Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বিয়ে নয়, পড়তে চাই, বাঁচান স্যার, থানায় গিয়ে আর্তি ছাত্রীর

বা়ড়ির লোক তার আপত্তিতে কান দেননি। ঠিক হচ্ছিল বিয়ে। বছর তেরোর কিশোরী কী করে! সটান দৌড়েছিল থানায়। ওসি-র পা ধরে তার আর্তি, ‘‘স্যার, আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। পড়াশোনা করতে চাই। আমাকে বাঁচান।’’

সাহসিনী: জামেনা ঢালি নিজস্ব চিত্র

সাহসিনী: জামেনা ঢালি নিজস্ব চিত্র

সামসুল হুদা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫৫
Share: Save:

বা়ড়ির লোক তার আপত্তিতে কান দেননি। ঠিক হচ্ছিল বিয়ে। বছর তেরোর কিশোরী কী করে! সটান দৌড়েছিল থানায়। ওসি-র পা ধরে তার আর্তি, ‘‘স্যার, আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। পড়াশোনা করতে চাই। আমাকে বাঁচান।’’

আর পাঁচটা দিনের মতো শনিবার সন্ধ্যাতেও কাজে ব্যস্ত ছিলেন জীবনতলা থানার ওসি সুভাষ ঘোষ। হঠাৎ তাঁর পা জড়িয়ে ধরে কিশোরীর ওই আর্তিতে চমকেও গিয়েছিলেন খানিকটা। শেষমেশ পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় জীবনতলার ঢালিপাড়ার জামেনা ঢালি নামে ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রীর বিয়ে বন্ধ হল। তার মা জাহানারা মুচলেকা দিয়ে জানালেন, মেয়ের ১৮ বছর বয়স না হলে বিয়ে দেবেন না।

বিয়ে বন্ধ হওয়ায় খুশি জামেনা। সে কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা পায়। তার কথায়, ‘‘স্কুলে শুনেছিলাম, কম বয়সে বিয়ে না-করার কথা। তাই বাড়ি থেকে যখন বিয়ে ঠিক করে, আমি আপত্তি জানাই। কিন্তু কেউ না-শোনায় বাধ্য হয়ে বাড়ির কাছে থানাতেই সরাসরি চলে যাই।’’ ওসি সুভাষবাবু বলেন, ‘‘মেয়েটি ঠিক কাজ করেছে। সাহস আছে। ও যাতে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারে, সে জন্য প্রশাসন সহযোগিতা করবে।’’

জামেনা ঢালির বাড়ি গিয়ে বিয়ে বন্ধ করল পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঢালিপাড়ার বাসিন্দা লুৎফর ঢালির পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে জামেনা সেজো। লুৎফর রিকশা চালান। জামেনা জীবনতলার হাওড়ামারি স্কুলে পড়ে। ভাঙড়ের বাঁকড়ি গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হচ্ছিল। সোমবার ‘পাকা কথা’ হওয়ার কথা ছিল। তার আগে শনিবারই জামেনা থানায় যায়। ওসি ক্যানিংয়ের চাইল্ড লাইনে খবর পাঠান। সেখানকার দুই সদস্য এবং পুলিশ জামেনার বাড়িয়ে যায়। ওই পরিবারের সদস্যদের নাবালিকা বিয়ে না-দেওয়ার বিষয়ে বোঝানো হয়।

শেষমেশ জামেনার মা বলেন, ‘‘জানতাম না, ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দিতে নেই। আর এখন চেষ্টা করব না। ও পড়াশোনা করুক।’’ মেয়েটিকে পড়াশোনায় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ক্যানিংয়ের বিধায়ক সওকৎ মোল্লাও। তিনি জানান, কন্যাশ্রী নিয়ে আরও বেশি প্রচার চালানো হবে।

কয়েক বছর আগে এ ভাবেই থানায় গিয়ে নিজের বিয়ে রুখে দিয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনারই কাশীপুর থানার স্বরূপনগরের ছাত্রী হাবিবা খাতুন। তারও আগে পুরুলিয়ার রেখা কালিন্দী ও বীণা কালিন্দী নিজেদের বিয়ে রুখে সংবাদের শিরোনামে এসেছিল। সাহসিকতার সেই দৃষ্টান্ত এ বার রাখল জামেনাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Girl Police Help
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE