Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছিনতাইয়ের গল্প ফেঁদে স্ত্রীকে খুন!

পুলিশকে সে বলেছিল, দুষ্কৃতীরা এসে তার স্ত্রীর গলার হার এবং নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। স্ত্রী বাধা দেওয়ায় তারা গুলি করে তাঁকে খুন করে।

রাজশ্রী চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) ও সুখবিন্দর সিংহ।

রাজশ্রী চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) ও সুখবিন্দর সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৩০
Share: Save:

পুলিশকে সে বলেছিল, দুষ্কৃতীরা এসে তার স্ত্রীর গলার হার এবং নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। স্ত্রী বাধা দেওয়ায় তারা গুলি করে তাঁকে খুন করে। পুলিশ প্রথমে আটক করেছিল ওই যুবককে। কিন্তু দীর্ঘ জেরায় ভেঙে পড়ে সে। জানায়, বহু দিন ধরে সে স্ত্রীকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল। তার জন্য এক সপ্তাহ ঘুরে জায়গা নির্বাচন, তিন দিন ধরে রেকি করা, ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র থেকে হাতের ছাপ মোছা— নিয়েছিল সব পন্থাই। শেষরক্ষা অবশ্য হল না। ব্যারাকপুরের বাসিন্দা রাজশ্রী চট্টোপাধ্যায়কে (৩৩) খুনে তাঁর স্বামী সুখবিন্দর সিংহকে শুক্রবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, এক যুবকের সঙ্গে রাজশ্রীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জেনে ফেলেছিল সুখবিন্দর। খুনের সেটা একটা কারণ। পাশাপাশি, তাঁদের ফ্ল্যাট বিক্রি করে সেই টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তার। ব্যারাকপুরের ডিসি (‌জোন ১) কে কান্নন বলেন, ‘‘অভিযুক্ত কার থেকে খুনের অস্ত্র কিনেছিল, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, ব্যারাকপুরে ১৪ নম্বর রেল গেটের কাছে থাকতেন রাজশ্রীরা। সুখবিন্দররা আদতে পঞ্জাবের বাসিন্দা। কর্মসূত্রে তার পরিবার দীর্ঘদিন ব্যারাকপুরে ছিল। বছর পাঁচেক আগে রাজশ্রীর সঙ্গে বিয়ে হয় সুখবিন্দরের। পরিবারের বাকি সদস্যেরা পঞ্জাবে ফিরে গেলেও রয়ে যায় সুখবিন্দর। সে তেমন কোনও কাজ করত না। থাকত ভাড়া বাড়িতে।

রাজশ্রীরা দুই বোন। তাঁর দিদি দেবশ্রী ভট্টাচার্য থাকেন মধ্যমগ্রামে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, দেবশ্রী নিয়মিত অর্থ সাহায্য করতেন বোনকে। বছর দুই আগে রাজশ্রীর বাবার একটি সম্পত্তি বিক্রি হয়। সেখান থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা পান রাজশ্রীরা। তার মধ্যে ২২ লক্ষ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনেন তিনি ও সুখবিন্দর। সম্প্রতি গাড়ি কিনে তা একটি অ্যাপ-ক্যাব সংস্থায় ভাড়া খাটাতে শুরু করে অভিযুক্ত। গাড়ি চালাত সে নিজেই।

আরও পড়ুন: মা-মেয়েকে মারধরের অভিযোগ

পুলিশ জানিয়েছে, দু’মাস আগে গাড়ি বিক্রি করে দেয় সুখবিন্দর। কিন্তু সেই টাকায় কী করেছে, তার হিসেব রাজশ্রীকে দেয়নি। তা নিয়েই ওই দম্পতির মধ্যে অশান্তির শুরু। কিছু দিন যাবৎ ফ্ল্যাট বিক্রির জন্যও রাজশ্রীকে চাপ দিচ্ছিল সুখবিন্দর। জানিয়েছিল, ব্যবসার জন্য তার টাকার দরকার। কিন্তু রাজশ্রী রাজি হননি।

এরই মধ্যে একটি সম্পর্কে জড়ান ওই তরুণী। ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপে ওই যুবকের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখতেন। ওই যুবক রাজশ্রীকে জানিয়েছিলেন, সুখবিন্দরের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলে তাঁকে বিয়ে করবেন তিনি। তদন্তকারীদের ধারণা, গোটা বিষয়টি জেনে গিয়েছিল সুখবিন্দর।

পুলিশের দাবি, জেরায় অভিযুক্ত জানিয়েছে, সে প্রথমে একটি আগ্নেয়াস্ত্র কেনে। কোথায় খুন করবে ঠিক করতে বেশ কয়েকটি জায়গায় ঘোরে। শেষ পর্যন্ত পলতার বেঙ্গল এনামেলের বন্ধ কারখানার একটি নির্জন জায়গা তার পছন্দ হয়। কিন্তু রাজশ্রীকে সেখানে আনবে কী করে? তখনই সুখবিন্দর ঠিক করে, মোটরবাইক কেনার জন্য স্ত্রীকে পলতায় আনবে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ সে রাজশ্রীকে নিয়ে ট্রেনে পলতায় আসে। অত রাতে মোটরবাইকের অধিকাংশ শো-রুম তখন বন্ধ। ওই দম্পতি হেঁটে ফিরছিলেন। সে সময়েই আগ্নেয়াস্ত্র বার করে রাজশ্রীকে গুলি করে সুখবিন্দর। হাতের ছাপ মুছে অস্ত্রটি ঘটনাস্থলেই ফেলে দেয়। পুলিশ এলে সে ছিনতাইয়ের গল্প ফাঁদে।

ব্যারাকপুর পেরিয়ে কেন পলতায় অত রাতে বাইক কিনতে এসেছিল অভিযুক্ত, সেটাই প্রথমে ভাবিয়েছিল তদন্তকারীদের। তা ছাড়া, পেশাদার দুষ্কৃতী খুন করে আগ্নেয়াস্ত্র যে ঘটনাস্থলে ফেলে যাবে না, তা নিয়ে এক রকম নিশ্চিত ছিলেন তাঁরা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুখবিন্দরকে রাতেই আটক করে পুলিশ। জেরায় সে দোষ স্বীকার করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Murder plot Wife Murder Snatching
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE