ডিজিটাল-ক্লাস: আগ্রহ বাড়ছে পড়ুয়াদের। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
তোমাদের মধ্যে কে কে চিড়িয়াখানায় গিয়ে বাঘ দেখেছ?
শিক্ষকের এই প্রশ্নে ক্লাসের ৫৬ জন পড়ুয়ার মধ্যে হাত তুলেছিল মাত্র ৭ জন। জানা গেল, বাকিরা কেউ কেউ টিভির পর্দায় বাঘ দেখলেও নিজের চোখে দেখার সুযোগ পায়নি।
বাঘ না হয় খানিকটা দূরের ব্যাপার, কিন্তু গ্রামীণ এলাকার পড়ুয়া হয়েও তাদের বেশিরভাগই গরুর গাড়ি কী জিনিস জানে না। ঢেঁকি দেখেনি। লাঙল দিয়ে জমি চাষ করার ব্যাপারে তাদের কোনও ধারণাই নেই।
পড়ুয়াদের ব্যবহারিক জ্ঞানের এমন বহর দেখে স্তম্ভিত গোপালনগর থানার ফুলবাড়ি জিএসএফপি স্কুল শিক্ষকেরা। কিন্তু শিশুমনের জানলা খুলে দিতে এ সব তথ্য যে জানা জরুরি, সেটা মনে করেছিলেন তাঁরা। ঠিক হয়, সাহায্য নেওয়া হবে প্রোজেক্টরের। ঠিক হয়, শুধু পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে পাঠ সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। নানা বিষয়ে ছবি দেখিয়ে, তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করতে হবে পড়ুয়াদের।
কিন্তু চাইলেই প্রোজেক্টর মিলবে কোথায়?
শেষমেশ স্কুলের ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং কয়েকজন প্রাক্তন পড়ুয়া এগিয়ে আসেন। সকলের আর্থিক সাহায্যে কিনে ফেলা হয় একটি ইলেকট্রনিক প্রোজেক্টর ও কম্পিউটার। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ জন্য প্রায় ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রধান শিক্ষক সত্যজিৎ সরকার বলেন, ‘‘পাঠ্য বইয়ের নানা বিষয়ের ছবি পড়ুয়াদের দেখানো হচ্ছে। তাতে শেখার আগ্রহ বাড়ছে।’’ প্রধান শিক্ষক আরও জানান, পড়ুয়াদের গাছপালা, জীবজন্তু, পশুপাখি চেনানো হয়। ভূগোল, ইতিহাস, বিজ্ঞানের নানা বিষয়ও দেখানো হবে। ইংরেজি শব্দের ঠিক উচ্চারণও শোনানো হবে।
১৯৫৭ সালে তৈরি হওয়া স্কুলটি প্রাক প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। পড়ুয়া ৩৪২ জন। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রোজেক্টরে শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের কম্পিউটার শেখানো হবে।
বেশির ভাগ পড়ুয়াই আসে দরিদ্র পরিবার থেকে। অধিকাংশ অভিভাবকই খেতমজুরি বা দিনমজুরি করেন। তাঁদের পক্ষে ছেলেমেয়েদের ঘুরতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। আর্থিক সমস্যার পাশাপাশি অবশ্য অভিভাবকদের সচেতনতারও অভাব রয়েছে।
সেই অভাব পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টৈা করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলটির এই কাজের প্রশংসা করেছেন প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা দফতরের কর্মকর্তারাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy