বুধবার রাতে অফিসে করে আর বাড়ি ফেরেননি বনগাঁর উত্তম দাস। দমদমের একটি সরকারি অফিসে চাকরি করেন তিনি। বুধবার রাতে অফিসেই থেকে গিয়েছেন।
ডায়মন্ড হারবারের স্বরূপ মণ্ডলও কলকাতায় কাজ করেন। বৃহস্পতিবার অফিস না গেলেই নয়। তাই দক্ষিণ কলকাতায় এক আত্মীয়ের বাড়িতেই রাতটা কাটাবেন।
সকলের একটাই দুশ্চিন্তা, তৃণমূলের সমাবেশের জন্য পথঘাটে বাস চলবে তো? চললেও ভিড়ঠাসা সেই যানবাহনে ওঠা যাবে তো? এটা ঘটনা, সভার জন্য তুলে নেওয়া হয়েছে বহু বাস। ট্রেনেও ঠাঁই নেই। তৃণমূলের সমাবেশের আগের দিন, বুধবার উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় দেখা মিলল এমনই ছবি। নিত্যযাত্রীদের আশঙ্কা, সমাবেশের আগের দিনই যদি বাসের সংখ্যা কমে যায় এবং ট্রেনে জায়গা পেতে কসরত করতে হয় তা হলে আজ, বৃহস্পতিবার সমাবেশের দিন কী হবে?
যদিও তৃণমূল নেতাদের দাবি, অন্য দিনের তুলনায় বাস কম চলবে ঠিকই, তবে যাতায়াতের জন্য বাস মিলবে। বাম আমলেও শাসক দলের সমাবেশ থাকলে রাস্তায় যাত্রিবাহী বাসের দেখা মিলত না বললেই চলে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেও ছবিটা বদলায়নি বললেই চলে। দলের জন্মলগ্ন থেকেই ২১ জুলাইকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করছে তৃণমূল। যা দলের বাৎসরিক কেন্দ্রীয় সমাবেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছরই এই দিন বাস, ছোট গাড়ি, ম্যাটাডর বোঝাই করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মী-সমর্থকদের কলকাতায় আনা হয়। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিপুল জয়ের পরে এ বারের একুশের সমাবেশ দলের বিজয় সমাবেশও বটে। তাই জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রাও বেশি। ফলে জেলার প্রতিটি ব্লক থেকেই বাস, ছোট গাড়িও অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি তোলা হয়েছে বলেই জেলা বাস মালিক সংগঠনগুলি সূত্রে খবর। উত্তরবঙ্গ থেকে ট্রেন বুকিংয়েরও খবর মিলেছে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘আমাদের জেলা থেকে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ ধর্মতলার সভায় যাবেন। তাঁদের অনেকেই ট্রেনে আসবেন।’’ তাঁর দাবি, জেলার কোনও বাস রুটকেই পুরো ফাঁকা রাখা হচ্ছে না। সংখ্যায় কম হলেও বাস মিলবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত জেলা বাস মালিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অশোক গায়েন জানান, জেলার বিভিন্ন রুটে প্রায় ৩০০০ বাস চলে। তার মধ্যে সভার জন্য প্রায় আড়াই হাজার বাস তুলে নেওয়া হয়েছে।
ক্যানিঙের তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, এই মহকুমা থেকে শ’খানেক বাস এবং ৫০টি ছোট গাড়ি ধর্মতলা যাবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সওকত মোল্লা বলেন, ‘‘ধর্মতলাগামী বাস, ম্যাটাডর, ছোট গাড়িতে লাগানোর জন্য ৩০০০ স্টিকার বিলি করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে খবর, স্টিকার ছাড়া আরও প্রায় ৫০০টি গাড়ি ধর্মতলা যাবে।’’
বুধবার যত রাত বেড়েছে তত লোকাল ট্রেনগুলিতে তৃণমূল সমর্থকদের ভিড় বেড়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সেই ভিড় উপচে পড়বে বলেই আশা করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ডায়মন্ড হারবার এবং কাকদ্বীপ মহকুমাতেও প্রায় সব রুট থেকেই বাস তুলে নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেসরকারি বাসের দেখা পাওয়া যাবে না বলেই আশঙ্কা করছেন নিত্যযাত্রীরা। ভরসা বলতে নামখানা-কলকাতা, পাথরপ্রতিমা-কলকাতা এবং কাকদ্বীপ-কলকাতা রুটের গুটিকয় সরকারি বাস।
বনগাঁ মহকুমার তৃণমূল নেতৃত্ব জানান, এ বার সমর্থকদের বড় অংশ ট্রেনে করে ধর্মতলা যাবেন। যাত্রীদের কথা ভেবে রুটের বাস কম তোলা হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন রুট থেকে প্রায় নব্বই শতাংশ বাস তুলে নেওয়ার হয়েছে একুশের সভার জন্য। স্থানীয় তৃণমূল সূত্রে খবর, মহকুমার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে দলীয় সমর্থকেরা জলপথে নৌকা এবং স্থলপথে ছোট গাড়ি করে প্রথমে বসিরহাট শহরে আসবেন। সেখান থেকে বাস এবং ট্রেনে করে ধর্মতলা। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের সাত-আটটি রুট থেকে বাস তোলা হয়েছে। জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি তথা নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘বাস যাত্রীদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। প্রথমে প্রাইভেট বাস এবং অন্যান্য যানবাহন নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও এত মানুষ সভায় যেতে আগ্রহী, যে আমরা রুটের বাস নিতে বাধ্য হয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy