Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আর্সেনিকযুক্ত জলেই মিড ডে মিল

আর্সেনিক যুক্ত জল পান ও তাতেই বাচ্চাদের খাবার রান্না হওয়ায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা। তাঁদের দাবি, খাবার জল না হয় বাড়ি থেকে পাঠানো যায় কিন্তু শিশুদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে মিড-ডে মিল রান্না বন্ধ করে দেওয়া হোক। সহমত শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দরবারও করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু টনক নড়েনি প্রশাসনের।

বিকল ওয়াটার এটিএম। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

বিকল ওয়াটার এটিএম। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮ ০৮:০০
Share: Save:

স্কুলের পানীয় জলের কলে মিলেছিল বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক। বিষয়টি জানাজানি হতেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে বছর তিনেক আগে বসানো হয়েছিল আর্সেনিক মুক্ত জলের কল। পুরনো কলের ‘বিষ জল’ যাতে কেউ পান না করে সে জন্য স্কুলের দেওয়ালে সেঁটেও দেওয়া হয় ‘আর্সেনিক জল পানের কুফল’ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু সাত মাস ধরে নতুন কলগুলি বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। মেরামতির অভাবে আর্সেনিকযুক্ত পুরনো কলের জলই পান করছে পড়ুয়ারা। ওই জলেই রান্না হচ্ছে মিড-ডে মিলও। এমনই ছবি দেগঙ্গা আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

আর্সেনিক যুক্ত জল পান ও তাতেই বাচ্চাদের খাবার রান্না হওয়ায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা। তাঁদের দাবি, খাবার জল না হয় বাড়ি থেকে পাঠানো যায় কিন্তু শিশুদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে মিড-ডে মিল রান্না বন্ধ করে দেওয়া হোক। সহমত শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দরবারও করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু টনক নড়েনি প্রশাসনের।

সরকারি সমীক্ষাই বলছে, এ রাজ্যে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জলে আর্সেনিকের মাত্রা প্রবল। আর্সেনিক দূষণে আক্রান্তের সংখ্যাও অনেক, মারাও গিয়েছেন প্রায় শ-দে়ড়েক মানুষ। ‘আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটি’র রাজ্য সম্পাদক অশোক দাস বলেন, ‘‘উত্তর ২৪ পরগনার ২২টি ব্লকই আর্সেনিক-প্রবণ। তার মধ্যে দেগঙ্গায় আর্সেনিকের মাত্রা সর্বাধিক।’’ অশোকবাবুর সংযোজন, ‘‘সেই দেগঙ্গায় সরকারি স্কুলে এমন চিত্র ভয়ানক ব্যাপার। এতে বাচ্চাদের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।’’

পুরনো কল থেকেই আর্সেনিকযুক্ত জল খাচ্ছে পড়ুয়ারা।

ওই স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, নতুন কল থেকে জল পড়ছেই না। হাত-পা ধোওয়ার জন্য রাখা পুরনো কলের মুখে হাত পেতে আর্সেনিক-জল পান করছে রোকেয়া খাতুন, সায়ন কর্মকার, দেবপ্রিয় চৌধুরী, তিলক নাথের মতো ছোট-ছোট পড়ুয়ারা। রায়হান হক নামে এক ছাত্র বলে, ‘‘আমাদের এই কলের জল খেতে মানা। বলেছিল, এই জলে আর্সেনিক আছে। কিন্তু ভাল জলের কলটা তো খারাপ।’’ ওই স্কুলে ২৩০ জন পড়ুয়া রয়েছে। ‘বিষ জল’-এর ভয়ে স্কুলে আসা বন্ধ করেছে অনেকে। স্কুল সূত্রে খবর, তিন বছর আগে আধুনিক প্রযুক্তির আর্সেনিক মুক্ত কলটি বসানোর পরে এক বছর রক্ষণাবেক্ষণ করেছিল একটি ঠিকা সংস্থা। তার পরে তারা আর দেখভাল করে না, কলগুলিও এখন সম্পূর্ণ বিকল।

ওই স্কুলের শিক্ষক আলমগির হোসেন বলেন, ‘‘বাচ্চাদের কত নিষেধ করব, তেষ্টা পেলে ওই আর্সেনিক-জলই খেয়ে নিচ্ছে। মিড-ডে মিল রান্নার জন্যও অনেক জল লাগে, তা-ও পুরনো কল থেকেই নেওয়া হচ্ছে। এ ভাবে চলতে পারে?’’ হোসেনারা পরভিন নামে এক শিক্ষিকার প্রশ্ন, ‘‘যে ভাবে বাচ্চাদের শরীরে আর্সেনিকের বিষ ঢুকছে তাতে তাদের কোনও রোগ দেখা দিলে তার দায় কে নেবে?’’

কার্যত অসহায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরূপ মৈত্রও। তিনি বলেন, ‘‘কল মেরামতির জন্য প্রশাসন থেকে বিদ্যালয় পরিদর্শক সব জায়গায় আবেদন করেছি, সমাধান হয়নি। স্কুল তো আর বন্ধ করে দিতে পারি না।’’ দেগঙ্গা সার্কেলের বিদ্যালয় পরিদর্শক শাহনওয়াজ আলম বলেন, ‘‘বিষয়টি জানতে পেরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি।’’ তবে জেলাশাসক অন্তরা আচার্য সোমবার আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ আবেদন-আশ্বাসের এমন জাঁতাকলের মাঝে পড়ে খুদে পড়ুয়ারা অবশ্য বিষ জল পান করেই চলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student Mid day meal Arsenic Water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE