Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
White Sand

দোকান-বাড়িতে বালির ঝড়ে জেরবার বাসিন্দারা

কাকদ্বীপের লট-৮ ঘাটের ১ থেকে ৪ নম্বর জেটি ঘাট পর্যন্ত মুড়িগঙ্গা নদীতে বেশ কয়েক বছর ধরে চর জমতে শুরু করেছে।

বালির আস্তরণে ঢেকে গিয়েছে রাস্তাঘাট। নিজস্ব চিত্র

বালির আস্তরণে ঢেকে গিয়েছে রাস্তাঘাট। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:২৩
Share: Save:

রাস্তা জুড়ে পড়ে রয়েছে সাদা বালি। হাওয়ায় বা রাস্তা দিয়ে কোনও গাড়ি গেলে সেই বালি উড়ে ঢুকে পড়ছে আশেপাশের ঘর-বাড়ির মধ্যে। এভাবে বাড়িঘরে সাদা বালির স্তর জমে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যায় জেরবার কাকদ্বীপের লট-৮ ঘাটের কাছের বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্থানীয় পঞ্চায়েত ও প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না।

কাকদ্বীপের লট-৮ ঘাটের ১ থেকে ৪ নম্বর জেটি ঘাট পর্যন্ত মুড়িগঙ্গা নদীতে বেশ কয়েক বছর ধরে চর জমতে শুরু করেছে। এর ফলে অমাবস্যা বা পূর্ণিমার কটালের ভাটার সময় জলস্তর কমে যাওয়াও সারা দিনে কয়েক ঘণ্টা ধরে ভেসেল চলাচল বন্ধ থাকে। নদীর চর কাটার জন্য গত বছর গঙ্গাসাগর মেলার আগে সেচ দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ড্রেজিং মেশিনের সাহায্যে সেই চর কাটার কাজ চলছে। চর কেটে সেই বালি পাইপ লাইনের সাহায্যে ফেলা হয় নদী বাঁধ লাগোয়া পুকুরের মতো ঘেরা জায়গায়। পরে তা শুকিয়ে গেলে বিক্রির জন্য পাঠানো হচ্ছে কাকদ্বীপ নামখানা সহ বিভিন্ন এলাকায়। আর এতেই বিপদে পড়েছেন বাসিন্দারা। সারা দিন শ’য়ে শ’য়ে গাড়ি সাদা বালি ভর্তি করে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। যাওয়ার পথে ঝাঁকুনিতে কিছু বালি রাস্তায় পড়ছে। পড়ে থাকা বালি ও গাড়ি থেকে উড়ে আসা বালি সবটাই ঢুকে পড়ছে আশেপাশের বাড়ি, দোকান ঘরে।

নদীর পাশেই রয়েছে রামকৃষ্ণ পঞ্চায়েতের সেনেরচক, কালিকাপুর কালিনগর, পশ্চিম গঙ্গাধরপুর সহ একাধিক গ্রাম। ওই গ্রামগুলির রাস্তার পাশের বাসিন্দারা বালির ঝড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। স্থানীয়রা জানান, রাস্তার বালি উড়ে গিয়ে ভাত, তরকারিতে মিশে যাচ্ছে। নাকে মুখে ঢুকে গিয়ে শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। বিছানায় বালি পড়ে থাকায় শোওয়া পর্যন্ত যাচ্ছে না। লট-৮ ঘাট থেকে নতুন রাস্তার বাস মোড় পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার রাস্তার ধারে শতাধিক খাবার হোটেল, চায়ের দোকান, তেলে বাজার দোকান রয়েছে। বালির ঝড়ে সেই সব দোকান খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারাও দোকানের কাছে ঘেঁষতে পারছেন না। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পর পাশ দিয়ে কোন গাড়ি গেলেই চোখে, মুখে, নাকে ঢুকে যাচ্ছে সাদা বালি। আশে পাশের গাছের পাতাগুলো পর্যন্ত বালির আবরণে ঢেকে গিয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে।

কালীনগর গ্রামের বাসিন্দা মালতি জানা, মোজাম্মেল মোল্লারা জানালেন, রাস্তায় পড়ে থাকা বালির উপর দিয়ে শুধু বড় গাড়ি নয়, হেঁটে গেলেও ধূলো উড়ছে। এলাকায় টেঁকা যাচ্ছে না। আত্মীয় স্বজনেরা বাড়িতে আসাই ছেড়ে দিয়েছেন। ঘর-বাড়ি পলিথিন ঢাকা দিয়ে রেখেও রেহাই মিলছে না। তাঁদের দাবি, গাড়িতে করে বালি নিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকা দিয়ে নিয়ে গেলে এত সমস্যা হত না। রাস্তার পড়ে থাকা বালি জল দিয়ে ধুয়ে ফেলার ব্যবস্থা করলেও রেহাই মিলত। কিন্তু এসবের কিছুই হচ্ছে না।

লট-৮ ঘাটের কাছের এক খাবার হোটেলে মালিক সুভাষ মণ্ডল বলেন, “বালির ঝড়ে আমাদের ব্যবসা শিকেয় উঠেছে। কোনও ক্রেতা দোকানে ঘেঁষতে পারছেন না। বালির সমস্যার জন্য লাইন দিয়ে দোকান বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সমস্যা নিয়ে মাস খানেক আগে প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। কিন্ত কোনও সুরাহা হয়নি।”

কাকদ্বীপের বিডিও দিব্যেন্দু সরকার বলেন, “গাড়ি গুলিকে কম করে বালি বওয়ায় জন্য বলা হয়েছে। ভিজে বালি দ্রুত সরিয়ে ফেলার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রত্যেকদিন রাস্তা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলার কাজ কয়েক দিনের মধ্যে শুরু করবে দমকল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

residents in difficulty White Sand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE