নজরদারির-অভাব: হেলমেট পরেই এটিএমে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
হেলমেটের মধ্যে কানে গোঁজা মোবাইল ফোন। বাইক থামিয়ে কথা বলতে বলতেই এটিএমের ভিতরে ঢুকে পড়লেন এক যুবক। টাকা গুনতে গুনতে বেরিয়ে এলেন। তখনও মাথায় হেলমেট। ঘটনাস্থল শ্যামনগরের ফিডার রোড।
জানতে চাওয়া হল, হেলমেট মাথায় এটিএম কাউন্টারে ঢুকলেন কেন? হেলমেট খুলে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইলেন তিনি। বললেন, ‘‘কেন, হেলমেট পরে ঢোকা যায় না? আসলে ফোনে কথা বলছিলাম তো। আর মোবাইলটা হেলমেটে আটকানো ছিল বলে ঢুকে পড়েছিলাম।’’ পাল্টা প্রশ্ন যুবকের— ‘‘কই, কোথাও তো লেখা নেই, হেলমেট পরে ঢোকা যাবে না?’’
এটিএম জালিয়াতি নিয়ে উত্তাল কলকাতা। বেশ কিছু এলাকার রক্ষীবিহীন এটিএম যন্ত্রে স্কিমিং যন্ত্র বসিয়ে নকল কার্ড তৈরি করে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে অ্যাকাউন্ট থেকে। এই পরিস্থিতিতেও ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে সিংহভাগ এটিএম রক্ষীবিহীন। এমনকী, এটিএমের দরজা বা অন্য কোথাও লেখাও নেই, হেলমেট, হনুমান টুপি, মাস্ক বা মুখঢাকা কিছু পড়ে এটিএমে ঢোকা যাবে না। অথচ নিয়ম কিন্তু তাই বলে। এটিএমে ঢুকে ফোনে কথা বলারও নিয়ম নেই। যে সব এটিএমে রক্ষী রয়েছে, সেখানে এমন ঘটনার দিকে সজাগ নজর থাকে। ব্যাঙ্কের শাখা-সংলগ্ন এটিএম ছাড়া অন্যান্য এটিএম কার্যত রক্ষীবিহীন পড়ে থাকে ২৪ ঘণ্টা। ফলে এই ধরনের জালিয়াতি যদি ঘটে, তা হলে আটকানোর কোনও রাস্তাই কার্যত নেই। তার ফলে আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা। নৈহাটির স্টেশন রোড এলাকার বাসিন্দা শ্রীকুমার সরকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। বললেন, ‘‘এখন আর ব্যাঙ্কে যেতে পারি না। টাকা তোলার কাজটা এটিএমেই সারি। অনেক সময়ে সমস্যায় পড়লে অনেকে এগিয়ে এসে সাহায্যও করেন। কিন্তু এখন এই যদি অবস্থা হয়, তা হলে কে কখন কার্ডের তথ্য চুরি করে নকল কার্ড বানিয়ে নেবে— ঠিক নেই। আবার সাহায্যের নামে যাঁরা এগিয়ে আসেন, তাঁদের সকলেই যে বিশ্বাসী হবে, তারও তো নিশ্চয়তা নেই।’’ তাঁর দাবি, তাঁদের মতো বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের কথা ভেবে রক্ষী নিয়োগ করা হোক এটিএমগুলিতে।
কাঁচরাপাড়ার বাগ মোড়ের বাসিন্দা সুপ্রিয় চক্রবর্তী জানান, আগে এলাকার বেশ কয়েকটি এটিএমে রক্ষী ছিল। বছর তিনেক আগে সব ক’টি থেকে রক্ষী তুলে নেওয়া হয়। তারপর থেকে নানা ঝামেলা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘মাস ছয়েক আগে একবার এটিএমের ভিতর থেকে আমার তোলা টাকা ছিনতাই করে নিয়েছিল দুই দুষ্কৃতী।’’
ইছাপুর বাদামতলার বাসিন্দা তুষার নাথের কথায়, ‘‘মাস দু’য়েক আগে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ এটিএমে গিয়েছিলাম টাকা তোলার জন্য। দেখি দুই যুবক অনেকক্ষণ ধরে এটিএম যন্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু করছে।
প্রথমে ভেবেছিলাম টাকা তুলছে। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে তারা না বেরোনোয় আমি ভিতরে ঢুকে জিজ্ঞাসা করি। দু’জনেই হেলমেট পরে ছিল। আমি প্রশ্ন করা মাত্রই বেরিয়ে যায় দু’জন। তারপরে আর ওই এটিএম থেকে টাকা তুলিনি।’’
এ রকম অসংখ্য অভিজ্ঞতা রয়েছে শিল্পাঞ্চলের বহু বাসিন্দারা। কমিশনারেটের পুলিশ বলছে, রাতের দিকে এটিএমগুলির সামনে পুলিশ টহল দেয়। কিন্তু ব্যাঙ্কগুলিকেও তারা জানিয়েছে, যাতে এটিএমগুলিতে রক্ষী নিয়োগ করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy