপরতা দেখায়নি তৎকালীন সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ।

এ বিষয়ে গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর বলেন, ‘‘কিছু সমস্যা আছে ঠিকই। তবে তা কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে। ইতিমধ্যে সুন্দরবনের বেশ কিছু এলাকায় আয়লা নদী বাঁধের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Aila Sundarbans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE