Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জ্যাকেট এড়িয়ে যান যাত্রীরাও

নৌকো এসে ভিড়ল ঘাটে। ভিড় অপেক্ষা করছিল টিকিট কাউন্টার ঘেঁষে। নৌকা থেকে যাত্রীরা নামার আগেই ভিড়টা হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়ল ভুটভুটি নৌকাটিতে।

অযত্ন: পড়ে রয়েছে লাইফ জ্যাকেট। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

অযত্ন: পড়ে রয়েছে লাইফ জ্যাকেট। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ০২:৩০
Share: Save:

নৌকো এসে ভিড়ল ঘাটে। ভিড় অপেক্ষা করছিল টিকিট কাউন্টার ঘেঁষে। নৌকা থেকে যাত্রীরা নামার আগেই ভিড়টা হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়ল ভুটভুটি নৌকাটিতে।

লোকজন যেখানে অপেক্ষা করছিলেন, সেই টিকিট কাউন্টারের পাশে ডাঁই করে রাখা বেশ কয়েকটি লাইফ জ্যাকেট। ঘটনাস্থল ব্যারাকপুরের কানাই দেওয়ান ঘাট (কলেজ ঘাট)। ও পাড়ে হুগলির শেওড়াফুলি। বলা বাহুল্য, ও পাড় থেকে যে সব যাত্রীরা এলেন, তাঁদের কারওরই লাইফ জ্যাকেট ছিল না।

গত এপ্রিলে ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়ায় বাঁশের অস্থায়ী জেটি ভেঙে গঙ্গায় ডুবে মৃত্যু হয় ১৪ জনের। তার পর দিন নৌকোডুবির ঘটনা ঘটে ইছাপুরে। তারও আগে নদিয়ার শান্তিপুর-কালনাঘাটের মাঝে সেই গঙ্গাতেই নৌকো ডুবে মৃত্যু হয় ২২ জনের। তেলেনিপাড়ার দুর্ঘটনার পরে নির্দেশ জারি করা হয়, নৌকোর সব যাত্রীকে লাইফ জ্যাকেট পড়তে হবে। সব ঘাটেই পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট রাখতে হবে। লাইফ জ্যাকেটে কেনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট পুরসভাকে।

নির্দেশ মতো ব্যারাকপুরের প্রায় সব ঘাটেই শতাধিক লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা হয়েছে। হুগলির ঘাটগুলিতেও রাখা রয়েছে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট। কিন্তু যাত্রীদের প্রায় কেউই তা পড়ছেন না। ঘাটের ইজারাদাররা বলছেন, ‘‘যাত্রীরা না পরতে চাইলে আমরা কী করতে পারি।’’ প্রশ্ন উঠছে, যদি ফের কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, তা হলে কী হবে? ইজারাদারদের বক্তব্য, সামনে কালবৈশাখীর মরসুম। যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শুধু লাইফ জ্যাকেট নয়, অভিযোগ, যাত্রী ওঠা-নামার ক্ষেত্রেও নিয়ম মানা হচ্ছে না।

কলেজ ঘাটে কোনও স্থায়ী জেটি নেই। ফলে যাত্রীদের আটকে রাখারও কোনও ব্যবস্থা নেই। তেলেনিপাড়ার দুর্ঘটনার পরে নির্দেশ জারি করা হয়েছিল, অন্য পার থেকে আসা নৌকোর যাত্রীদের সকলে নেমে ঘাটে ওঠার আগে এ পারের কোনও যাত্রী জেটিতে উঠতে পারবেন না। তা হলে জেটিতে চাপ পড়বে। এখানে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই।

কলেজ ঘাট থেকে কিছুটা দূরেই তিন পয়সার ঘাট। ও পাড়ে সেই শেওড়াফুলি। এই ঘাটের জেটি কংক্রিটের বলে যাত্রী সংখ্যাও বেশি। ঘাটের কর্মীরা জানালেন, এই ঘাট দিয়ে সারা দিনে ১৬-১৭ হাজার যাত্রী পারাপার করেন। এখানেও ঘাটে শতাধিক লাইফ জ্যাকেট রাখা। কিন্তু সেখানেও যাত্রীদের কারও গায়ে উঠতে দেখা গেল না জ্যাকেট। ঘাটের কর্মীরাও যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরার কথা বলছেন না।

কলেজ ঘাটের ইজারাদার মদন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের কাছে তো দেড়শো লাইফ জ্যাকেট রয়েছে। কিন্তু যাত্রীরা পরতে না চাইলে কী করব?’’ যাত্রীদের কী নিয়মিত লাইফ জ্যাকেট পরার কথা বলা হয়? মদনবাবু জানালেন, সব সময়ে সেটা বলা সম্ভব হয় না।

কী বলছেন যাত্রীরা?

বর্ধমানের রূপশ্রী বর্মন বারাসতের একটি স্কুলে চাকরি করেন। রোজই ঘাট পার হতে হয় তাঁকে। লাইফ জ্যাকেটের প্রসঙ্গ তুলতে একগাল হেসে ফেললেন। বললেন, ‘‘হ্যাঁ, ওটা তো খুব জরুরি। কিন্তু জ্যাকেটগুলো খুব নোংরা। আর বেজায় গন্ধ।’’ একই যুক্তি দিলেন অন্য অনেক যাত্রী।

ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামীর কথায়, ‘‘নিরাপত্তাজনিত নির্দেশ মানা হচ্ছে কিনা, তা নিয়মিত দেখা হয়। নৌকোয় অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হচ্ছে কিনা, নজর রাখা হয়। কিন্তু লাইফ জ্যাকেটের বিষয়ে যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Life Jacket Passengers Boat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE