Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
বিতর্ক অশোকনগরের ঘটনায়

পুলিশের গাড়িতে ‘ধর্ষক’ ও তরুণী

একই গাড়িতে দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফাইল চিত্র

একই গাড়িতে দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফাইল চিত্র

সীমান্ত মৈত্র
অশোকনগর শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ০৩:২৪
Share: Save:

থানা থেকে বেরিয়ে পুলিশের গাড়িতে উঠলেন এক তরুণী। কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়িতে তোলা হল এক যুবককে। তরুণীর উল্টো দিকের সিটে বসলেন। ওই যুবকের বিরুদ্ধেই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার এই ঘটনায় অশোকনগর পুলিশের আচরণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে নানা মহলে। ধর্ষণের মতো সংবেদনশীল একটি ঘটনায় একই গাড়িতে অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীকে তোলা, মুখোমুখি বসানো কতটা যুক্তিযুক্ত হয়েছে— চলছে বিতর্ক।

পুলিশের তরফে যুক্তি, কাজটা আদৌ বেআইনি নয়। তবে এটাও ঠিক, এমন না হলেই ভাল হত। পুলিশ কর্তাদের যুক্তি, সব সময়ে আলাদা গাড়ির সংস্থান করা সম্ভব হয় না।

রবিবার রাতে অশোকনগরের গুমা কালীনগর এলাকার যুবক বাপ্পা নাথ এক বন্ধুকে সস্ত্রীক বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। নিজের স্ত্রীকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন বাপ্পা। অভিযোগ, রাতে তরুণীর স্বামীকে মদ খাইয়ে বেহুঁশ করে ফেলেন বাপ্পা। তরুণীকেও জোর করে মদ্যপান করান। কিছুটা পানীয় মুখে যেতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে দাবি তরুণীর। সেই সুযোগে বাপ্পা তাঁকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। রাতে স্বামীর হুঁশ ফেরেনি বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তরুণী। রাতটা কাটে বাপ্পার বাড়িতেই। সকালে ওই দম্পতি পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে বাপ্পাকে।

থানায় আনা হয়েছিল দু’পক্ষকেই, থানা থেকে বেরোনোর পরে ওই তরুণী ও বাপ্পাকে তোলা হয় একই গাড়িতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বাপ্পা সামনে এসে বসতেই অস্বস্তিতে পড়েন তরুণী। মাথা নিচু করে বসেছিলেন তিনি। পরে গাড়িতে ওঠেন এক মহিলা কনস্টেবল ও এক পুলিশ কর্মী। গাড়ি রওনা দেয় বারাসত জেলা আদালতের দিকে। আধ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হয় বারাসত আদালতে। বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দেন তরুণী। বাপ্পাকে দু’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

এ দিকে, অভিযোগকারীর মুখোমুখি বসানোয় তরুণীর মনের উপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে বলে মত অনেকেরই। অভিযুক্ত যুবক তরুণীকে ভয় দেখানোর সুযোগও পেতে পারত। এমনকী, দু’জনের কথা কাটাকাটি, হাতাহাতি হওয়াও অসম্ভব ছিল না বলে মনে করছেন অনেকে।

ওই তরুণী এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে মানবাধিকার কর্মী তথা এপিডিআর-এর বনগাঁ শাখার সম্পাদক অজয় মজুমদার বলেন, ‘‘তিরিশ মিনিটের যাত্রাপথে তরুণীর উপরে প্রচণ্ড মানসিক চাপ পড়ার কথা। অসুস্থও হয়ে পড়তে পারতেন।’’ ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি’-র সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তীর মতে, বিষয়টি বেআইনি নয় ঠিকই, তবে এ ভাবে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। অভিযুক্ত অভিযোগকারিণীকে ভয় দেখিয়ে প্রভাবিত করার সুযোগ পেয়ে যেতে পারত। বনগাঁ আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বলেন, ‘‘কাজটা বেআইনি নয়। তবে এ ক্ষেত্রে গাড়িতে মহিলা কনস্টেবল থাকাটা বাধ্যতামূলক।’’

পুলিশ অবশ্য এ সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের যুক্তি, গাড়িতে যেহেতু অন্য পুলিশ কর্মী ছিলেন, সে ক্ষেত্রে গোলমালের আশঙ্কা ছিল না। তাদের বক্তব্য, থানার এত বড় পরিকাঠামো নেই যে আলাদা গাড়িতে করে সব সময়ে দু’জনকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে।

উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ধর্ষণের বিষয়ে অভিযোগকারিণী ও অভিযুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক হলে দু’জনকে এক গাড়িতে নিয়ে যাওয়া যাবে না— আইনে এমন কিছু বলা নেই। তবে দু’জনকে আলাদা করে নিয়ে যেতে পারলেই ভাল।’’ পকসো আইনের ক্ষেত্রে নাবালিকা অভিযোগকারিণীকে অবশ্যই আলাদা করে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। এ বিষয়ে নির্দিষ্ট আইনও রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rape Police Controversy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE