Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিয়ের রাতে হুমকি, আত্মঘাতী নববিবাহিতা  

পিছনের দরজা দিয়ে মঙ্গলবার রাতেই এলাকা ছাড়েন সদ্য বিবাহিত দম্পতি প্রিয়াঙ্কা (১৮) এবং সোমনাথ প্রামাণিক। আশ্রয় নেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। শনিবার সকালে সেখানেই ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় প্রিয়াঙ্কার। 

প্রিয়াঙ্কা প্রামাণিক

প্রিয়াঙ্কা প্রামাণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা 
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:৪২
Share: Save:

সবেমাত্র সাত পাকে বাঁধা পড়েছেন নবদম্পতি। হঠাৎ বিয়ের মণ্ডপে হাজির তরুণী পাত্রীর পুরনো প্রেমিক। পাত্রের কপালে রিভলভার ঠেসে ধরে সে হুমকি দিয়ে যায়, ‘‘সকাল ৭টার মধ্যে আমার প্রিয়াকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবি। না হলে সব ক’টাকে খুন করে ফেলব!’’ সেটা যে স্রেফ ফাঁকা হুমকি ছিল না, তা টের পেয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। রাতভর মোটর বাইক নিয়ে এলাকায় চক্কর কাটে প্রেমিক।

পিছনের দরজা দিয়ে মঙ্গলবার রাতেই এলাকা ছাড়েন সদ্য বিবাহিত দম্পতি প্রিয়াঙ্কা (১৮) এবং সোমনাথ প্রামাণিক। আশ্রয় নেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। শনিবার সকালে সেখানেই ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় প্রিয়াঙ্কার।

পরিবারের দাবি, রাতে টেলিফোনে বিষয়টি বার বার জানানো হয়েছিল পুলিশকে। কিন্তু তারা গুরুত্ব দেয়নি। অভিযোগ মানছে না পুলিশ। তাদের কাছে কোনও খবর ছিল না বলেই দাবি পুলিশ কর্তাদের। লিখিত অভিযোগ এলে তদন্ত করে দেখার আশ্বাস মিলেছে। আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে।

প্রিয়াঙ্কার বাড়ি কুলতলির পশ্চিম ছাটুইপাড়ায়। এ বছরই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন তরুণী। তাঁর পরিবার সূত্রের খবর, বছর দু’য়েক আগে রায়দিঘিতে বেড়াতে গিয়ে তাঁর আলাপ হয়েছিল ফইজ্জুল মোল্লা নামে এক যুবকের সঙ্গে। ফইজ্জুল অবশ্য নিজের নাম বলেছিল রাজু দাস। দু’জনের মেলামেশা শুরু হয়।

কিছু দিন পরে প্রিয়াঙ্কা জানতে পারেন, মিথ্যা পরিচয় দিয়েছিল রাজু। যোগাযোগ কমিয়ে আনেন তরুণী। বাড়িতেও বিষয়টি জানাজানি হয়। বিয়ের ঠিক হয় তাঁর। পাত্র, জয়নগরের দক্ষিণ বারাসতের রামচন্দ্রপুর গ্রামের যুবক সোমনাথ। বুধবার রাতে মেয়েকে রামচন্দ্রপুর গ্রামে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেন প্রিয়াঙ্কার পরিজনেরা। পুলিশকে তাঁরা জানিয়েছেন, বিয়ের অনুষ্ঠান সবে মিটেছে, অতিথি অভ্যাগতেরা তখনও অনেকেই হাজির। ফইজ্জুল্লা তার বন্ধু পলাশকে নিয়ে হাজির হয়। বাইক থেকে নেমে দু’জনে ঢুকে পড়ে বিয়ে আসরে। সেখানেই ফইজ্জুল্লা সোমনাথের কপালে রিভলভার ঠেকিয়ে হুমকি দেয়। বলে, প্রেমিকাকে সকাল ৭টার মধ্যে যেন তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। না হলে সকলকে খুন করবে সে। মোবাইলে তোলা প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে বেশ কিছু ছবিও দেখায় সে সোমনাথকে।

পেশায় সেনাকর্মী সোমনাথ এই পরিস্থিতিতে কিছুটা ঘাবড়েই যান। তবে স্ত্রীর সম্মানের কথা ভেবে ঘটনাটা পাঁচকান করেননি। সোমনাথ জানান, বাইক নিয়ে দু’টি ছেলে বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। এই পরিস্থিতিতে বাড়ি ছাড়ার কথা ভাবেন নবদম্পতি। বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে পাঁচিল টপকে দু’জনে বেরিয়ে পড়েন। ডায়মন্ড হারবারের কালীনগরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ওঠেন। সোমনাথের কথায়, ‘‘গোটা বিষয়টা ফোনে পরিবারের লোকজনকে জানাই। প্রিয়াঙ্কার বাড়ির লোককেও বলি। স্ত্রীকে বলে আসি, পুরনো ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেল। আমি খুব তাড়াতাড়ি এসে তোমাকে নিয়ে যাব।’’ প্রিয়াঙ্কার দাদা শুভজিৎ ছাটুই জানান, বুধবার ভোরে শ্বশুরবাড়ি থেকে আসার পরে মনমরা হয়েছিল বোন। দুর্ঘটনা ঘটার ভয়ে সকলে নজরেও রেখেছিলেন। কিন্তু শনিবার শেষরক্ষা হল না। হঠাৎ ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন প্রিয়াঙ্কা। বাড়ির লোক বাইরে থেকে চিৎকার করলেও দরজা খোলেননি তরুণী। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে সকলে দেখেন, ততক্ষণে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Suicide Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE