—ফাইল চিত্র।
বনগাঁ শহরের চাঁপাবেড়িয়া এলাকার বাসিন্দা বছর চৌষট্টির প্রভাবতী চক্রবর্তী। লকডাউনের মধ্যে মূত্রের সংক্রমণ ও উচ্চ রক্তচাপে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি না করে ঝুঁকি নিয়ে ফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়। সেই মতো চিকিৎসা হয় তাঁর। বনগাঁর দেবগড় এলাকার বাসিন্দা সত্তর বছরের বৃদ্ধ নন্দলাল বসু। শ্বাসকষ্ট ও মূত্রের সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল। একটি ল্যাবরেটরি মালিককে দেখিয়ে চিকিৎসা করান তিনি।
সকলেরই সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। অন্য সময় হলে তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করাতেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় কেউই হাসপাতালমুখো হননি।
এখনও অনেক অসুস্থ রোগী হাসপাতাল যেতে চাইছেন না। আর সে জন্যই বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল বা বনগাঁ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের শয্যা ফাঁকা রয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা ৬০০। কিন্তু এখন রোগী ভর্তি থাকছে প্রায় ২৫০ জন। পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে শয্যার সংখ্যা ২০০টি। একমাত্র প্রসূতি ও সিজার ওয়ার্ডে আগের মতোই রোগী ভর্তি রয়েছে। হাসপাতাল সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘সাধারণত অন্য বছরগুলিতে বছরের এই সময়ে প্রায় ৭০০ রোগী ভর্তি থাকেন।’’ শঙ্কর আরও বলেন, ‘‘লকডাউনের জন্য মহকুমার দূরদূরান্ত থেকে যানবাহনের কারণে রোগীরা আসতে পারছেন না। অনেকে অসুস্থ হলেও করোনাভাইরাসের ভয়ে হাসপাতালে আসছেন না।’’ তিনি জানান, একমাত্র খুবই জরুরি অবস্থা তৈরি না হলে কেউই হাসপাতালের চৌকাঠ মাড়াতে চাইছেন না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও রোগী ভর্তি হলেও একটু সুস্থ হলেই মুচলেকা দিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি কোনও রোগীকে বারাসত জেলা হাসপাতালে বা কলকাতার হাসপাতালে রেফার করা হলেও বেশির ভাগ রোগীর আত্মীয় করোনার ভয়ে বন্ড সই করে এখানেই চিকিৎসা করাচ্ছেন।
দিন কয়েক আগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তি করোনা পজ়িটিভ হন। তারপর তিন দিন পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডটি বন্ধ রাখা হয়েছিল। তারপর থেকে রোগীরা আরও আসতে চাইছেন না।
বহির্বিভাগেও রোগী আসা কমেছে অনেকটাই। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য বছর এই সময়ে বহির্বিভাগে রোজ প্রায় দেড় হাজার রোগী চিকিৎসক দেখাতে আসেন। এখন রোজ রোগী আসছেন মাত্র ২৫০ জনের মতো। হাসপাতাল সুপার বলেন, ‘‘হাসপাতালের সব ক’টি ওয়ার্ড খোলা আছে। চিকিৎসকেরা পরিষেবা দিচ্ছেন। রক্ত পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাফি এক্স র- সবই হচ্ছে। রোগীরা এখানে সম্পূর্ণ নিরাপদ। অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’’
হাসপাতালের ৭০ জন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পিপিই কিট, এন-৯৫ মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার সবই মজুত আছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের কেউ কেউ জানালেন, চিকিৎসকেরা দূর থেকে রোগী দেখছেন। এখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বা দেখিয়ে রোগীরা চিকিৎসা করাচ্ছেন। ওষুধের দোকান থেকেও ওষুধ কিনে খাচ্ছেন মানুষ। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের কাছেও ভিড় বাড়ছে। পল্লি চিকিৎসকদের কদর বেড়েছে গ্রামে গ্রামে। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের বনগাঁ শাখার সম্পাদক, চিকিৎসক আশিসকান্তি হীরা বলেন, ‘‘এমন অনেক রোগী দেখাতে আসছেন, যাঁদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু তাঁরা হাসপাতালে যেতে চাইছেন না। ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের চিকিৎসা করতে হচ্ছে। নার্সিংহোমে ভর্তি করতে হচ্ছে।’’ বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জ এলাকায় ওষুধের দোকান রয়েছে অপূর্ব দাসের। তাঁর ফার্মাসিস্ট কোর্স করা আছে। তাঁর কাছে রোগীরা এসে জোরাজুরি করে ওষুধ নিচ্ছেন বলে দাবি অপূর্বর।
রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা জানান, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভিন্ রাজ্য থেকে উপসর্গ নিয়ে আসা মানুষ যাতায়াত করছেন। সেখানে তাঁদের লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছে পরীক্ষার জন্য। তা ছাড়া, মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় উপসর্গ থাকা মানুষদের এখানে লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীও করোনা পজ়িটিভ হয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই হাসপাতালে গেলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy