Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

রুপোলি পর্দাতেও বাজিমাত

প্রকৃতি যেন ঢেলে সাজিয়েছে শাসনকে। কেবলমাত্র পর্যটনের উপরে নির্ভর করে বেঁচে থাকতে পারে এই এলাকা। দু’পাশে বিশাল-বিশাল জলের ভেড়ি, মাঝখান দিয়ে রাস্তা। সেই রাস্তার দু’পাশে গাছ-গাছালি। যে দিকে চোখ যায়, খোলা আকাশ। কোথাও আবার প্রাণোচ্ছ্বল বিদ্যাধরী নদীর চোখটানা বাঁক, শীত পড়তেই পরিযায়ী পাখিদের ভিড়— সব মিলিয়ে কলকাতার কাছে এক অতি মনোরম জায়গা।

সে দিন শাসনে...। সওদাগর ছবির শুটিংয়ের একটি দৃশ্য।

সে দিন শাসনে...। সওদাগর ছবির শুটিংয়ের একটি দৃশ্য।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শাসন শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৫ ০০:৪৮
Share: Save:

প্রকৃতি যেন ঢেলে সাজিয়েছে শাসনকে।

কেবলমাত্র পর্যটনের উপরে নির্ভর করে বেঁচে থাকতে পারে এই এলাকা। দু’পাশে বিশাল-বিশাল জলের ভেড়ি, মাঝখান দিয়ে রাস্তা। সেই রাস্তার দু’পাশে গাছ-গাছালি। যে দিকে চোখ যায়, খোলা আকাশ। কোথাও আবার প্রাণোচ্ছ্বল বিদ্যাধরী নদীর চোখটানা বাঁক, শীত পড়তেই পরিযায়ী পাখিদের ভিড়— সব মিলিয়ে কলকাতার কাছে এক অতি মনোরম জায়গা।

যে কারণে নানা সময়ে শাসন ও সংলগ্ন এলাকাগুলিকে শুটিংয়ের জন্য বেছে নিয়েছিলেন বাংলা-হিন্দি ছবির প্রথমসারির পরিচালকেরা। শাসন তথা বারাসত ২ ব্লকের দাদপুর, ফলতি-বেলিয়াঘাটা, কীর্তিপুর ১ ও ২, রোহন্ডা চণ্ডীগঢ়, কেমিয়া-খামারপাড়ার মতো জায়গার মানুষ ভোলেননি সে সব স্মৃতি।

উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, অমিতাভ বচ্চনকে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ডায়লগ বলতে দেখেছে কামদুনি। শরৎচন্দ্রের গৃহদাহ উপন্যাস নিয়ে তৈরি সিনেমায় উত্তম-সুচিত্রা, কিংবা নরেন্দ্রনাথ মিত্রের গল্প ‘রস’ অবলম্বনে তৈরি ‘সওদাগর’ সিনেমায় অভিনয় করতে দিনের পর দিন অমিতাভ বচ্চন, নূতনরা থেকেছিলেন এই সব এলাকায়। এখনও বৃদ্ধ মানুষদের স্মৃতিতে সে সব অভিজ্ঞতা ফিরে ফিরে আসে। শীতের রাতে আগুন জ্বালিয়ে হাত সেঁকে নিতে নিতে কেউ কেউ বলে ওঠেন, ‘‘সে বার বচ্চন খেজুর গাছে উঠতে গিয়ে কী কাণ্ডটাই না বাধিয়েছিল, মনে পড়ে?’’ হো হো হাসিতে বৃদ্ধেরা ফিরে যান লম্বা জুলপি আর বেলবটম প্যান্টের দিনগুলিতে।

তারপরের বছরগুলো অবশ্য শুধুই বোমা-বারুদের গন্ধ আর বাইক বাহিনীর দাপাদাপির সাক্ষ্য বহন করে। কিন্তু আতঙ্কের সেই দিনে-রাতেও প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে নিজেকে সাজিয়ে রাখতে ভোলেনি। যে কারণে ইদানীং আতঙ্কের রেশ কমে আসা শাসনে ফিরছে পিকনিকের দল।

তৈরি হয়েছে কিছু বাগানবাড়ি। কেমিয়া খামারপাড়ার কলুপাড়া, কীর্তিপুর ২ নম্বরের পার-খড়িবাড়ি এলাকায় বিশাল উঁচু পাঁচিল দেওয়া সেই সব বাগনবাড়ি চোখে পড়বে। তৈরি হচ্ছে নতুন পিকনিক স্পটও। শুধু কী তাই, ভেড়ির পাশে খোলা জায়গাতেও দিব্যি চলছে চড়ুইভাতি। আমিনপুর ও খড়িবাড়ির মাঝে বড়পোল, ছোটপোল এলাকায় ভেড়ির দু’পাশে বসছে ছোট-বড় পিকনিকের আসর। খড়িবাড়ি থেকে লাঙলপোঁতা পর্যন্ত ভেড়ির দু’পাশে শীত পড়তে না পড়তেই পিকনিক পার্টি চলে আসে, জানালেন স্থানীয় মানুষ।

শাসনে শিশু উদ্যানের পাশে বনভোজনের জায়গা তৈরির কাজ চলছে জানালেন শাসনের প্রধান সাহারা পরভিন বিবি। ভুবনপুরেও চলছে পিকনিক গার্ডেনের কাজ। খড়িবাড়ি থেকে দু’পাশে ভেড়ির মধ্যে দিয়ে ৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে যেতে হবে ভুবনপুরে। বিদ্যাধরীর শাখা নদীর পাশেই ভুবনপুরের তিন দিকেই জলাশয়। প্রায় দ্বীপের মতো ১০ বিঘে জমিতে তৈরি হচ্ছে পিকনিক গার্ডেন। কীর্তিপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েতের প্রধান শেখ মোফাজ্জেল আলি বলেন, ‘‘একশো দিনের প্রকল্পে মাটি ভরাট করে সৌন্দর্যায়ন হয়েছে। এক পাশের একটি জলাশয়ের মাটি কেটে নিচু এলাকা ভরাট করে সমান করা হয়েছে।’’ আরও ২০ হাজার গাছ লাগিয়ে পিকনিকের পরিবেশ তৈরি করা হবে বলে জানালেন প্রধান।

পর্যটনের সম্ভাবনা আরও আছে, বলছেন মানুষ। তেহাটা এলাকায় তিনটি নদী চলে গিয়েছে হাড়োয়া, হাড়োয়া খাল এবং বেলিয়াঘাটার দিকে। এই এলাকাটিও নয়নাভিরাম। বেলিয়াঘাটা স্টেশন-সংলগ্ন এলাকা, চোলপুর, ষণ্ডালিয়া, কামদুনির বড়বিল, মাটিয়াগাছা এলাকাগুলিতেও চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক শোভা। এই সব এলাকাতেও একই রকম ভাবে পিকনিক স্পট, বাগানবাড়ি তৈরি করে পর্যটক টানা যাবে বলে মনে করেন বাসিন্দারা। কাজ চলছে অনেক এলাকায়। আরও কিছু ভাবনাচিন্তা আছে বলেও জানালেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি রহিমা বিবি।

বারাসত ২ ব্লক এলাকার তরুণ প্রজন্মের নূর মহম্মদ, আলি জাফর, নুরুল শেখরা ইদানীং আফসোস করেন, আবার কেন শুটিং হচ্ছে না এখানে। এই যুবকদের কথায়, ‘‘বাবা-কাকাদের কাছে বচ্চন, উত্তমকুমারদের গল্প শুনি। আমাদের কপালে অন্তত জিৎ-দেবের শুটিং তো জোটা উচিত!’’

বাংলা ছবির পরিচালকেরা আর একবার ভেবে দেখবেন নাকি?

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arunaksha Bhattacharya shasan film
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE