হারাধন প্রামাণিক ও বিজয় মণ্ডল
উত্তর শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলেন হারাধন প্রামাণিক। পা নাচাতে নাচাতে চশমার ফাঁক দিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে ব্লক অফিসের কর্মীটি বলেছিলেন, ‘‘আপনি তো দাদু বেঁচেই নেই। বার্ধক্য ভাতা পাবেন কী করে!’’
আমতা আমতা করে প্রশ্ন করেছিলেন অশীতিপর হারাধন। ‘‘না মানে, এই যে আমি এখানে দাঁড়িয়ে, তবে এটা কে?’’ উত্তর মিলেছিল, ‘‘ও সব বললে তো হবে না। খাতায়-কলমে আপনি বেঁচে নেই।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ১ ব্লকের বেশ কয়েকজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পড়েছেন এমনই ফাঁপরে। প্রশাসনের খাতায় তাঁদের জীবিত থাকার প্রমাণ নেই। ফলে বার্ধক্য ভাতার সামান্য ক’টা টাকা যা-ও বা পেতেন, সেটাও পাচ্ছে না।
স্থানীয় বিজেপি নেতা মধুসূদন মণ্ডলের অভিযোগ, স্থানীয় পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের গাফিলতিতেই এই অবস্থা। এলাকার ৩১ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ভাতার টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’’
উত্তর লক্ষ্মীনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের সুধীরহাট মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা বছর বিরাশির হারাধন জানালেন, বছর তিনেক আগেও ভাতা পেতেন। হঠাৎ তা বন্ধ হয়ে যায়। বৃদ্ধ বলেন, ‘‘অসুস্থ শরীর নিয়ে পঞ্চায়েতে গিয়েছি। ব্লক অফিসেও গিয়েছি। কিন্তু বলে দেওয়া হয়েছে, আমি নাকি সরকারের চোখে বেঁচে নেই। মৃত। তাই টাকা আর পাব না। কোনও ভাবেই ওদের বোঝাতে পারছি না, এখনও বেঁচেবর্তেই আছি।’’
দরমার দেওয়াল, ভাঙাচোরা টিনের ছাউনি দেওয়া বারান্দায় বসে বৃদ্ধ বলেন, ‘‘টাকাটা পেলে টানাটানির সংসারে অনেকটা সুরাহা হত। সংসারের খরচ, ওষুধ কেনা সবই ওই টাকায় চলত।’’
রাধাকান্তপুর গ্রামের আশি বছরের বিজয় মণ্ডলের একই অবস্থা। ২০১৬ সালের জুলাই মাসের পর থেকে ভাতার টাকা পাচ্ছেন না তিনিও। ব্লক প্রশাসনের কাছে দরবার করতে গিয়ে জবাব মিলেছে, ‘‘কাগজে-কলমে আপনার বেঁচে থাকার প্রমাণ নেই। টাকা তো পাবেন না।’’ বৃদ্ধের কথায়, ‘‘আমি যে জীবিত, সেটা প্রমাণ করতে হিমসিম খাচ্ছি। বিভিন্ন জায়গায় দরবার করেছি। টাকাটা না পেয়ে খুবই সমস্যায় আছি।’’ বিজয় জানালেন, ক’দিন আগে পঞ্চায়েত প্রধানের কাছ থেকে অনেক কষ্টে ‘জীবিত’— এই শংসাপত্র পেয়েছেন। এখন সেই শংসাপত্র জমা করে ব্লক প্রশাসনের চোখে বেঁচে উঠবেন কিনা, তা অবশ্য এখনও পরখ করে দেখা হয়নি বিজয়ের। গ্রামের অনেকেই জানালেন, বার বার সশরীরে অফিসে হাজিরা দিয়েও বোঝাতে পারেননি, তাঁরা বেঁচে আছেন।
লক্ষ্মীনারায়ণপুর উত্তর পঞ্চায়েতের প্রধান সুবোধচন্দ্র হালদার অবশ্য এ বিষয়ে দায় চাপিয়েছেন ব্লক প্রশাসনের উপরে। তাঁর কথায়, ‘‘বার্ধক্য ভাতা পাওয়ার জন্য যে সমস্ত নথিপত্র দরকার, তা ব্লক প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে তারা সঠিক ভাবে দেখে না। তাতেই সমস্যা তৈরি হয়।’’ যুগ্ম বিডিও কল্লোল ঘোষ বলেন, ‘‘মৃত্যুর শংসাপত্র ছাড়া কাউকে মৃতের তালিকায় ফেলে দেওয়ার কথা নয়। কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy