Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বৃষ্টি পড়লেই বাজে ছুটির ঘণ্টা

সেখানেই গাদাগাদি করে বাচ্চাদের বারান্দায় বসিয়ে কোনও মতে স্কুল চ‌লছে। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত এখন পড়ুয়ার সংখ্যা ১৩৬ জন। শিক্ষক-শিক্ষিকা ৩ জন। পার্শ্বশিক্ষক ১ জন।

হতশ্রী: এ ভাবেই চলে ক্লাস। নিজস্ব চিত্র

হতশ্রী: এ ভাবেই চলে ক্লাস। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
মন্দিরবাজার শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৭ ০৭:০০
Share: Save:

সকাল সাড়ে ১১টা। স্কুলের বারান্দায় চটের উপরে বসে কচিকাঁচারা। তাদের সামনে চেয়ারে বসে এক শিক্ষক পড়াচ্ছেন। দূর থেকে দেখে মনে হবে প্রাইভেট কোচিং চলছে। মন্দিরবাজারের মুলদিয়া হালদার পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের অভাবে এ ভাবেই ক্লাস চলছে বছরের পর বছর ধরে।

প্রাথমিক ওই বিদ্যালয়টি ১৯৫৫ সালে সরকারি অনুমোদন পাওয়ার পরে গ্রামের একটি বড় ইটের দেওয়ালে টালির ছাউনি দিয়ে পঠনপাঠন চলছিল। কিন্তু দীর্ঘ দিন তা সংস্কার না হওয়ায় ২০১২ সালে এক ঝড়ের রাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে টালির ছাউনির ভবনটি। তারপর এখানে ওখানে বেশ কিছু দিন স্কুল চলার পরে সরকারি অনুমোদনের ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকায় একতলা ছোট ভবনটি তৈরি হয়।

সেখানেই গাদাগাদি করে বাচ্চাদের বারান্দায় বসিয়ে কোনও মতে স্কুল চ‌লছে। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত এখন পড়ুয়ার সংখ্যা ১৩৬ জন। শিক্ষক-শিক্ষিকা ৩ জন। পার্শ্বশিক্ষক ১ জন। ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে এলেও ছোট ঘরের মধ্যে বসার জায়গা না মেলায় বাইরে বারান্দায় কিছু ক্লাস নিতে হয়। তা ছাড়া, ঘরের মধ্যে এক সঙ্গে তিনজন শিক্ষক পাশাপাশি বসে তিনটে ক্লাস নিতেও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। স্কুলের বারান্দাটি ঘেরা না হওয়ায় বৃষ্টি হলেই বারান্দার থেকে জল ঢুকে পড়ে ক্লাস ঘরের মধ্যে। ভিজে যাওয়ার ভয়ে মেঘ করলেই স্কুলে ছুটি দিতে হয়।

স্কুলের কোনও সীমানা পাঁচিল নেই। পাশেই জলাজমি এবং পুকুর। মাঝে মধ্যে বিষধর সাপ ঘুরে বেড়ায় স্কুলের আনাচে কানাচে। এ ছাড়াও, স্কুলের যাতায়াতের পাকা রাস্তা নেই। বৃষ্টি হলেই কাঁচা রাস্তায় কাদা মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। স্কুলে নেই কোনও নলকূপও। গ্রামের নলকূপ থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হয়। এমনকী, ছাত্রছাত্রীদের মিড ডে মিল খাবার কোনও ঘর নেই। খেতে হয় এখানে সেখানে বসে।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর আগে দ্বিতীয় বার ভবন নির্মাণের জন্য সর্বশিক্ষা মিশন থেকে টাকা অনুমোদন হয়েছিল। সে সময়ে গ্রামবাসীদের বাধায় জমিজটের কারণে ওই টাকায় কাজ করা যায়নি।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক গুরুদাস বৈদ্য বলেন, ‘‘জমি জটের সমস্যা মিটলেও অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। ফলে উপযুক্ত পরিষেবা থেকে ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে। সমস্ত বিষয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’

মন্দিরবাজার সার্কেলের স্কুল পরিদর্শক নবীন মালাকার বলেন, ‘‘ওখানে আমি গিয়েছি। ভবন নির্মাণের জমির জন্য সমস্যা হয়েছিল। বর্তমানে সর্বশিক্ষা মিশন থেকে ওই স্কুলের ভবন নির্মাণে ৪ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। স্কুল খুললে কাজ শুরু হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Rain Rainy Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE