টিপি পার্কের কাছে চলছে নদী সংস্কার। —নিজস্ব চিত্র।
মাত্র ২০০ মিটার!
স্বরূপনগরের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে ইছামতী এবং যমুনা নদী। প্রতি বর্ষায় এই দুই নদী উপচে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। বাঁধ ছাপানো জলে নষ্ট হয়ে যায় মানুষের শেষ সম্বল। সম্প্রতি এই দুই নদী সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। একাধিক যন্ত্র ব্যবহার করে দুই নদী থেকে পলি তোলার কাজ শুরু হয়েছে। খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। কিন্তু গ্রামবাসীদের দাবি, দুই নদীর মাঝে টিপি পার্কের সামনে টিপি গ্রামের পাশে মাত্র ২০০ মিটার খাল কেটে দুই নদীকে না মেলালে বন্যার হাত থেকে পুরোপুরি মুক্তি কখনই সম্ভব নয়। তাঁদের এই দাবিকে সমর্থন করেছেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেচ দফতরের কর্তারা জানিয়েছে, দু’টি নদীকে মিলিয়ে দেওয়ার নির্দেশ আসলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বরূপনগরে যমুনা এবং ইছামতী নদীর মাঝে রয়েছে টিপি পার্ক। টিপি পার্ককে মাঝখানে রেখে ইছামতী এবং যমুনার সংযোগস্থলে যেতে গেলে ২ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, টিপি গ্রাম-সংলগ্ন টিপি পার্কের পাশ দিয়ে খাল কেটে দিলেই দু’টি নদী যুক্ত হয়ে যাবে। তা হলে জলের গতিবেগও বাড়বে। অতিবৃষ্টি হলেও বাড়তি জল খাল দিয়ে বেরিয়ে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষীরোদ ঘোষ, কাকলি মণ্ডল, প্রতিমা সর্দারদের দাবি, ‘‘নদীর নীচের মাটি কেটে শুধু টাকার অপচয় ছাড়া কিছুই হবে না। আগেও কয়েকবার মাটি কেটে নদীর গভীরতা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তারপরেও ২ কিলোমিটার ঘুরপথের জন্য বার বার জল উপচে নদীপাড়ের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।’’
টিপি গ্রামে খাল কাটার জন্য সরকার জমি অধিগ্রহণ করে রেখেছে। ২০০ মিটার খাল কাটলেই ইছামতী এবং যমুনা মিলে যাবে। তখন দুই নদীর গতিবেগ বেড়ে যাবে। বন্যার সম্ভবনা অনেক কমবে। খাল কাটার পরে তার উপরে একটি কংক্রিটের একটি সেতু করে দিলে উভয় পাড়ে যাওয়া আসার কোনও সমস্যাই থাকবে না।
২০১৫ সালে অতিবৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছিল স্বরূপনগর। তখন এলাকা পরিদর্শনে এসে জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেছিলেন, টিপি পার্ক রাখা যাবে না। প্রয়োজনে দুই নদীকে মিশিয়ে দিতে হবে। ভোটের প্রচারের ফাঁকে তাঁকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘মানুষের সুবিধার কথা ভেবেই সেচ দফতর ইছামতী-যমুনা সংস্কারের অর্থ মঞ্জুর করেছে। পার্কের পাশে ২০০ মিটার থেকে খাল কেটে দুই নদীর মিলন ঘটানোর ব্যবস্থা করার জন্য সেচ দফতরকে বলা হয়েছে।’’ নদী থেকে মাটি তুলে সেগুলি নদীর পাড়ে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, সেই মাটি বৃষ্টি হলে ফের নদীতেই চলে যাবে। ফলে লাভ কিছুই হবে না। কপিলেশ্বরপুর গ্রামের দীপঙ্কর মণ্ডল, দীনবন্ধু সরকারের অভিযোগ, পাড়ে ফেলা মাটি রাতের অন্ধকারে চুরি হচ্ছে।
সব কিছু জানার পরেও কেন ২০০ মিটারের বদলে ২ কিলোমিটার ঘুরপথকেই নতুন করে সংস্কার করা হচ্ছে?
স্বরূপনগরের চারঘাট পঞ্চায়েতের মোল্লাডাঙা, গোপালপুর, বাড়ঘরিয়া, নিশ্চিন্দিপুর, পাতুয়া, মোল্লাডাঙা, দিয়াড়া, টিপি, কপিলেশ্বপুর, কাঁচদহ, ঘোলা মানুষের আক্ষেপ, প্রতি বছর বর্ষায় বাড়ি, জমি জলের নীচে চলে যায়। মোল্লাডাঙার বাসিন্দা তাপস মণ্ডল, ভবসিন্ধু মণ্ডলের কটাক্ষ, ‘‘কোনও রাজনৈতিক দলের নেতারাই বন্যার স্থায়ী সমাধান চান না। তাই মাত্র ২০০ মিটার খাল কেটে দুই নদীর সংযোগ করা হয় না। তাই ভোট নয়, বর্ষার দিনগুলি নিয়েই আমরা বেশি চিন্তিত।’’ একই অভিযোগ বাদুড়িয়ার চাতরা, কেওটশা, ঘোড়াগাছা, শিবপুর, উমাপতিপুর, বেনা পূর্ব, চণ্ডীপুর-সহ আশপাশের গ্রামবাসীদের। প্রতি বছর বর্ষায় জলবন্দি হয়ে যাওয়া এই মানুষগুলোর যেন ভাগ্যে লেখা রয়েছে। বাসন্তী সরকার, তপন মণ্ডল, মালতী সাহাদের ক্ষোভ, ‘‘রাজ্যে পরিবর্তন হল। খাল কাটা নিয়ে কত কমিটি হল। খাল কাটা আর হল না। ত্রাণ নিয়ে দলবাজি চলতেই থাকবে। খাল কাটলে যে শুধুমাত্র স্বরূপনগর এবং বাদুড়িয়ার মানুষ উপকৃত হবেন তা নয়, জলের গতিবেগ বাড়লে গোবরডাঙা, বনগাঁ, বাগদা এলাকার মানুষও প্লাবিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।’’
ভোট এসে গিয়েছে। নদীর মাটি কাটাও চলছে জোরকদমে। কিন্তু কোনও কিছুতেই তেমন উৎসাহ নেই স্বরূপনগরের আম আদমির। কারণ, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা জানেন, ভোট এবং নদীর মাটি কাটার কাজ আগেও হয়েছে। কিন্তু তাঁকে তাঁদের কোনও সুরাহা হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy