Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

নিরাপত্তার কড়াকড়িতে মন খারাপ অনেকের

একটা দিনের জন্য ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানে কাঁটতার যেন সরে গেল চোখের সামনে থেকে। পেট্রাপোল-বেনাপোলের ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ দু’দেশের আবেগতাড়িত মানুষের মেলামেশায় সীমান্তও যেন এক দিনের জন্য অদৃশ্য হয়ে গেল।

বিশৃঙ্খলা: বেনাপোলে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

বিশৃঙ্খলা: বেনাপোলে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
পেট্রাপোল শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:২০
Share: Save:

একটা দিনের জন্য ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানে কাঁটতার যেন সরে গেল চোখের সামনে থেকে। পেট্রাপোল-বেনাপোলের ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ দু’দেশের আবেগতাড়িত মানুষের মেলামেশায় সীমান্তও যেন এক দিনের জন্য অদৃশ্য হয়ে গেল।

কারণ, ওই নো ম্যানস ল্যান্ডেই যৌথ ভাবে একটি মঞ্চ গড়ে ভারত এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পালিত হল ‘ভাষাদিবস’। সমবেত মানুষের কারও হাতে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। কারও কারও গালে আঁকা বর্ণমালা। দু’দেশের মন্ত্রী-সাংসদেরা কাঁটাতারের বিভেদ তুলে দেওয়ার দাবি তুললেন ওই মঞ্চ থেকে। হল কোলাকুলি, মিষ্টি বিতরণ, শহিদবেদিতে মাল্যদান করলেন দু’দেশের অতিথিরা। কবি মলয় গোস্বামী ও স্বপন চক্রবর্তীকে ‘মৈত্রী পদক’ দিয়ে সম্মান জানানো হল।

একটু ছন্দপতনও অবশ্য রয়ে গেল এই মিলনমেলায়। তিক্ত মন নিয়েই ফিরতে হল এক বৃদ্ধাকে। ক্রাচে ভর দিয়ে এসেছিলেন ছিয়াশি বছরের গীতা সিংহ। তাঁর বাড়ি কাঁকিনাড়া। অধুনা বাংলাদেশে তাঁর জন্ম। ১৯৬৮ সালে বিবাহসূত্রে এ দেশে আসা। কয়েকবারই মাত্র বাংলাদেশে যাওয়ার সুযোগ ঘটেছে তাঁর। ফেলে আসা দেশের স্মৃতি আজও তাঁকে টানে। ভেবেছিলেন ফেলে আসা সেই দেশকে কাছ থেকে দেখবেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন অধরাই থাকল। বললেন, ‘‘ও দেশের মাটি ছুঁয়ে দেখা হল না। কারও সঙ্গে কথা বলতেও পারলাম না। আসাটাই বৃথা হল।’’

কেন এই অনুভূতি? অনেকেই জানালেন, কারণটা হল নিরাপত্তার কড়াকড়ি। পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার পরে বৃহস্পতিবার দু’দেশের সীমান্তেই কড়া নিরাপত্তা ছিল। বহু মানুষ ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ ঢুকতেই পারেননি। ও দেশের বিজিবি ও পুলিশ তাঁদের বেনাপোল সীমান্তেই আটকে দেন। পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তিও হয়। অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে দু’দেশের মানুষ বসতে পারলেও ব্যারিকেড দিয়ে আলাদা করে রাখা হয়েছিল তাঁদের। নিরাপত্তারক্ষীরা পাহারা দিচ্ছিলেন। যশোর এলাকার তরুণী পলি মৈত্র প্রায় দশ বছর ধরে এই দিনটিতে এখানে আসেন। পলি বলেন, ‘‘ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে চলে এসেছি।’’ বাংলাদেশের সাংসদ শেখ আফিলউদ্দিন বলেন, ‘‘দু’দেশের সরকারের কাছে আমার আবেদন, কাঁটাতার তুলে দিন। ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই যাতে দু’দেশের মানুষ যাতায়াত করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করুন।’’ সীমান্তের উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘প্রজন্ম পরম্পরায় আমরা এই উৎসব এগিয়ে নিয়ে যাব। দু’দেশের মানুষের হৃদয়ের আবেগ যে কাঁটাতার দিয়ে বেঁধে রাখা সম্ভব নয়, এখানে না এলে তা বোঝা যাবে না।’’

এ বারই প্রথম দু’দেশের শিল্পীরা মঞ্চে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাইলেন। ও দেশের শিল্পী দীপান্বিতা সাহা বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক মঞ্চে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে পেরে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’’ তবে উৎসব মাতিয়ে দিয়েছেন জনপ্রিয় গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল। ছিল রক্তদান শিবির। বেনাপোলের সবুজ শেখ বলেন, ‘‘ভারতের মানুষের জন্য রক্ত দিতে পেরে ভাল লাগছে। রক্তের তো কোনও দেশ-জাতি হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE