Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

রক্ত দিয়েও বাঁচানো গেল না লায়লাকে

শুক্রবার রাতে বাওয়াআটির বাসিন্দা আজমিরা বিবি (৩৬) এবং দক্ষিণ কাউকেপাড়ার লায়লা বিবি (৩২) নামে দুই মহিলার মৃত্যু হয়। ডেঙ্গিতে লায়লার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বলে সরকারি হাসপাতাল।

দাতা: লায়লার জন্য রক্ত দিতে গিয়েছিলেন আফতাব। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

দাতা: লায়লার জন্য রক্ত দিতে গিয়েছিলেন আফতাব। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:০৩
Share: Save:

ফের জ্বরে ভুগে আরও দু’জনের মৃত্যু হল দেগঙ্গায়।

শুক্রবার রাতে বাওয়াআটির বাসিন্দা আজমিরা বিবি (৩৬) এবং দক্ষিণ কাউকেপাড়ার লায়লা বিবি (৩২) নামে দুই মহিলার মৃত্যু হয়। ডেঙ্গিতে লায়লার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বলে সরকারি হাসপাতাল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা ১ পঞ্চায়েতের দক্ষিণ কাউকেপাড়া গ্রামের লায়লা রবিবার জ্বরে আক্রান্ত হন। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। সোমবার বেসরকারি ল্যাবে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। প্লেটলেট কমে গিয়েছিল বলে রিপোর্ট মেলে। বৃহস্পতিবার সকালে বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতে আরজিকরে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে।

শনিবার লায়লার বৌদি মনোয়ারা বিবি বলেন, “রাতে কোনও চিকিৎসক না থাকায় পর দিন সকালে চিকিৎসা হবে বলে জানায় আরজিকর।’’ রোগীর অবস্থায় খারাপ হয়ে পড়ায় সেখান থেকে একটি নার্সিংহোম এবং পরে সেখান থেকে চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় লায়লাকে। শুক্রবার রাতে সেখানেই মারা যান তিনি।

হাসপাতাল থেকে দেওয়া মৃত্যুর শংসাপত্রে ‘ডেঙ্গি’ লেখা আছে বলে জানিয়েছেন তাঁর স্বামী রেজাউল মণ্ডল। তিনি বলেন, “তিনবার রক্ত পরীক্ষা হয়েছিল স্ত্রীর। শেষ রক্তের রিপোর্টে প্লেটলেট ৩৫ হাজারে নেমে যায়। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বেরোচ্ছিল। সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের গ্রামের ৬ জন রক্ত দিলে তারপর মেলে রক্ত। তারপরেও বাঁচানো গেল না আমার স্ত্রীকে।’’

গ্রাম থেকে রক্ত দিতে গিয়েছিলেন আফতাব খান। তিনি বলেন, “হাসপাতালে রক্ত দিতে গেলে আমাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।’’ রক্ত দিতে গেলে টাকা দিতে হয়, এটা প্রথম শুনলাম’’

আমুলিয়া পঞ্চায়েতের বাওয়াটি বাসিন্দা আজমিরা বিবির দু’দিন আগে জ্বর আসে। স্থানীয় চিকিৎসকের ওষুধ খেয়ে কিছুটা কমেছিল বলে জানান আজমিরার স্বামী মোমিন আলি। শুক্রবার সন্ধ্যায় ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পথেই আজমিরা মারা যান।

ছোট জাগুলিয়া এলাকায় শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত জ্বরের কারণে মৃত্যু না ঘটলেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ দিনও ছোট জাগুলিয়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভিড় জমান বহু রোগী। বামনগাছি থেকে জ্বর নিয়ে এ দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন শামিম। বললেন, “এখানে ডেঙ্গির পরীক্ষা তো হচ্ছে না। শুধু রক্ত নিয়ে বাইরে পাঠানো হচ্ছে। তা-ও সকলের রক্ত নেওয়া হচ্ছে না। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। জানি না, আজ রক্ত নেওয়া হবে কিনা”।

বারাসত হাসপাতালে এ দিন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা ও রক্ত পরীক্ষায় জন্য এসেছিলেন হাবরা, দেগঙ্গা, দত্তপুকুর, বারাসতের বহু রোগী। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। চড়া রোদে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে।

হাসপাতাল চত্বরে ঘাসের উপরে শুয়ে ছিলেন দত্তপুকুরের কদম্বগাছির রোজিনা খাতুন। তাঁর কথায়,, “হাঁটুতে জোর নেই। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। শুয়ে পড়েছি”। তাঁর জায়গায় স্বামী কুতুবুদ্দিন দাঁড়িয়েছিলেন লাইনে।

বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডলের অবশ্য দাবি, “কিছু দিন আগেও যা অবস্থা ছিল, এখন তার থেকে কিছুটা স্বাভাবিক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood dengue Mosquito
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE