Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নাম ধরে ডাকলেই জল থেকে ভেসে ওঠে কালী

পরিবারের সদস্যেরা জানালেন, বাড়ির ছেলের মতোই যত্ন করা হয় কালীকে। দুপুরবেলা পুকুরপাড়ে কালীকে ভাত দেওয়া হয়। পাড়ে গিয়ে নাম ধরে ডাকলেই ঘাটের কাছে এসে ভাত খেয়ে যায় কালী।

আদর: দাসবাড়ির সদস্যই হয়ে উঠেছে এই কচ্ছপ। নিজস্ব চিত্র

আদর: দাসবাড়ির সদস্যই হয়ে উঠেছে এই কচ্ছপ। নিজস্ব চিত্র

নবেন্দু ঘোষ
বসিরহাট শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০৮
Share: Save:

প্রায় চল্লিশ বছর আগে জমিতে চাষ করতে গিয়ে আলের ধারে ছোট্ট একটা কচ্ছপের ছানা পান হাসনাবাদের মহিষপুকুরের বাসিন্দা দিলীপ দাস। দেশলাই বাক্সে ভরে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তারপর থেকে এখনও দিলীপের পরিবারেই রয়েছে কচ্ছপটি। বাড়ির পাশের পুকুরে একটু একটু করে বড় হয়ে উঠেছে। পরিবারের লোকজন তাকে ডাকেন ‘কালী’ বলে। কালী এখন বাড়িরই সদস্য। কালীর জন্যই এলাকাটি পরিচিত হয়ে উঠেছে ‘কাটা কচ্ছপ পুকুরপাড়’ নামে।

পরিবারের সদস্যেরা জানালেন, বাড়ির ছেলের মতোই যত্ন করা হয় কালীকে। দুপুরবেলা পুকুরপাড়ে কালীকে ভাত দেওয়া হয়। পাড়ে গিয়ে নাম ধরে ডাকলেই ঘাটের কাছে এসে ভাত খেয়ে যায় কালী। এক সময়ে প্রায়ই কালীকে জল থেকে তুলে আনা হত। এখন অবশ্য কলেবরে বেশ নাদুসনুদুস সে। ওজন প্রায় তিরিশ কেজি ছুঁই ছুঁই। পরিবারের এক সদস্যের কথায়, ‘‘বাচ্চা বড় হয়ে গেলে যেমন আর কোলে নেওয়া যায় না, আমাদের কালীও এখন সে রকম বড় হয়ে গিয়েছে। জল থেকে তুলতে কষ্ট হয়।’’

ভাত ছাড়াও কলাপাতা, সজনে গাছের পাতা পুকুরে দেওয়া হয় কালীর জন্য। অসুস্থ হলে চিকিৎসক, ওষুধের ব্যবস্থা হয়। বাড়ির সদস্য ঝর্না দাস বলেন, ‘‘সম্প্রতি ওর গালে ঘা হয়েছে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে। এখন কিছু দিন শক্ত খাবার দেওয়া হচ্ছে না।’’ পুকুরটিকে ঘিরে রাখার কোনও ব্যবস্থা নেই। কিন্তু তবুও কালী এই পুকুর ছেড়ে অন্যত্র যায় না। পাড়া পড়শিরাও তাকে ভালবেসে ফেলেছেন। দাস পরিবারের সদস্যদের দাবি, রাতের অন্ধকারে একবার কালীকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল কেউ। বেশ কিছু দিন পুকুরে ছিল না। পরে অবশ্য আবার তাকে ছেড়ে দিয়ে যাওয়া হয়।

কালীকে দেখতে দূরদূরান্ত থেকে অনেকে ভিড় করেন। বাড়ির ছেলে নিপুল দাস বললেন, ‘‘হাসনাবাদ, খুলনা, বসিরহাটের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসেন আমাদের কালীকে দেখতে।’’ কয়েক বছর আগে বন দফতরের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে কয়েক জন ব্যক্তি কচ্ছপটিকে নিয়ে যেতে এসেছিল। তবে তাদের ভুয়ো পরিচয় ফাঁস হয়ে যায়!

বাড়ির কর্তা মধু দাস বলেন, ‘‘কচ্ছপটির প্রতি আমাদের মায়া পড়ে গিয়েছে। ওকে খুব ছোট্ট অবস্থায় পেয়েছিলাম। সে দিন থেকেই আমাদের পরিবারের এক জন হয়ে উঠেছে। আমরা শুনেছি কচ্ছপ অনেক দিন বাঁচে। একদিন আমরা থাকব না। কিন্তু আমার ছেলেপুলে-নাতি-নাতনিরা ওর দেখভাল করবে।’’

কিন্তু বন্যপ্রাণ আইন দেখিয়ে কেউ যদি কচ্ছপটি নিয়ে যেতে চান?

পরিবারের সকলে রে রে করে উঠে বলেন, ‘‘এখান থেকে ওকে কিছুতেই নিয়ে যেতে দেব না। আমরা তো ওকে কষ্ট দিচ্ছি না। লালন-পালনই করছি।’’ স্থানীয় পাটলি খানপুর পঞ্চায়েতের প্রধান পারুল গাজি বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনে কী আছে জানি না, তবে ওঁরা সন্তান-স্নেহে কচ্ছপটিকে বড় করে তুলছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tortoise Pet Tortoise
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE