Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ব্যারাকপুরে দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম ব্যবসায়ী

দুষ্কৃতীদের গুলিতে গুরুতর জখম হলেন এলাকার এক ব্যবসায়ী। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি এখন চিকিৎসাধীন।

সুনসান: এলাকা বন্ধ। —নিজস্ব চিত্র।

সুনসান: এলাকা বন্ধ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৮
Share: Save:

তোলাবাজি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা ছড়াচ্ছিল এলাকায়। তোলাবাজদের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন বাসিন্দারা। অভিযোগ, তাদের বিরোধিতা করলে ‘লাশ পড়ে যাবে’ বলে হুমকিও দিয়েছিল ওই দুষ্কৃতীরা। এবং সেই হুমকি যে ফাঁকা বুলি নয়, সোমবার রাতে তা হাড়ে হাড়ে টের পেল গোটা এলাকা। দুষ্কৃতীদের গুলিতে গুরুতর জখম হলেন এলাকার এক ব্যবসায়ী। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি এখন চিকিৎসাধীন।

এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাস্তায় নামেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দোকানপাট বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। গুলি চালানোর ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু শিবু যাদব বলে যার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, সে এখনও ধরা পড়েনি। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, শিবু ও তার দলবলকে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা মদত দিচ্ছেন। তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় থেকেই শিবু সমাজবিরোধী কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। দলের অন্দরেও কেউ কেউ এই অভিযোগ তুলেছেন। তবে তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশের বক্তব্য, দু’টি পাড়ার মধ্যে গণ্ডগোলের জেরেই ওই ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মণিরামপুর সদর বাজারে চাঁদুর মাছের ব্যবসা রয়েছে। সোমবার রাত পৌনে ১১টা নাগাদ ওষুধ কিনতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল তাঁর ছেলে। সেই সময়ে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছিল সশস্ত্র কিছু দুষ্কৃতী। আর পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এলাকার কয়েক জন যুবক। হঠাৎই কোনও কারণে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল বচসা বেধে যায়।

তখনই আচমকা আগ্নেয়াস্ত্র বার করে শাসাতে শুরু করে ওই দুষ্কৃতীরা। পাড়ার যুবকেরা পুলিশ ডাকার কথা বলতেই শূন্যে গুলি ছোড়ে তারা। এর পরে ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা তাদের তাড়া করলে ওই দুষ্কৃতীরা দৌড়তে দৌড়তেই গুলি চালাতে থাকে। সেই সময়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেন চাঁদু। তাঁর গায়ে গুলি লাগে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। তা দেখে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।

জখম চাঁদুকে স্থানীয় বি এন বসু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার সকালে সেখান থেকে তাঁকে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গুলিতে হাতের হাড় ভেঙেছে চাঁদুর। চোট লেগেছে পাঁজরেও। চাঁদুর স্ত্রী শেহনাজ বিবি জানান, তাঁর স্বামীর সঙ্গে কারও কোনও বিরোধ নেই। কেন তাঁকে গুলি করা হল, জানেন না তিনি।

ঘটনার পরেই পুলিশ আসে এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা তোলাবাজদের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ চাঁদু এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে। ব্যারাকপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (জোন ১) কে কারনান জানান, দুই পাড়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গোলমাল চলছিল। তার জেরেই এক পক্ষ গুলি চালিয়েছে। অভিযুক্তদের তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের নাম এস কে রাজ, তপন নায়েক ও রামা জয়সোয়ারা। তবে চাঁদুকে পাওয়া যায়নি।

ঘটনার পরে তৃণমূল নেতা অর্জুন সিংহ এলাকায় আসেন। বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়ে তিনি বলেন, ‘‘এলাকায় কারও দাদাগিরি সহ্য করা হবে না। পুলিশকে বলেছি, দোষীদের পাকড়াও করতে।’’

স্থানীয় তৃণমূল নেতা, ব্যারাকপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী রবীন ভট্টাচার্য বলেন, “এলাকার দুষ্কৃতী শিবু যাদব ও তার দলবল দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার বাসিন্দাদের উপরে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। তারা চাইছে, এখানে দুষ্কৃতী-রাজ কায়েম হোক। যাঁরা প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের উপরে হামলা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।” এলাকার তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত বলেন, “আমি পুরো ঘটনা এখনও জেনে উঠতে পারিনি। খোঁজ নিয়ে দেখছি, ঠিক কী ঘটেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE