Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Elisa test

চার ঘণ্টার রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে দু’দিন পরে, ক্ষোভ

ঠিক যেমনটা হয়েছে দেগঙ্গার আমুলিয়ার শুন্দেপুকুরের নাজিরা বিবির ক্ষেত্রে। পরিবার সূত্রের খবর, পাঁচ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন নাজিরা। স্থানীয় চিকিৎসককে দেখিয়েও জ্বর না কমায় গত শনিবার তাঁকে বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৯ ০১:১৫
Share: Save:

ডেঙ্গি হয়েছে কি না জানতে এলাইজা পরীক্ষা জরুরি। সেই পরীক্ষার যন্ত্র কেনা হয়েছে আগেই। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে সর্বাধিক চার ঘণ্টা লাগার কথা। কিন্তু অভিযোগ, দেগঙ্গার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সেই রিপোর্ট পেতে দু’দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যেই জ্বর এবং ডেঙ্গি আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে। কখনও কখনও ঘটছে মৃত্যুও।

ঠিক যেমনটা হয়েছে দেগঙ্গার আমুলিয়ার শুন্দেপুকুরের নাজিরা বিবির ক্ষেত্রে। পরিবার সূত্রের খবর, পাঁচ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন নাজিরা। স্থানীয় চিকিৎসককে দেখিয়েও জ্বর না কমায় গত শনিবার তাঁকে বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রক্ত পরীক্ষার পরে বলা হয়, রিপোর্ট পাওয়া যাবে সোমবার। এরই মধ্যে রবিবার অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই মহিলাকে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে দিনই মারা যান তিনি। নাজিরার এক আত্মীয় শানওয়াজ আলম বিশ্বাস বলেন, ‘‘কী কারণে মেয়েটা মারা গেল, জানতে পারলাম না। জ্বরের সঙ্গে ডেঙ্গির উপসর্গ ছিল। বিশ্বনাথপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র শনিবারই রিপোর্ট দিলে অন্তত চিকিৎসাটুকু করা যেত। বারাসত জেলা হাসপাতালও কিছু করতে পারল না।’’ বুধবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা দেগঙ্গায় গেলে দেরিতে রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ দেখান এলাকার মানুষ। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, মঙ্গলবার পর্যন্ত ২,৫৩২ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। বসিরহাটে সেই সংখ্যা ৯৫। প্রতি সপ্তাহে দ্বিগুণ হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।

এ দিন শুন্দেপুকুরে গিয়ে জলের নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিদলটি। বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, হাসপাতালে ঠিক মতো চিকিৎসা হচ্ছে না। অন্য দিকে রিপোর্টও পাওয়া যাচ্ছে দেরিতে। জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপূর্ব দাস বলেন, ‘‘এলাকাবাসীর ক্ষোভের কথা দফতরে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

দু’বছর আগে, ২০১৭ সালে এই দেগঙ্গায় মহামারীর আকার নিয়েছিল ডেঙ্গি। আক্রান্ত হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তা নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ-বিক্ষোভের পরে নড়ে বসে রাজ্য সরকার। পরের বছর মশাবাহিত এই রোগ কিছুটা সামাল দেওয়া গিয়েছিল। রক্ত পরীক্ষার জন্য দেগঙ্গার বাসিন্দাদের যাতে বারাসতে ছুটতে না হয়, রিপোর্ট যাতে তাড়াতাড়ি মেলে— সে জন্য বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসানো হয় এলাইজা পরীক্ষার যন্ত্র। কিন্তু অভিযোগ, তার পরেও ছবিটা বদলায়নি। বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘জেলা হাসপাতালে চার ঘণ্টার মধ্যে আমরা এন এস-১ পরীক্ষার রিপোর্ট পেয়ে যাই।’’ দেগঙ্গার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরজ সিংহ বলেন, ‘‘রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট আমরা দিনের দিনই প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দিই। রোগীরা হয়তো এক-দু’দিন পরে রিপোর্ট হাতে পান। কারও রিপ‌োর্টে এনএস-১ পজিটিভ মিললে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের তরফে বা আশাকর্মীদের সেই বাড়িতে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’

বিশ্বনাথপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন ৪০০ জনের মতো রোগী জ্বর নিয়ে আসছেন। রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে দেড়শো জনের। চার দিনের জ্বর নিয়ে মঙ্গলবার রক্ত পরীক্ষা করাতে এসেছিলেন ভাসলিয়ার সনাতন গোলদার। তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার রিপোর্ট দেবে বলল। রিপোর্ট না পেলে কী চিকিৎসা করাব বুঝতে পারছি না।’’ চার বছরের রুবেনাকে নিয়ে হাদিপুর থেকে এসেছেন সুরভি পরভিন। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটা জ্বরে মাথা তুলতে পারছে না। আমাদের এলাকায় ঘরে ঘরে জ্বর।’’

দেগঙ্গার বিডিও সুব্রত মল্লিক বলেন, ‘‘গত দশ দিনে প্রায় ২৩ জনের রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elisa test Deganga Report delay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE