Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

চরে আটকে থাকেন যাত্রী, প্রসব হচ্ছে নৌকোতেও

পাথরপ্রতিমা ব্লকের মৃদঙ্গভাঙা নদীর গদামথুরা ঘাটের এমন দশা চলছে বছরের পর বছর ধরে।

বিপজ্জনক: গদামথুরাঘাটে এ ভাবেই চলে পারাপার। নিজস্ব চিত্র

বিপজ্জনক: গদামথুরাঘাটে এ ভাবেই চলে পারাপার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাথরপ্রতিমা: শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৯ ০২:১৮
Share: Save:

ঘাটের সামনে নদীতে চর পড়ে যাওয়ায় পারাপারের খেয়া ঘাটে ঢুকতে পারে না। দীর্ঘ সময় মাঝনদীতে আটতে থাকায় সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। প্রসূতি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন নৌকোয়, এমন ঘটনাও ঘটেছে। ভাটার সময়ে জল থেকে ঘাটের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া কোল পাঁজা করে বয়স্ক মহিলাদের ঘাটে তুলতে হয়।

পাথরপ্রতিমা ব্লকের মৃদঙ্গভাঙা নদীর গদামথুরা ঘাটের এমন দশা চলছে বছরের পর বছর ধরে।

ওই ব্লকের দিগম্বরপুর পঞ্চায়েতে গদামথুরা ঘাটের সঙ্গে মৃদঙ্গভাঙা নদীর সংযোগস্থলের উল্টো দিকে কেদারপুর ঘাট। প্রায় ৩ কিলোমিটার চওড়া ওই দুই ঘাটে বহু বছর ধরে যন্ত্রচালিত নৌকোয় যাত্রী পারাপার চলে। কেদারপুরের কংক্রিটের ঘাটটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় স্ল্যাব ভেঙে পড়েছে। সামনে চর জমায় ভাটার সময়ে নৌকো ঘাটে ঢোকানো যায় না। মূল সমস্যা গদামথুরা ঘাট নিয়ে। কেদারপুর দ্বীপ এলাকার লক্ষ্মীজনার্দনপুর ছাড়াও অচিন্ত্যনগর, হেড়ম্বগোপালপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের নানা প্রয়োজনে পাথরপ্রতিমা ব্লক অফিস, গ্রামীণ হাসপাতাল, থানা, স্কুল-কলেজে আসতে হয়। ডায়মন্ড হারবার বা কলকাতায় যেতে হলেও অনেকে ওই নদী পার হয়ে গদামথুরাঘাট থেকে মূল সড়কে আসেন। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে গদামথুরা ঘাটের সামনে মৃদঙ্গভাঙা নদীতে ক্রমাগত চর পড়েই চলেছে। ফলে বাড়ছে সমস্যা।

বহু বছর আগে ওই ঘাটে কংক্রিটের সেতু ব্যবহার হত। চর পড়ে যাওয়ায় প্রায় দেড়শো মিটার বাঁশের খাঁচা করে নদীর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাতেও রেহাই নেই। অমাবস্যা বা পূর্ণিমার ভরা কোটালে ভাটার সময়ে নদীর জল এতটাই কমে যায়, বাধ্য হয়ে ৩-৪ দিন কয়েক ঘণ্টা নৌকো চলাচলই করতে পারে না। ভাটার সময়ে নৌকো পারাপার করলেও গদামথুরা ঘাটের সামনে চর জমে থাকায় ৫০-৬০ ফুট দূরে নৌকো দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। যাত্রীরা নৌকোয় কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে জোয়ার এলে তবেই ঘাটে পৌঁছতে পারেন।

সময় মতো ঘাটে ঢুকতে না পারায় পাথরপ্রতিমা গ্রামীণ হাসপাতালে যাওয়ার পথে কিছু দিন আগে নৌকোয় সন্তানের জন্ম দেন এক প্রসূতি। এমন ঘটনা আরও আছে বলে জানালেন স্থানীয় মানুষজন। গদামথুরা গাটের পাশের দোকান আছে ভীমচরণ গুড়িয়ার। তাঁর কথায়, ‘‘ঘাটের পরিকাঠামোর জন্য যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। মাঝনদীতে নৌকো আটকে পড়ায় কয়েক বছরে প্রায় ১৪ জন গর্ভবতী নৌকোয় সন্তান প্রসব করেছেন।’’

ভাটার সময়ে যদিও বা নৌকো ঘাটে ঢোকে, কিন্তু বাঁশের মাচার ঘাটটি প্রায় ৪ ফুটের মতো উপরে থাকায় বয়স্ক মহিলা বা শিশুদের খুবই সমস্যা হয়। অনেককে সহযাত্রীরা পাঁজাকোলা করে উপরে তোলেন।

প্রায় দেড়শো ফুট লম্বা মাচা চওড়ায় মাত্র দুই-আড়াই ফুট। ফলে দু’জন যাত্রী পাশাপাশি পার হতে গেলে একটু বেসামাল হলেই নদীতে পড়ার মতো অবস্থা হয়।

ভোর ৪ থেকে রাত ৯ পর্যন্ত নৌকো চলাচল করে দুই ঘাটের মধ্যে। কিন্তু রাতে আলোর ভাল ব্যবস্থা নেই। সন্ধ্যা নামলেই টর্চের আলোয় যাত্রীদের ওঠানামা করতে হয়। গদামথুরা ঘাটে একটা পানীয় জলের নলকূপ আছে বটে, কিন্তু তা থেকে নোংরা, ঘোলা জল বেরোয়। শৌচালয়ের ব্যবস্থা নেই।

কেদারপুরে রয়েছে হাইস্কুল, বিএড কলেজ। সেখানে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকেরা গদামথুরা ঘাট হয়েই যাতায়াত করেন। মন্দিরবাজারের বাসিন্দা এক শিক্ষক জাহাঙ্গির মল্লিক জানালেন, নদী পারাপার খুবই যন্ত্রণার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাটার সময়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। ঝড়বৃষ্টির সময়েও নৌকো চলাচল বন্ধ থাকায় গন্তব্যে পৌঁছনো যায় না। পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতি থেকে লিজে নেওয়া ওই দুই খেয়াঘাটের মালিক চন্দন দাসের কথায়, ‘‘প্রাকৃতিক কারমে নদীতে চর পড়েছে। যাত্রীদের সুবিধার জন্য বাঁশের মাচা করে দিয়েছি। তাতেও সমাধান হচ্ছে না। সমস্ত বিষয় পঞ্চায়েতে সমিতিকে একাধিকবার বলা হয়েছে।’’

এ বিষয়ে পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ রাজ্জাক বলেন, ‘‘গদামথুরা ঘাটে দু’বার পাকা জেটি করা হয়েছিল। তা চরে ঢাকা পড়ে যাওয়ায় বাশের মাচা দিয়ে যাত্রীরা ওঠানামা করছেন। নতুন করে আবার জেটি করা যায় কিনা, তা দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

River Travel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE