Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ছেলে জিন্সের প্যান্ট চেয়েছিল, চোখে জল মায়ের

ঘটনাস্থল অশোকনগর থানার সেনডাঙা এলাকার আনন্দপাড়া। পাড়ায় এ বার কোনও পুজোর আলো জ্বলেনি। অন্য বার পাড়া আলো দিয়ে সাজানো হয়। মাইকে ভেসে আসে ঢাকের আওয়াজ। এ বার সে সব বন্ধ।

ছেলের ছবি হাতে মা সোমা বিশ্বাস। ছবি: শান্তনু হালদার

ছেলের ছবি হাতে মা সোমা বিশ্বাস। ছবি: শান্তনু হালদার

সীমান্ত মৈত্র
অশোকনগর শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:০২
Share: Save:

অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ছেলে অরূপ মায়ের কাছে আবদার করে বলছিল, ছেঁড়া-ফাটা এক রকম খুব কায়দার জিন্সের প্যান্ট বেরিয়েছে মা, ওটা কিনে দিও। মাথায় হাত বুলিয়ে মা কথা দিয়েছিলেন, তাই হবে। কিন্তু কথা রাখতে পারেননি মা।

সেই যন্ত্রণায় মা সোমা বিশ্বাস থেকে থেকে ডুকরে উঠছেন। মঙ্গলবার সকালে নিজের বাড়িতে বসে বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে, এই বুঝি ছেলে এসে গলা জড়িয়ে ধরে বলবে, মা চলো, দোকান থেকে জিন্স কিনে আনি।’’ চোখ জলে থেমে যাচ্ছিল মায়ের কথা। পুজোর কেনাকাটার কথা বাড়িতে কেউ ভাবেইনি।

কয়েক মাস আগের কথা। বিকেলে বাড়ির কাছেই বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছিল অরূপ। একটি মুরগি খামারের হুকিংয়ের তারে জড়িয়ে মৃত্যু হয় তার। সঙ্গে মারা যায় তার বন্ধু ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়ারা শুভমিতা শীলও।

ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতা ওই খামার-সহ কয়েকটি খামার ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। কয়েকটি বাড়িও ভাঙচুর করে। কয়েকজন গ্রেফতার হয়।

বিদ্যুতের তারে জড়িয়েও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে গণেশ বিশ্বাস। এখনও মানসিক ধাক্কাটা এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক হতে পারেনি ছেলেটি। চিকিৎসকের পরামর্শে তার আত্মীয়-স্বজনেরা গ্রাম থেকে দূরে মামার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রেখেছেন।

ঘটনাস্থল অশোকনগর থানার সেনডাঙা এলাকার আনন্দপাড়া। পাড়ায় এ বার কোনও পুজোর আলো জ্বলেনি। অন্য বার পাড়া আলো দিয়ে সাজানো হয়। মাইকে ভেসে আসে ঢাকের আওয়াজ। এ বার সে সব বন্ধ। আবড়ির কাছে সেনডাঙা বাজারে অবশ্য পুজো হচ্ছে। সেই পুজোর মাইক এ বার আনন্দপাড়ার মুখে দেওয়া হয়নি।

মঙ্গলবার গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, শুভমিতার বাড়িতে কেউ নেই। বাবা শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাস রোজকার মতো ভিক্ষে করতে বেরিয়েছেন। অরূপের বাবা আশুতোষবাবু পেশায় রাজমিস্ত্রি। ছেলের মৃত্যুর পর থেকে কাজকর্ম সব বন্ধ। স্ত্রী সোমাদেবী অসুস্থ। ঘুমের মধ্যেও আঁতকে উঠছেন। খাওয়া-ঘুম সব উড়ে গিয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে সোমাদেবী বলছিলেন, ‘‘ছেলে গত বার পুজোয় টাকা দিয়েছিল। সেই টাকা দিয়ে বাড়ির সকলের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিল। ও কখনও একা খাবার খেত না। খেলতে বেরিয়েও বাড়িতে এসে আমাকে দেখে যেত। ছেলেই যখন নেই তখন পুজো ঠাকুর দেবতা এ সবের আর কোনও মানে খুঁজে পাচ্ছি না।’’

আশুতোষবাবুর কথায়, ‘‘ছেলে হারানো ব্যথা নিয়ে পুজো আর ভাল লাগছে না।’’

গ্রামের মহিলা অনিতা মণ্ডল বলছিলেন, ‘‘আমাদের সকলেরই মন খারাপ। ওদের কথাই শুধু মনে পড়ছে। পুজোটা সকলেরই বিষণ্ণ কাটছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE