Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কার্নিভালের রাতে বনগাঁয় জনজোয়ার

কার্নিভাল শুরু হওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যা ৬টায়। কিন্তু আগেই বৃষ্টি শুরু হওয়ায় উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কপালে ভাঁজ পড়ে গিয়েছিল। ঘণ্টা দু’য়েক পরে অবশ্য বৃষ্টি থামে। পরিষ্কার আকাশে ওঠে চাঁদ। মুখে হাসি ফোটে সকলের। রাত সাড়ে ৮টা থেকে পুরোদস্তুর শুরু হয়ে যায় কার্নিভাল।

দুর্গাপুজোর কার্নিভালকে ঘিরেই এই উন্মাদনা। ছবি : নির্মাল্য প্রামাণিক

দুর্গাপুজোর কার্নিভালকে ঘিরেই এই উন্মাদনা। ছবি : নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৪১
Share: Save:

বনগাঁয় রাতে জনসমুদ্রে নামল জোয়ার!

দুর্গাপুজোর কার্নিভালকে ঘিরেই এই উন্মাদনা।

বৃহস্পতিবার সন্ধে থেকে রাত ৩টে পর্যন্ত বনগাঁ শহরে দুর্গাপুজোর প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে আয়োজিত কার্নিভাল দেখতে শহরের সড়কগুলির দু’পাশে উপচে পড়ল ভিড়। আয়োজক ছিল বনগাঁ পুরসভা।

কার্নিভাল শুরু হওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যা ৬টায়। কিন্তু আগেই বৃষ্টি শুরু হওয়ায় উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কপালে ভাঁজ পড়ে গিয়েছিল। ঘণ্টা দু’য়েক পরে অবশ্য বৃষ্টি থামে। পরিষ্কার আকাশে ওঠে চাঁদ। মুখে হাসি ফোটে সকলের। রাত সাড়ে ৮টা থেকে পুরোদস্তুর শুরু হয়ে যায় কার্নিভাল। এ দিন বিকেল থেকেই মানুষের ঢল নামতে শুরু করে রাস্তায়। কার্নিভাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন।

বহু দিন পরে গত বছর থেকে শহরের বুকে ফিরে এসেছে কার্নিভাল। বছর এগারো আগে বনগাঁ শহরে দুর্গাপুজোর বিসর্জনে কার্নিভালের আয়োজন হত। শহরের বাসিন্দারা তো থাকতেনই। দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ আসতেন। বনগাঁ শহরের সাংস্কৃতিক মানচিত্রে এই কার্নিভাল এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। কিন্ত বছর দু’য়েক চলার পরে হঠাৎই নিরাপত্তার কারণে পুলিশ বন্ধ করে দেয় কার্নিভাল।
গত বছর পুরসভা সিদ্ধান্ত নেয়, ফের কার্নিভাল হবে। পুলিশ-প্রশাসনও এগিয়ে আসে। পুলিশের তরফে নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হয়। পুজো উদ্যোক্তারাও উৎসাহ দেখান। পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘এ দিন মানুষের উৎসাহ ও আবেগ দেখে মনে হচ্ছিল, পুরনো ঐতিহ্য ফিরে এসেছে। প্রতি বছরই কার্নিভালের আয়োজন করা হবে। না হলে বহু মানুষ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হন।’’

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার ১২টি পুজো উদ্যোক্তা কার্নিভালে যোগ দিয়েছে। মিলনপল্লি এলাকায় পুরসভার ট্রাক পার্কিং থেকে শুরু করে যশোর রোড হয়ে, বনগাঁ-চাকদহ সড়ক দিয়ে শোভাযাত্রা শেষ হয় বনগাঁ থানার কাছে। ছিল নানান থিম। কৈলাস থেকে নেমে এসেছেন মহাদেব। মাথায় জটা, পরনে বাঘছাল, হাতে ত্রিশূল, মুখে ‘ব্যোম ব্যোম’ ধ্বনি। সঙ্গে রয়েছে ভূত-প্রেত। ছিল ঝুমুর, ছৌ, ভাটিয়ালি। মহিলাদের ঢাকবাদ্যি। পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে একে অন্যকে টেক্কা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা দেখা গেল। ছিলেন বিচারকেরা। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান পাওয়া ক্লাবগুলিকে পুরস্কৃতও করা হয়। তা ছাড়া যোগদানকারী সব দলকেই পুরসভার তরফে আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে। রাতেই থানার ইছামতীর ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

পুলিশের অনুমান, প্রায় এক লক্ষ মানুষ শোভাযাত্রা দেখতে এসেছিলেন। বনগাঁর তরুণী বিপাশা চক্রবর্তীর শ্বশুরবাড়ি কলকাতায়। শাশুড়ি বিমলাকে নিয়ে তিনি বনগাঁয় এসেছিলেন কার্নিভাল দেখতে। বিমলার কথায়, ‘‘বনগাঁয় এসে এমন কার্নিভাল দেখতে পাব, ভাবতেও পারিনি। এমন বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসও আগে কোথাও দেখিনি।’’ কার্নিভাল উপলক্ষে গোটা শহরকে নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল। দুপুরের পর থেকে শহরের রাস্তাগুলি ‘নো এন্ট্রি’ করে দেওয়া হয়। ছোট-বড় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হতে থাকে। তার ফলে কিছু মানুষের যাতায়াতে অসুবিধা হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন বনগাঁ পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার তরুণ হালদার, আইসি মানস চৌধুরী-সহ প্রচুর পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Bnagaon Carnival
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE