খেলতে-খেলতে: অঙ্কের মজা কর্মশালায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
অঙ্ক পরীক্ষার আগের রাতে বুক ধড়ফড় করেনি, এমন পড়ুয়ার সংখ্যা কম নয়। কৈশোর পেরিয়ে যৌবনেও সেই ভীতির কথা ভোলেন না অনেকে। ‘ভয়ানক’ বিষয় হিসাবে অঙ্কের নাম বরাবর খারাপ। অথচ, যারা এই বিষয়ের স্বাদে মজেছে, তারাই জানে অঙ্ক কষতে ভয়ের কারণ নেই। বরং তাতে আনন্দ দেদার।
কিন্তু স্কুল জীবনের গোড়ার দিকেই বেশির ভাগ পড়ুয়ার মনে অঙ্ক নিয়ে ভয়টা মাটি কামড়ে বসে বলে অনেকেরই অভিজ্ঞতা। এই পরিস্থিতি কাটাতে সম্প্রতি কর্মশালা হল গাইঘাটার ঝাউডাঙা সম্মেলনী হাইস্কুলে।
বুধবার নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে ওই কর্মশালায় বনগাঁর গাঁড়াপোতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মনতোষ মিত্রও হাজির ছিলেন। তিনি অঙ্কের গবেষকও।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা অঙ্ক নিয়ে গল্পের ছলে অনেক কথা বলেছেন মনোতোষ। জটিল অঙ্কও কী ভাবে সহজে কষে ফেলা যায়, তার নানা কৌশল শিখিয়েছেন।
শিবির শেষে পড়ুয়ারা খুশি। অনেকেই জানাল, অঙ্কে এত মজা আছে, কই আগে তো কেউ বলেনি!
কিন্তু এমন কর্মশালা নিয়ে ভাবনা এল কেন?
স্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে, কিছু দিন আগে স্কুলের প্রথম সেমেস্টার পরীক্ষার ফল বের হয়। তাতে দেখা যায়, নবম-দশম শ্রেণির ২২০ জন পড়ুয়ার মধ্যে অনেকেই অঙ্কে কম নম্বর পেয়েছে। প্রায় ৮০ জনের মতো পড়ুয়া ২৫ শতাংশ কম পেয়েছে। যদিও অন্য বিষয়গুলিতে তাদের নম্বর তেমন খারাপ নয়। বরং অনেকে অন্য বিষয়ে ভাল নম্বরই পেয়েছে।
অঙ্কের এই হাল কেন, কারণ খুঁজতে বসেন প্রধান শিক্ষক অনুপম সর্দার। তিনি পড়ুয়া ও অভিভাবকদের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলেন। জানতে পারেন, অঙ্ক সম্পর্কে অনেক পড়ুয়ার মনেই ভয় রয়েছে। অঙ্কের নাম শুনলেই অনেকের পেট গুড়গুড়, বুক ধড়ফড় শুরু হয়। বিষয়টিকে ভালবাসা তো দূরের কথা, সম্পর্কটা যেন শুধু ভয়-ভীতিরই। যে কারণে, ক্লাসে বার বার বুঝিয়ে দিলেও অনেকে মাথায় নিতে পারে না।
অনুপম যোগাযোগ করেন মনতোষের সঙ্গে। তাঁকে স্কুলে কর্মশালার জন্য নিয়ে আসা হয়। অনুপম বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের মধ্যে থেকে যদি অঙ্ক সম্পর্কে ভয় কাটানো না যায়, তা হলে মাধ্যমিকে তাদের ফল খারাপ হবে। সে কারণেই এমন কর্মশালা।’’
বুধবার সকাল ১১টা থেকে কর্মশালা শুরু হয়। কিন্তু দুপুর দেড়টা পেরিয়ে গেলেও ছাত্রছাত্রীরা কেউ আসন ছেড়ে ওঠেনি। মাস্টারমশাইয়ের কাছে অনুরোধ করতে থাকেন, তিনি যেন আরও কিছুক্ষণ পড়াশোনা চালিয়ে যান। ভবিষ্যতে ফের তাঁর কাছে ক্লাস করতে চায় সকলে।
দশম শ্রেণির পড়ুয়া সুমনা ঘোষ, সায়ন বিশ্বাসেরা জানায়, ‘‘অঙ্কও যে এত আকর্ষণীয় হতে পারে, এত সহজ হতে পারে, এই কর্মশালায় না এলে বুঝতেই পারতাম না। গল্পের মতো করে উনি আমাদের অঙ্ক শিখিয়েছেন। অঙ্কের প্রতি আগ্রহ অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমরা চাই এমন শিবির আরও হোক।’’
কী বলছেন মনতোষ?
তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষকেরা অঙ্কের সমাধান করে দিলে পড়ুয়ারা কোনও দিনই অঙ্ক শিখতে পারবে না। উত্তরটা ওদের নিজেদেরই খুঁজে বের করতে দিতে হবে।’’ স্কুল কর্তৃপক্ষ ডাকলে তিনি স্কুলে আসবেন বলে জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy