Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
নীরব কেন পুলিশ, উঠছে প্রশ্ন

স্কুলের পাশে দুষ্কৃতীদের আনাগোনা 

সন্ধ্যার পরে ওই আমবাগান দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়, জুয়া-মদের আসর বসে বলে অভিযোগ।

এই আমবাগানেই ভিড় করে দুষ্কৃতীরা। নিজস্ব চিত্র

এই আমবাগানেই ভিড় করে দুষ্কৃতীরা। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
মাটিয়া শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৫৩
Share: Save:

স্কুলের সামনে বহিরাগতদের আড্ডা। পাশে আমবাগানে জুয়া, মদের আসর বসে। সেখান থেকে কটূক্তির উড়ে আসে ছাত্রীদের দিকে। বিষয়টি পুলিশ, স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরে আনা সত্ত্বেও পরিবেশের কোনও পরিবর্তন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ গ্রামের মানুষ। তাঁদের অনেকের কথায়, ‘‘বাইরে থেকে আসা এই সব লোকজনের জন্য পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। স্কুলের গায়েই চলছে এ সব। অথচ, প্রশাসন নীরব।’’ এরই প্রতিবাদে গ্রামের মানুষ সোমবার ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার দাবিতে লিখিত ভাবে জানান প্রধান শিক্ষককে। বসিরহাটের মাটিয়া থানা এলাকায় মালতিপুর হাইস্কুল। কয়েকশো ছাত্রছাত্রী পড়ে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই স্কুলের সামনে উচ্চ মাধ্যমিকের এক ছাত্রী মনিয়াতুনন্নেসাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় রাজিবুল হোসেন ওরফে পাপাই। দু’বছর ধরে ওই যুবক নানা ভাবে উত্যক্ত করছিল ছাত্রীকে। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় গলায় দুধ মেশানো বিষ ঢেলে দেওয়ায় মৃত্যু হয়েছে ছাত্রীর। পুলিশ রাজিবুলকে গ্রেফতার করলেও এখনও ফেরার তার সঙ্গী ইমরান মণ্ডল।

এই ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হন ছাত্রছাত্রী-সহ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের কথায়, ‘‘উপযুক্ত শাসনের অভাবে বহিরাগতদের অত্যাচার সীমা ছাড়াচ্ছে। ছাত্রীদের প্রতি অশোভন আচরণের প্রতিবাদ করায় প্রায়ই স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে বচসা বাধছে। তারই জেরে মারধর, হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে পড়ুয়াদের।’’

এ দিন স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্য আনোয়ার আলি ওরফে হাবু বলেন, ‘‘স্কুল চলাকালীন পাশের আমবাগানে জড়ো হয় বহিরাগতরা। তারা নেশা করে স্কুল পড়ুয়াদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে। প্রতিবাদ করলে হুমকি দেয়।’’ তিনি জানান, কয়েক মাস আগেও একবার এই স্কুলের এক ছাত্রীকে বহিরাগত যুবক ছুরি মারে।

সন্ধ্যার পরে ওই আমবাগান দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়, জুয়া-মদের আসর বসে বলে অভিযোগ। আনোয়ারের দাবি, আগের ঘটনার পরে থানা এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য বলা হলেও কাজ হয়নি।

সোমবার দুপুরে মালতিপুরে গিয়ে দেখা গেল, স্কুলের ডান দিকের ঘরগুলির সব জানালায় কাচের জায়গায় টিন লাগিয়ে বন্ধ করে দেওয়া। ফলে আলো-বাতাসের অভাবে ক্লাস করতে অসবিধা হয়। একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সিরিয়া সুলতানা, খুকুমনি খাতুন, দশম শ্রেণির তামিম রহমান বলে, ‘‘ক্লাস চলাকালীন স্কুলের পাশে আমবাগানে রোমিয়োদের আড্ডা জমে। কেউ কেউ অভব্য ব্যবহার করে। খারাপ কথা বলে। ঢিল ছুড়ে জানলার কাচ ভাঙায় বাধ্য হয়েই টিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তবে আলোর অভাবে, বিশেষ করে বর্ষাকালে ক্লাস করতে অসুবিধা হয়। বহিরাগতদের ভয়ে অনেকে সিঁটিয়ে থাকে।’’ স্কুল পড়ুয়াদের নিরাপত্তার জন্য স্কুলের পাশ হয়ে আমবাগানের মধ্যে দিয়ে স্টেশনে যাওয়ার রাস্তাটি বন্ধের দাবি করেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য-সহ গ্রামের মানুষ। অভিভাবকদের পক্ষে বুলবুল ইসলাম, আরশাদ আলি, আজহার গাজি বলেন, ‘‘প্রায়ই শোনা যায়, কিছু ছেলে স্কুলের সামনে জড়ো হয়ে হেনস্থা করছে ছাত্রীদের। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে ওই ছেলেরা। তাতে আশপাশের লোকজন ভয় পেয়ে যায়। গ্রামের মানুষ দু’চারজনকে পুলিশের হাতে তুলেও দিয়েছে এর আগে। কিন্তু পুলিশি টহলের অভাবে দু’চার দিন যেতে না যেতেই স্কুলের সামনে ফের ছেলেরা জুটে যায়।’’ সমস্যার কথা মেনে নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হীরামোহন মণ্ডল বলেন, ‘‘স্কুল চত্ত্বরে নিরাপত্তার জন্য পাঁচিল দেওয়া হচ্ছে। স্কুলের পাশে বাগানের দিকে জানলার কাচ ভাঙায় বাধ্য হয়ে টিন লাগাতে হয়েছে। বহিরাগতদের উপদ্রব বন্ধ করতে পুলিশকে জানানো হয়েছে।’’

পুলিশ সুপার কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘ওই এলাকা থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েক জন রোমিয়োকে পাকড়াও করা হয়েছে। ঘটনাটি যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে

দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE