Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হঠাৎ হাজির ওসি, বন্ধ হল নাবালিকার বিয়ে

এ দিন সকালে ভাঙড়ের থানারডালা পুকুর গ্রামে দেখা গেল এমনই দৃশ্য। গাড়ি থেকে নেমে ভাঙড় থানার ওসি অশোকতরু মুখোপাধ্যায় সটান ঢুকে গেলেন বাড়ির ভিতরে। তাঁর সঙ্গে ভাঙড়-১ ব্লকের বিডিও সৌগত পাত্র।

বিয়েবাড়িতে ওসি অশোকতরু মুখোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং বিডিও সৌগত পাত্র (ডান দিকে)। রবিবার ভাঙড়ে। নিজস্ব চিত্র

বিয়েবাড়িতে ওসি অশোকতরু মুখোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং বিডিও সৌগত পাত্র (ডান দিকে)। রবিবার ভাঙড়ে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০১:০৯
Share: Save:

রবিবারের সকাল। কনের বাড়িতে তোড়জোড় প্রায় শেষ। আত্মীয়-পরিজনেরা সব চলে এসেছেন। রাঁধুনিদের উদ্দেশে শোনা যাচ্ছে মেয়ের বাবার হাঁকডাক, ‘কই হে, বরপক্ষের তো আসার সময় হয়ে গেল। লুচিটা ভাজা হবে কখন?’ হঠাৎই রাস্তায় গাড়ির আওয়াজ। মেয়ের বাড়ির লোকজন ভাবলেন, বর এসেছে। তাঁরা ছুটে এলেন দরজায়। কিন্তু এ কী! বরের বদলে গাড়ি থেকে নামছে পুলিশ। হকচকিয়ে গেলেন সকলে। আশপাশের বাড়ির জানলা থেকে ভেসে এল মহিলাদের উক্তি, ‘‘এ বাবা! বরের বদলে পুলিশ কেন?’’

এ দিন সকালে ভাঙড়ের থানারডালা পুকুর গ্রামে দেখা গেল এমনই দৃশ্য। গাড়ি থেকে নেমে ভাঙড় থানার ওসি অশোকতরু মুখোপাধ্যায় সটান ঢুকে গেলেন বাড়ির ভিতরে। তাঁর সঙ্গে ভাঙড়-১ ব্লকের বিডিও সৌগত পাত্র। ভিতরে ঢুকে হাঁক দিলেন ওসি, ‘‘কনের বাবা কোথায়?’’ এক জন এগিয়ে এসে বললেন, ‘‘স্যার, আমার নাম আরেফ মোল্লা। আমার মেয়েরই বিয়ে আজ।’’ ওসি-র প্রশ্ন, ‘‘মেয়ের বয়স কত?’’ আরেফ বলেন, ‘‘১৮ বছর।’’ কেউ এক জন পাশ থেকে বলল, পুলিশ হয়তো ভুল ঠিকানায় চলে এসেছে। বিডিও সৌগতবাবু বিড়বিড় করে বলেন, ‘‘নামটা হয়তো আমাদের কাছে ভুল এসেছে।’’ তা সত্ত্বেও অশোকতরুবাবু আরেফের কাছে মেয়ের বয়সের প্রমাণপত্র দেখতে চাইলেন। তা খতিয়ে দেখে জানা গেল, কনের বয়স ১৭ বছর ২ মাস। তার পরেই এই বিয়ে বন্ধ করার নির্দেশ দেন ওসি এবং বিডিও।

নির্দেশ শুনে তো মাথায় হাত মেয়ের বাড়ির লোকজনের। কান্নায় ভেঙে পড়েন আরেফও। তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বিডিও বলেন, ‘‘আপনার মেয়ে তো স্কুলে পড়ে। নিশ্চয়ই কন্যাশ্রীর টাকা পায়। পাশ থেকে মেয়ের কাকা, স্থানীয় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ইশাক মোল্লা বলেন, ‘‘হ্যাঁ স্যার, পায়।’’ তখন বিডিও বলেন, ‘‘১৮ বছর হয়ে গেলে ও তো ২৫ হাজার টাকা পাবে। এখনই কেন ভাইঝির বিয়ে দিচ্ছেন? তার চেয়ে বরং লেখাপড়া করান।’’

এ বার আসরে নামেন ওসি। কনের কাকাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলছেন, ১৮ বছরের আগে কোনও মেয়ের বিয়ে দেবেন না। আপনি তো পঞ্চায়েত সদস্য। কী করে নাবালিকা ভাইঝির বিয়ে দিচ্ছেন?’’ ইশাক তখন মেনে নেন, তিনি জানতেন ভাইঝির বয়স ১৮ হয়ে গিয়েছে। তাই আর আপত্তি করেননি।

শেষমেশ ওসি এবং বিডিও-র যৌথ প্রচেষ্টায় বিয়ে বন্ধ হয় ওই কিশোরীর। পরিবারের অন্য সদস্যেরাও তাঁদের কথা মেনে নেন। আরেফও বলেন, আপাতত মেয়ের পড়াশোনার দিকেই নজর দেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Minor Marriage Crime BDO বিডিও
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE