Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

মিষ্টিমেলায় উৎসবে মাতেন আহমেদ-সুব্রতরা  

 মেলাটি কত বছরের পুরনো, এলাকার প্রবীণ মানুষেরাও সঠিক বলতে পারেন না।

মিষ্টিমুখ: গোপালনগরের মিষ্টিমেলায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

মিষ্টিমুখ: গোপালনগরের মিষ্টিমেলায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
গোপালনগর শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

মাঠের মধ্যে সারি দিয়ে সাজানো হরেক রকমের মিষ্টি। রসগোল্লা, পান্তুয়া, গজা, বোঁদে, জিভেগজা, জিলিপি, মিহিদানা, কালোজাম—সবই আছে। গোপালনগরের সাতবেড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে প্রত্যেক বছরই পির বুড়ির মেলায় মিষ্টি নিয়ে বসেন দেকানিরা।

প্রতি বছর নিয়ম করে ৮ পৌষ ওই মেলা শুরু হয়। মেলার মূল আকর্ষণ মিষ্টির বিকিকিনি। অনেকে তাই মেলাকে মিষ্টি মেলাও বলেন। ওই মেলাকে ঘিরেই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মেতে ওঠেন সম্প্রীতির উৎসবে।

মেলাটি কত বছরের পুরনো, এলাকার প্রবীণ মানুষেরাও সঠিক বলতে পারেন না। গ্রামবাসী জানালেন, মেলার বয়স ১৫০ বছর বা তারও বেশি। স্থানীয় সবুজ সঙ্ঘ এখন মেলাটির আয়েজন করেন। এই মেলায় একে অপরের দোকান থেকে মিষ্টি কিনতে ব্যস্ত আহমেদ, কালাম, সুভাষ, সমীররা।

বুধবার দুপুর থেকেই মানুষ ভিড় করেন ওই মেলায়। একসঙ্গে এত মিষ্টির দেকান এই তল্লাটে আর কোথাও দেখা যায় না। বাজারে থাকা মিষ্টির দোকানগুলো থেকে এখানে মিষ্টির দাম অনেকটাই কম। ফলে কম মূল্যে খাঁটি মিষ্টির আশায় মানুষ আসেন। একটি রসগোল্লার মূল্য ৩ টাকা। বাইরে বিক্রি হয় ৫ টাকায়। বোঁদে, গজা, জিলিপির কিলো ৮০ টাকা করে। বাইরে ১০০ টাকা।

মেলায় পরিচিত মানুষের সঙ্গে দেখা হলেই এক অপরের মুখে মিষ্টি মুখে পুরে দেন। গুলশান মণ্ডলের সঙ্গে বন্ধু সুব্রত হালদারের দেখা হতেই তিনি বন্ধুর মুখে একটি পান্তুয়া পুরে দিলেন। বৃদ্ধ আনিসুর মণ্ডল, সুকুর আলি মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে মেলায় আসি। নিজেরা যেমন মিষ্টি খাই, তেমন ব্যাগ ভর্তি করে বাড়িতেও নিয়ে যাই। সমীর, সুব্রতরা আমাদের আন্তরিকতার সঙ্গে মিষ্টি খাওয়ান। আমাদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই। মেলাকে কেন্দ্র করে আমরা সম্প্রীতির উৎসবে

মেতে উঠি।’’

সাতবেড়িয়া ছাড়াও দূর দূরান্তের গ্রাম থেকে মানুষ মেলায় আসেন। এই সময়ে এখানকার মানুষের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনেরা বেড়াতে আসেন। মেলা থেকে মিষ্টি কিনে তারপর বাড়ি ফেরেন। আজগর মণ্ডল নামে এক দোকানির কাছ থেকে মিষ্টি কিনছিলেন কপালে চন্দনের তিলক কাটা এক বৃদ্ধা। বৃদ্ধার কথায়, ‘‘আমাদের পরিচয় আমরা মানুষ। আমাদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ থাকবে। বিভেদ তো মানুষ তৈরি করেন।’’

কয়েক কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে এ দিন মেলায় গিয়েছিলেন গল্পকার দেবাশিস রায়চৌধুরী, কবি শ্যাম রায়, নির্মল বিশ্বাস, দিব্যেন্দু ঘোষ। দেবাশিস মিষ্টি কিনে মুখে পুরে দিলেন বৃদ্ধ আবুল হোসেন মণ্ডলের। আবুল হোসেন বলেন, ‘‘আমাদের এখানে সম্প্রীতির ভিত খুবই দৃঢ়। কখনও কোনও গোলমাল আমরা হতে দিই না। ভেদাভেদ নেই।’’

নির্মল-দেবাশিসরা বলেন, ‘‘মেলাতে না এলে জানতেই পারতাম না, সম্প্রীতির এমন পরিবেশ রয়েছে বাড়ির কাছেই। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সম্প্রীতির এমন মেলা আরও হওয়ার প্রয়োজন।’’

মিষ্টি মেলার মূল আকর্ষণ হলেও নাগরদোলা, মিকি মাউস, চক্ররেলের ব্যবস্থা রয়েছে। সবুজ সঙ্ঘের তরফে সাংস্কৃতিক ও বিচিত্রানুষ্ঠানেরও আয়েজন করা হয়। সঙ্ঘের সম্পাদক অপূর্ব রায় বলেন, ‘‘মুসলিম ভাইয়েরা আমাদের ইদে নিমন্ত্রণ করেন। আমরা নিমন্ত্রণ রক্ষা করি। এলাকায় দুই সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। আমরা একে অপরের বিপদে

পাশে থাকি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sweets Fair Religion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE