পাত-পেড়ে: হাবরায়। নিজস্ব চিত্র
ভাত, ডাল, তরকারি। সঙ্গে মোচা চিংড়ি, ভেটকি ও কাতলা মাছ। ছিল চাটনি পাপড়। শেষে মাখা সন্দেশ— প্রবীণ দম্পতির জন্য বনভোজনে এই মেনুরই আয়োজন করেছিল হাবরা পুরসভা।
শুধু খাওয়া-দাওয়া নয়। সঙ্গে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। নাম দেওয়া হয়েছিল, ‘প্রবীণ যুগলদের মিলন উৎসব’।
রবিবার হাবরা শহরের সুভাষ রোড এলাকায় এই বনভোজনের আয়োজন করা হয়। সকাল থেকেই সেখানে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা আসতে শুরু করেন। উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস। মাসিমা-মেসোমশাইদের আনন্দ দিতেই এই কর্মসূচি বলে জানান জ্যোতিপ্রিয়বাবু।
বছর সত্তরের অসুস্থ স্বামী বাসুদেব মিস্ত্রিকে নিয়ে বনভোজনে এসেছিলেন বাণীপুরের পুষ্পদেবী। সম্প্রতি বাসুদেববাবু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপর থেকে লাঠি ছাড়া তিনি হাঁটতে পারেন না। কিন্তু এই বনভোজনের আমন্ত্রণ পেয়ে পুষ্পদেবী আর না করেননি। কারণ, স্বামীর সঙ্গে বনভোজন করার এমন সুযোগ তিনি হাতছাড়া করতে চাননি। পুষ্পদেবী বলেন, ‘‘আমাদের তিন ছেলে। আমরা দু’জন এক মাস করে এক একটি ছেলের কাছে থাকি। কোনও রকমে বেঁচে রয়েছি। অনেকদিন পর এখানে পেট ভরে খুব ভাল খেলাম।’’
শুধু পুষ্পদেবী ও বাসুদেববাবু নন, এ দিন ওই বনভোজনে প্রায় এক হাজার দম্পতি যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল একটি মঞ্চ। সেখানে দম্পতিদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওই মঞ্চে দাঁড়িয়ে কেউ নিজের কবিতা পাঠ করলেন। কেউ শোনালেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। কেউ আবার ফেলে আসা জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রত্যেক দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হয় কম্বল।
এক বৃদ্ধার কথায়, ‘‘এটি আমাদের বড় প্রাপ্তি। খুব খুশি হলাম। কত মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারলাম।’’
বনভোজনে এ দিন খেত মজুর থেকে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, শিক্ষক, খেলোয়াড়, শিল্পী দম্পতি সকলে মিলেমিশে একাকার হয়ে যান। অবসরপ্রাপ্ত এক অধ্যাপক অসিত ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী কল্পনাদেবীকে বলছিলেন, ‘‘বাড়ির আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দল বেঁধে বনভোজন করেছি। কিন্তু দু’জনে একসঙ্গে বনভোজনে আসা এই প্রথম। খুব ভাল লাগছে।’’ বৃদ্ধ চাঁদমোহন সাহা বলেন, ‘‘ছোটবেলায় আমবাগানে বনভোজন করেছি বন্ধুদের সঙ্গে। কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গে এই প্রথম। যতদিন বাঁচবো মনে থাকবে।’’
নীলিমেশবাবু বলেন, ‘‘এই পরিকল্পনা বিধায়কের। আমরা আয়োজন করেছি মাত্র।’’ জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কথায়, ‘‘এলাকায় যখন ঘুরে বেড়াই তখন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নানা কষ্টের কথা কানে আসে। অনেকের জীবনেই কোনও আনন্দ নেই। বনভোজনের মরসুমে তাঁদের এখানে এনে দৈনন্দিন জীবনের দুঃখ, কষ্ট, হতাশা থেকে বের করে এরটু আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।’’ তবে এ বার থেকে প্রত্যেক বছরই এই আয়োজন করা হবে বলে তিনি জানান।
এমন সময়ই এক বৃদ্ধ বললেন, ‘‘বয়স হয়েছে। জানি না সামনের বার সকলের সঙ্গে আর দেখা হবে কিনা।’’ পাশে তাঁর স্ত্রীর চোখের কোণ তখন চিকচিক করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy