থমকে: জমির সমস্যায় দেগঙ্গার আটকে আছে টাকি রোডের কাজ। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়
ট্রাকের দাপটে যানজট এখন নিত্যদিনের সমস্যা। যার জেরে নাজেহাল অবস্থা শহর কলকাতার। সেই যানজট কমাতে বনগাঁ ও বসিরহাট সীমান্তের পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের সুবিধার্থে রাজারহাটের নিউ টাউন থেকে তৈরি হচ্ছিল নতুন রাস্তা। কিন্তু জমি-জটের কারণে সেই রাস্তার কাজও মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এর আগে বারাসত থেকে বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত বাইপাস তৈরির টাকা পড়ে থেকে ফেরত চলে গিয়েছে। কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণও আমডাঙা এলাকায় জমি-জটে আটকে রয়েছে। গাছ কাটার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে যশোর রোড ও টাকি রোড সম্প্রসারণের কাজও এখন প্রশ্নের মুখে। এমন পরিস্থিতিতে নিউ টাউন থেকে রাজারহাট, খড়িবাড়ি হয়ে বারাসত-টাকি রোডের কাচকল পর্যন্ত চার লেনের রাস্তা তৈরির জন্য উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য সরকার। রাস্তার কাজ বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলেও দেগঙ্গায় তা থমকে গিয়েছে জমির সমস্যায়।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জমির মালিকেরা জমি রক্ষা কমিটি গড়ে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবিতে মিছিল-অবরোধে নেমেছেন। তাঁদের দাবি, রাস্তা হোক, তবে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দিয়ে। দেগঙ্গা ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক পার্থ লোধ বলেন, ‘‘প্রায় ৮০ জন কৃষক আবেদন জমা দিয়েছেন। জমির ক্ষতিপূরণ বা দামের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখছেন।’’
এই এলাকায় (চিহ্নিত) আটকে আছে টাকি রোডের কাজ।
প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি কলকাতা থেকে যশোর রোড দিয়ে পেট্রোপোল সীমান্তে যাতায়াত করে। তার জেরে ভিআইপি রো়ড ছাড়াও বিমানবন্দর, মধ্যমগ্রাম, বারাসতের যানজটে নাজেহাল হতে হয় অসংখ্য মানুষকে। এ বছরের গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে চার লেনের রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে তা অবশ্য ৫৬ ফুট চওড়া করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, নিউ টাউন থেকে শুরু হয়ে টাকি রোড থেকে এক দিকে বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্ত এবং অন্য দিকে বেলিয়াঘাটা থেকে সোহায় বাজার হয়ে গুমার খোশদেলপুরে যশোর রোডে মিশে সোজা বনগাঁর পেট্রোপোল সীমান্তে যাওয়ার কথা রাস্তাটির। সেই হিসেবে টাকি রোডের বেলিয়াঘাটা সেতু থেকে সোহায় হয়ে খোশদেলপুর পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে এপ্রিল মাসে।
দেগঙ্গার আরজিল্লাপুর বাজার থেকে মোহনপুর মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটার জমি ব্যক্তি-মালিকানাধীন সম্পত্তি। আবদুল মোহিত মল্লিক নামে এক জমি আন্দোলনকারী বলেন, ‘‘জমি সরকারকে দাম দিয়ে কিনতে হবে। রাস্তা সম্প্রসারণের কারণে যাঁরা বাস্তুহারা হবেন, তাঁদের পুনর্বাসন দিতে হবে। বাড়ি-ঘর ছাড়াও কবরস্থান, মসজিদ, দোকান— সবই চলে যাবে রাস্তা সম্প্রসারণে।’’ পক্ষীরানি সর্দার নামে এক বৃদ্ধা বলেন, ‘‘ভিটেটা চলে গেলে এই বয়সে কোথায় যাব?’’ সুনীল ঘোষ নামে এক জমি-মালিক বলেন, ‘‘জমির খাজনা আমরা সরকারকে দিই। সেই জমি রাস্তার জন্য সরকার নিতেই পারে। যথাযথ মূল্য দিলে আমরা লিখে দেব। কিন্তু টাকা না দিলে আমরা কেন জমি দেব?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy