Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফাঁড়ি থেকে কী লাভ, প্রশ্ন বাসিন্দাদের

দু’মাস পরে ফের আর একটি খুন। এ বারও দুষ্কৃতীদের শিকার এক নিরীহ যাত্রী। নদিয়ার ভীমপুরের বিশ্বজিৎ বিশ্বাস তাঁর কর্মস্থল বিহার থেকে ফিরছিলেন।

বিশ্বজিৎ বিশ্বাস

বিশ্বজিৎ বিশ্বাস

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১৮
Share: Save:

মাত্র দু’মাস আগের ঘটনা। রাতের ট্রেনে স্টেশনে নেমে বাড়ি ফিরছিলেন এক ফুচকা বিক্রেতা। কিন্তু বাড়ি ফেরা হয়নি তাঁর। পরদিন সকালে স্টেশন সংলগ্ন ঝোঁপে মিলেছিল তাঁর মুণ্ডহীন দেহ। বিকেলে হাসনাবাদ লোকালে একটি দাবিদারহীন ঝুড়িতে মিলেছিল তাঁর ধড়হীন মুণ্ড। ঘটনাস্থল কাঁকিনাড়া স্টেশন।

দু’মাস পরে ফের আর একটি খুন। এ বারও দুষ্কৃতীদের শিকার এক নিরীহ যাত্রী। নদিয়ার ভীমপুরের বিশ্বজিৎ বিশ্বাস তাঁর কর্মস্থল বিহার থেকে ফিরছিলেন। গভীর রাতে স্টেশনে দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়েন তিনি আর তাঁর এক বন্ধু। শেষ পর্যন্ত বোমায় প্রাণ গেল বিশ্বজিতের। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা। ঘটনাস্থল সেই কাঁকিনাড়া স্টেশন।

গত মে মাস থেকে কাঁকিনাড়া খবরের শিরোনামে। গোলমালে প্রাণ গিয়েছে এখানকার একাধিক মানুষের। কিন্তু সে লড়াইয়ের মূলে ছিল এলাকা দখল এবং রাজনৈতিক দলাদলি। দু’মাস আগে বা বৃহস্পতিবার রাতে যাঁরা খুন হলেন তাঁদের অবস্থান রাজনীতি থেকে শত যোজন দূরে।

কাঁকিনাড়া স্টেশনে রেলপুলিশের ফাঁড়ি রয়েছে। তার পরেও কী করে এই ধরণের ঘটনা ঘটল? পুলিশ থাকার পরেও কেন রাতের স্টেশনের যাত্রীরা নিরাপত্তা পেলেন না?

গত মে মাস থেকে কারণে-অকারণে বহুবার অবরুদ্ধ হয়েছে কাঁকিনাড়া স্টেশন। আবার গত সাড়ে তিন মাসে কাঁকিনাড়া যে দু’টি এলাকায় বোমাবাজি হয়েছে, সেই ৫ এবং ৬ নম্বর রেলওয়ে সাইডিংও কাঁকিনাড়া স্টেশন লাগোয়া। কাঁকিনাড়ায় উত্তেজনা বর্তমানে কিছুটা কমেছে। তবে পুলিশই বলছে, কমলেও গোলমালের আশঙ্কা রয়েছে। এমনকী, এখনও মাঝেমধ্যেই বোমাবাজি হচ্ছে।

এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এ রকম একটি স্টেশনের নিরাপত্তা এমন ঢিলেঢালা কেন? কেনই বা রাতে প্লাটফর্মে পুলিশ ছিল না? ফাঁড়ির পুলিশ কী করছিল? বিশ্বজিতের পরিবারের লোকেরা জানান, তাঁর বন্ধু কেশব প্রসাদ দুষ্কৃতীদের খপ্পর থেকে কোনও রকমে পালিয়ে গিয়ে ফাঁড়ি থেকে পুলিশ ডেকে আনেন।

এলাকার বাসিন্দা রমেশ কুমার জানান, তাঁর মেয়ে সল্টলেকে চাকরি করেন। বাড়ি ফিরতে রাত হয়। দু’মাস আগে খুনের ঘটনার পর থেকে তিনি রাতে মেয়েকে নিতে স্টেশনে আসেন। সে রাত ১০টা হোক বা ১১টা। তিনি বলেন, ‘‘মাঝে মধ্যে স্টেশনে পুলিশ দেখেছি। কিন্তু বেশিরভাগ দিনই তাদের দেখা যায় না। আমি আনতে যেতে না পারলে মেয়েকে পরের স্টেশন নৈহাটিতে নামতে বলি। ওখান থেকে টোটো করে আসাটা অনেক বেশি নিরাপদ।’’

নিউটাউনে একটি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করেন ভাটপাড়ার যুবক প্রথম শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘সপ্তাহে দু’-তিন দিন ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। কাঁকিনাড়া স্টেশনে নামতে সত্যিই ভয় করে। এ রকম ঘটনা যদি ঘটে তা হলে যাত্রীরা কার ভরসায় স্টেশনে নামবেন? যাত্রীদের নিরাপত্তা কে দেবে? এটাই তো পুলিশের কাজ। তা হলে তাঁরা তা করবে না কেন?’’

শিয়ালদহের রেল পুলিশ সুপার অশেষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘কাঁকিনাড়া স্টেশনের নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে। আর যদি বৃহস্পতিবারের ঘটনায় পুলিশের কোনও গাফিলতির প্রমাণ মেলে, তা হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, খুনের পরে গাফিলতি খুঁজে লাভ কী? দু’মাস আগের খুনের ঘটনা থেকেই বা কেন শিক্ষা নেয়নি রেলপুলিশ?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE