তন্ময় ও সাত্ত্বিক।—নিজস্ব চিত্র
বাড়ির ছোট ছেলে তন্ময় সব বিষয়ে স্টার নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে। তার পরেও রুদ্রনগর অধিকারীচকে নিমাই দাসের বাড়িতে ছিল না কোনও নিজস্বী তোলার ধুম, না কোনও রসগোল্লা-লাড্ডু খাওয়ার আনন্দ। পানসে মুখে বসে বাবা। তাঁর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, ছেলের পড়ার খরচ কী ভাবে জোগাড় করবেন।
এ বার রুদ্রনগর দেবেন্দ্র বিদ্যাপীঠ থেকে ভাল ফল করেছে তন্ময়। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৬২। দিনমজুর বাবা নিমাইবাবু বললেন, ‘‘বড় ছেলেটা কোনও রকমে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পৌঁছে আর পড়তে পারল না। বাড়িতে সাত জন সদস্য। আমি, স্ত্রী এবং মা অসুস্থ। তার উপরে দু’টি মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। ছেলেকে পড়াতে পারব কিনা জানি না।’’
বেশিরভাগ দিনই একবেলা খাবার জোটে। বর্ষায় মেঝেতে জল জমে যায়। এমন দারিদ্রকে সঙ্গী করে মাধ্যমিকে স্কুলের নাম রেখেছে সে। তার ইচ্ছে চিকিৎসক হওয়া। প্রধান শিক্ষক অনুপকুমার দাস বলেন, ‘‘তন্ময় স্কুলের গর্ব। তার পাশে দাঁড়াব।’’
ছোট থেকেই সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত কাকদ্বীপ বীরেন্দ্র বিদ্যানিকেতনের ছাত্র সাত্ত্বিক মাইতি। তা নিয়ে এ বার ৫৩১ পেয়েছে সে। পরীক্ষা দেওয়ার সময়ে নিজে লিখতে পারেনি। লেখক নিতে হয়েছে তাকে। ইচ্ছে, শিক্ষক হবে। কিন্তু চিন্তায় বাবা-মা। ছেলের ওষুধের খরচ মাসে অনেক। বাবা বিকাশ মাইতি তেমন কিছু করেন না। মা সরযুদেবী অবসরপ্রাপ্ত নার্স। তিনি জানালেন, পেনশনের ভরসায় সংসার চলে।
সাত্ত্বিককে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত দাস। তাঁর কথায়, ‘‘ওর পড়া চালিয়ে যেতে যা যা প্রয়োজন, স্কুল থেকেই করব আমরা।’’
পাথরপ্রতিমার কেদারপুর রামনন্দ হাইস্কুলের রাহুলদেব সরকারও ভাল ফল করেছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬০৬। ভবিষ্যতে প্রশাসনিক অফিসার হতে চায় সে।
কিন্তু তার মা চিত্রা সরকার একা হাতে সংসার টানছেন। স্বামী পরিবার ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে মহিলা সামান্য দর্জির চাকরি করেন কলকাতায়। মল্লিকপুরে একচিলতে ভাড়া বাড়িতে থেকে দুই ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন তিনি। চিত্রাদেবীর কথায়, ‘‘ছেলে বলে বিসিএস দেবে। আমাদের মতো অভাবের সংসারে লড়াইটা কঠিন।’’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিমলকুমার গিরি স্কুল থেকেই রাহুলের পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেটি দাঁড়াতে পারলে আমার ভাল লাগবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy