প্রতীকী ছবি।
জল পাই কোথায়?— প্রশ্নটা ঘুরে ফিরে উঠতে শুরু করেছে বসিরহাটে।
আর্সেনিকের প্রকোপ এই মহকুমার বেশির ভাগ এলাকায়। পরিস্রুত পানীয় জল দেবে বলে বহু বার বহু রকম পরিকল্পনা করেছে সরকার। বেসরকারি উদ্যোগেও কিছু কাজ হয়েছে নানা সময়ে। কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছু হয়নি। আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের কিছু প্রকল্প বিচ্ছিন্ন ভাবে তৈরি হয়েছে। আবার নানা কারণে সে সব মুখ থুবড়ে পড়েছে। জল কেমন পাচ্ছেন, এই প্রশ্ন শুনলে বসিরহাটের লোক এক রকম তাড়া করতে বাকি রাখেন, এতটাই তিতিবিরক্ত তাঁরা।
এরই ফাঁক গলে বছর পনেরো ধরে বোতল, ব্যারেলবন্দি পানীয় জলের ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠেছে শহর জুড়ে। গ্রামাঞ্চলেও রমরমিয়ে চলছে তাদের কারবার। সেই জলের গুণগত মান কেমন, এখন আর সে প্রশ্ন তোলেন না মানুষ। বরং, ১৫-২০ টাকা ব্যারেলের এই জল খেয়েই তাঁরা দিব্যি আছেন বলে দাবি করেন। আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের প্রকল্প তৈরির আর তেমন উদ্যোগও নতুন করে চোখে পড়ে না সরকারি তরফে।
মোটের উপরে এই চলছিল পরিস্থিতি। কিন্তু গোল বেধেছে গত কয়েক দিন ধরে।
বেআইনি পানীয় জলের কারবারের গোড়ায় ঘা মারতে উঠেপড়ে লেগেছে পুলিশ-প্রশাসন। জেলার নানা প্রান্তে বেশ কিছু বেআইনি পানীয় জলের কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যার জেরে বসিরহাটের শ’চারেক জলের কারখানা গত তিন দিন ধরে বন্ধ। ধরপাকড়ের ভয়ে ব্যবসা গুটোনোর কথা ভাবছেন মালিকেরা।
কারণ, এই সব জলের গুণগত মান পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। তা ছাড়া, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নথিপত্রেরও অভাব।
কিন্তু এই অবস্থায় পানীয় জলের হাহাকার শুরু হয়েছে বসিরহাটের বিস্তীর্ণ এলাকায়।
কিন্তু বেশ তো চলছিল। হঠাৎ কেন পুলিশি তৎপরতা?
প্রশাসনের এক আধিকারিকের মতে, কিছু দিন আগে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যারাকপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে জলের কারবারের কথা উঠেছিল। বড় কিছু সংস্থার অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর কানে ওঠে।
সেই সব সংস্থার বক্তব্য ছিল, খুব সস্তায় যা ‘মিনারেল ওয়াটার’ বলে চালানো হচ্ছে, তা আদৌ পরিস্রুত নয়। শুধুমাত্র গভীর নলকূপের জলে কিছু রাসায়নিক মিশিয়ে বোতলে পুরে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সস্তার সেই জলের বেআইনি কারবারের দাপটে বেশি দামের বড় সংস্থার জলের বাজার পড়তির দিকে। মুখ্যমন্ত্রী সে সময়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রশাসনের কর্তাদের।
আজ, মঙ্গলবার জেলায় ফের বৈঠক করতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বারাসতে প্রশাসনিক সভায় ফের জলের ব্যবসার প্রসঙ্গ উঠতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। সে কারণেই পুলিশ ক’দিন ধরে সক্রিয় হয়েছে বলে অনুমান।
বসিরহাটের বাসিন্দাদের বক্তব্য, ছোটখাট গজিয়ে ওটা জলের সংস্থা বেআইনি কারবার চালাতে পারছে, তার কারণ সরকারি স্তরে পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করে উঠতে পারেনি।
বসিরহাটে জলের কারবার বন্ধ বলে অবশ্য শোনেননি বলে জানাচ্ছেন মহকুমাশাসক নীতেশ ঢালি।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আধিকারিক সঞ্জীব সরকার বলেন, ‘‘গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে মাটির তলায় আর্সেনিকমুক্ত জল পাওয়া মুশকিল হচ্ছে। তবে নতুন ভাবে কিছু কাজ শুরু হচ্ছে।’’
বসিরহাট পুরসভার উপ পুরপ্রধান সুদেব সাহা জানান, বেশ কিছু গভীর নলকূপ বসানোর কাজ চলছে। তা ছাডা়, আমরুত প্রকল্পে ব্যারাকপুর থেকে গঙ্গার জল আনার কাজও চলছে দ্রুত গতিতে।
কিন্তু সে সব কবে হবে, তার তো ঠিক নেই, বলছেন বসিরহাটের বাসিন্দা অমিত সাহা, সাজাহান মোল্লারা।
তাঁদের বক্তব্য, ‘‘বোতল, ব্যারেলে সস্তার জল অমিল। সরকারি ব্যবস্থা কবে হবে, তার ঠিক নেই। এখন বাধ্য হয়ে আর্সেনিক যুক্ত জলই খাচ্ছি আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy