বিশ্বজিৎ দাস। —নিজস্ব চিত্র
১২ জন কাউন্সিলরের বিমান যাত্রার ছবি ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তা নিয়েই এখন আলোচনা চলছে বনগাঁর পথেঘাটে।
বনগাঁ পুরসভার বিদ্রোহী কাউন্সিলরদের মধ্যে ১২ জনের দলত্যাগের সম্ভবনা নিয়ে এখন সরগরম জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। এক সূত্রের খবর, পুরসভার বারো জন তৃণমূল কাউন্সিলর রবিবার রাতে দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁদের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার খবর কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে।
৭-৮ জুনে পুরসভার ১৪ জন তৃণমূল কাউন্সিলর পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়েছেন। দলের জেলা নেতৃত্বের কাছেও কাউন্সিলররা দাবি করেছিলেন, পুরপ্রধানের পদ থেকে দ্রুত শঙ্করকে অপসারণ করতে হবে। তারপরে কেটে গিয়েছে কয়েকটাদিন। কিন্তু দলের পক্ষ থেকে পুরপ্রধানকে সরে যাওয়ার কোনও নির্দেশ না দেওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছিল বিদ্রোহী কাউন্সিলরদের মধ্যে। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে কাউন্সিলরদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পুরপ্রধানের অপসারণের বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে কাঁচরাপাড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর সভায় গিয়েছিলেন বনগাঁ উত্তরকেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। সেখানে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও কাউন্সিলরদের অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। ১৫ জুন রাতে কাউন্সিলররা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, এ বার তাঁরা বিকল্প পদক্ষেপ করবেন। সেই মতো তাঁরা রবিবার দিল্লি গিয়েছেন। এ দিকে ওই দিন রাতেই জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, ‘‘পুরপ্রধানকে পদ থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে বলা হয়েছে সোমবারের মধ্যে তাঁর পদত্যাগপত্র উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছে পাঠিয়ে দিতে।’’
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, কাউন্সিলরদের দিল্লি যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই তড়িঘড়ি দল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে রবিবার রাত থেকে নেতার যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে এক সূত্রের খবর। কারণ, তাঁদের মোবাইল বন্ধ। মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনও উত্তর আসেনি। এবং কাউন্সিলররা কোথাও কোনও মন্তব্যও করেননি।
চোদ্দো জন কাউন্সিলর অনাস্থা আনলেও দিল্লি গিয়েছেন বারো জন। উপ পুরপ্রধান কৃষ্ণা রায় ও তাঁর বৌমা কাউন্সিলর টুম্পা রায় বাড়িতেই রয়েছেন। কৃষ্ণা বলেন, ‘‘পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে কাউন্সিলররা যে অনাস্থা এনেছে, তাতে আমরা সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু ওই কাউন্সিলররা কোথায় গিয়েছেন, তা আমরা জানি না। আমরা তৃণমূলে ছিলাম, তৃণমূলেই থাকব।’’ কাউন্সিলরদের পাশাপাশি বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকে নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে জেলা তৃণমূলের অন্দরে। কারণ রবিবার থেকে তাঁরও মোবাইল বন্ধ। জেলা নেতৃত্বের কেউ তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেননি। দলের বিধায়ক কাউন্সিলরদের পাশাপাশি বিধায়কও পা বাড়াচ্ছেন না তো—এ নিয়ে জোর জল্পনা চলছে তৃণমূল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে।
বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গে বিশ্বজিতের সুসম্পর্কের কথা জেলা রাজনীতির বহুদিনের আলোচ্য বিষয়। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘সোমবার শঙ্কর আমার কাছে তাঁর পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে গিয়েছেন। কাউন্সিলর এবং বিধায়ককে বলব, তাঁরা যেখানেই থাকুন দ্রুত ফিরে আসুন। কারণ, কাউন্সিলরদের দাবি, আমরা মেনে নিয়েছি।’’ এ বিষয়ে বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘জেলার অনেক কাউন্সিলর বিধায়ক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সবাই দলে আসতে চান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy