Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কাজকর্ম বন্ধ রেখে লাইন হাসপাতালে

গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ গুহ জানালেন, ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৯টিতে জ্বর ছড়িয়েছে। সমিতির পক্ষ থেকে পঞ্চায়েতগুলিকে মশা মারার তেল দেওয়া হয়েছে। তবে বাসিন্দারা জানালেন, এলাকা বন-জঙ্গলে ভর্তি।

হাসপাতালে রোগীদের ভিড়। গাইঘাটায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

হাসপাতালে রোগীদের ভিড়। গাইঘাটায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৭ ০৭:০০
Share: Save:

প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও আট বছরের অসুস্থ মেয়ে প্রার্থনাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন মা শান্তিসুধা সরকার। বাড়ি গাইঘাটার বড়া এলাকায়। সকাল সাড়ে ১১টার সময়ে টোটো করে স্থানীয় চাঁদপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালের সামনের রাস্তায় এসে নামলেন। তখন অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। মেয়েকে কোলে নিয়ে অন্য হাতে ছাতা মাথায় দিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগের বাইরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ালেন। তখনও মেয়ের শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। শান্তিদেবী জানালেন, ছ’দিন ধরে জ্বর ছাড়ছে না। তাই বৃষ্টির মধ্যেও মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

শিমূলপুরের বাসিন্দা বছর একুশের ধীরাজ মণ্ডল কলকাতার একটি হোটেলে কাজ করেন। দিন চারেক হল জ্বরে পড়েছেন। তিনি এ দিন মাকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষা করিয়েছেন। এখনও রিপোর্ট হাতে পাননি। কাজকর্ম বন্ধ, জানালেন ধীরাজ।

সোমবার সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাসপাতালের বহির্বিভাগে এসেছিলেন গাইঘাটা ব্লকের বহু মানুষ। জ্বর এখানে দিনের পর দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। রোজই কোনও না কোনও এলাকার মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সকলে হাসপাতালে এসেছেন। ফুলসরা গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ আনন্দ মণ্ডল। জানালেন, জ্বর গায়ে খেতের কাজকর্ম বন্ধ। একই অবস্থা মানিকহীরা গ্রামের দুলাই বাড়ুইয়ের। জয়ন্তী বৈদ্য বা শম্পা মণ্ডলদের এক-দেড় ঘণ্টা করে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। অনেকে দুর্বল শরীরে হাসপাতাল চত্বরে বসেছিলেন।

গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ গুহ জানালেন, ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৯টিতে জ্বর ছড়িয়েছে। সমিতির পক্ষ থেকে পঞ্চায়েতগুলিকে মশা মারার তেল দেওয়া হয়েছে। তবে বাসিন্দারা জানালেন, এলাকা বন-জঙ্গলে ভর্তি। বাড়ির নালা বা গ্রামের জলাশয়ে মশার লার্ভা ভেসে বেড়াচ্ছে। মশা মারার তেল কার্যত ছড়ানো হচ্ছে না। মানুষের মধ্যে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতাও নেই।

ব্লক স্বাস্থ্য ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকের কয়েক হাজার মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারি হিসাবে ৮৫ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। বেসরকারি হিসাবে সংখ্যাটা অবশ্য কয়েক গুণ। এখনও পর্যন্ত ৩ জন মারা গিয়েছেন। অথচ ব্লকের একমাত্র হাসপাতালে ডেঙ্গির কোনও রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে মানুষ বাইরে থেকে খরচ করে রক্তের পরীক্ষা করাচ্ছেন।

এলাকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তাঁদের কাজকর্ম বন্ধ। উল্টে বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষা করাতে টাকা খরচ হচ্ছে। হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা মাত্র তিরিশটি। কিন্তু রোগী ভর্তি থাকছে অনেক বেশি। মেঝেতেও জ্বরে আক্রান্তদের রাখা হচ্ছে। অভিযোগ, বেশিরভাগকেই অন্যত্র ‘রেফার’ করে দেওয়া হচ্ছে। যাতায়াতেই অনেক খরচ হয়ে যাচ্ছে।

মাঝে মধ্যে বিক্ষিপ্ত ভাবে গ্রামে মেডিক্যাল ক্যাম্প বসলেও এক দুদিন পর উঠে যাচ্ছে। এই সুযোগে হাতুড়ে বা ওষুধের দোকানগুলি ফুলে ফেঁপে উঠেছে। বিএমওএইচ কৌশিক রায় জানালেন, একে কর্মীর অভাব, তার উপরে মেশিনপত্রও নেই। তাই ডেঙ্গির পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। হাসপাতালে চিকিৎসক মাত্র ৩ জন। কিছু দিন আগেও এখানে ৬ জন চিকিৎসক ছিলেন বলে জানালেন বিএমওএইচ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fever Gaighata গাইঘাটা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE