Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
North 24 Parganas

বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, আরও পরীক্ষার দাবি উত্তরে 

গত কয়েক দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আক্রান্তেরা নিজেও বুঝতে পারছেন না, তাঁরা কী ভাবে সংক্রমিত হলেন!

গাইঘাটার পাঁচপোতায় এলাকাবাসীরা নিজেরাই বন্ধ করলেন বাজার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

গাইঘাটার পাঁচপোতায় এলাকাবাসীরা নিজেরাই বন্ধ করলেন বাজার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

নিজস্ব প্রতিবেদন 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২০ ০২:২৭
Share: Save:

বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু সেই মতো লালারস পরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকার মানুষের।

গত কয়েক দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আক্রান্তেরা নিজেও বুঝতে পারছেন না, তাঁরা কী ভাবে সংক্রমিত হলেন! স্বাভাবিক ভাবেই আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা লোকজন আতঙ্কে ভুগতে শুরু করছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, আরও বেশি লালারস পরীক্ষাই হল সংক্রমণ কমানোর একমাত্র উপায়। সংক্রমিতকে চিহ্নিত করে আইসোলেশনে রাখলেই ধীরে ধীরে কমবে সংক্রমণ। কিন্তু অভিযোগ, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও টেস্টের সংখ্যা সেই হারে বাড়ছে না। কলকাতা লাগোয়া দুই জেলাতেই আরও বেশি পরীক্ষার দাবি উঠছে। অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা এলাকায় রবিবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯ জন। নিয়মিত ভাবে এখানে মানুষ করোনা পজ়িটিভ হচ্ছেন। অভিযোগ, এখানে করোনা পরীক্ষার জন্য লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছে তুলনায় কম। অশোকনগরের প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের সত্যসেবী করের অভিযোগ, আগে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে রোজ ৩০-৩৫ জনের লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছিল। এখন দিনে মাত্র ৫ জনের লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছে। তা ছাড়া, করোনা পজ়িটিভ রোগীর আত্মীয়-স্বজনদেরও লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে না।

এই অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি পুরসভার পুরপ্রশাসক প্রবোধ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘করোনা পজ়িটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসা মানুষদের লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। হাসপাতালে এখন রোগী কম আসছেন। ফলে লালারস সংগ্রহও কমে গিয়েছে।’’

বনগাঁ মহকুমার মধ্যে করোনা পজ়িটিভ সব থেকে বেশি গাইঘাটা ব্লকে। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩ জন। গাইঘাটার সিপিএম নেতা রমেন আঢ্য বলেন, ‘‘গাইঘাটায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু মানুষের লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। পরীক্ষা বেশি না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেবে।’’ গাইঘাটার বিএমওএইচ সুজন গায়েন অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘এক মাস আগের তুলনায় করোনা পরীক্ষা অনেক বেড়েছে। পজ়িটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসা মানুষদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। চাঁদপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে উপসর্গ নিয়ে আসা মানুষের লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছে।’’ ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, যে এলাকায় একটিও করোনা পজ়িটিভ রোগী পাওয়া যায়নি, সেখানকার উপসর্গহীন মানুষদের লালারসও সংগ্রহ করা হবে বুধবার থেকে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বনগাঁ মহকুমায় আগের তুলনায় করোনা পরীক্ষা আরও বেড়েছে। সপ্তাহে এখন ৩০০-৩৫০ জনের লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির হারে কলকাতার পরেই রয়েছে ব্যারাকপুর মহকুমা। এখানে একটি অস্থায়ী কোভিড হাসপাতালও রয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে সর্বত্রই। দিন কয়েক আগে শ্যামনগরের এক যুবকের বাবা-মা কোভিড পজ়িটিভ হন। ওই যুবক নিজেই পরীক্ষার জন্য দু’টি হাসপাতালে যান। অভিযোগ, তাঁর লালারস সংগ্রহ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাড়িতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার পরে ভাটপাড়া পুরসভার উদ্যোগে লালারস সংগ্রহ করা হয় তাঁর। রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। বসিরহাট মহকুমায় করোনা পজ়িটিভ মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০০। মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। অভিযোগ, এরপরেও বসিরহাটে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। কংগ্রেস নেতা অমিত মজুমদার, বিজেপি নেতা তারক ঘোষ বলেন, ‘‘এ সময়ে জরুরি বেশি বেশি করে মানুষের লালারস সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করা জরুরি, যাতে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আগে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু তা করা হচ্ছে না।’’

করোনা পরীক্ষার ফল পেতে দীর্ঘ সময় লাগছে বলেও অভিযোগ। বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলা আধিকারিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশে বর্তমানে বসিরহাট হাসপাতাল-সহ ৯টি জায়গায় দিনে গড়ে দেড়শো, দু’শো অসুস্থ মানুষের লালারস সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য কলকাতায় পাঠানো হচ্ছে।’’

বসিরহাট মহকুমার হিঙ্গলগঞ্জ থানার দুলদুলি পঞ্চায়েতের বাসিন্দা এক মহিলা করোনা পজ়িটিভ হয়েছেন। তাঁকে শনিবার বিকেলে বসিরহাট কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরেছিলেন। তাঁর সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে সংস্পর্শে এসেছিলেন ৫ জন। তাঁদের এখনই করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অঙ্কুর কর্মকার বলেন, ‘‘আইসিএমআর-এর সর্বশেষ গাইডলাইন অনুযায়ী, করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসা ৫ জনকে ৭ দিনের জন্য নজরে রাখা হচ্ছে। কোনও উপসর্গ দেখা দিলে তবেই তাঁদের লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।’’ তবে এলাকাবাসীর প্রশ্ন, উপসর্গ ছাড়াও এখন অনেকেই করোনা পজ়িটিভ হচ্ছেন। তা হলে এঁদের কেন পরীক্ষা করা হবে না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

North 24 Parganas Coronavirus in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE