Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পূর্ব পুরুষের স্মৃতি হাতড়ায় বাইচ

মনোরঞ্জনবাবু পনেরো বছর বয়সে ভিটেমাটি ছেড়ে পূর্বপুরুষের হাত ধরে চলে এসেছিলেন এ দেশে। ছোটবেলার স্মৃতি হাতড়ে বৃদ্ধ বলেন, ‘‘ও দেশে বাড়ির কাছেই ছিল দশরথ নদ।

হেঁইয়ো: মরা নদীতে প্রাণ ফেরাল বাইচ। বাগদায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

হেঁইয়ো: মরা নদীতে প্রাণ ফেরাল বাইচ। বাগদায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র
বাগদা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৭ ০২:০৮
Share: Save:

চোখের নজর, হাঁটুর জোর কমে গিয়েছে। বাংলাদেশের ফরিদপুর গ্রামে কোন কালে জন্ম হয়েছিল, এখন সে সব কথা শুধুই স্মৃতি। তবুও মৃতপ্রায় কোদালিয়া নদীতে বাইচ প্রতিযোগিতা হচ্ছে শুনে থাকতে পারেননি সত্তরোর্ধ্ব মনোরঞ্জন বিশ্বাস। নাতি-নাতনিদের হাত ধরে এসেছিলেন নদীর পাড়ে।

শুধু ওই বৃদ্ধ নন, কয়েক হাজার মানুষ শুক্রবার বিকেলে জড়ো হয়েছিলেন বাগদার পূর্ব হুদা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কোদালিয়া নদীতে বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে।

মনোরঞ্জনবাবু পনেরো বছর বয়সে ভিটেমাটি ছেড়ে পূর্বপুরুষের হাত ধরে চলে এসেছিলেন এ দেশে। ছোটবেলার স্মৃতি হাতড়ে বৃদ্ধ বলেন, ‘‘ও দেশে বাড়ির কাছেই ছিল দশরথ নদ। সেখানে হত বাইচ প্রতিযোগিতা। নদী ছিল উত্তাল, খরোস্রোতা।’’ ঘর ছেড়ে এ দেশে চলে আসার পরে আর কখনও বাইচ প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ হয়নি তাঁর। কিন্তু ছেলেবেলার স্মৃতিটা এখনও রয়েছে বৃদ্ধের। তাই শুক্রবার সকালে যখন গ্রামেই বাইচ প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল, তিনি উৎসাহ সামলাতে পারেননি।

পূর্ব হুদা গ্রামে প্রতি বছর লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে তরুণ সঙ্ঘ। সাত দিন ধরে মেলাও বসে। এখানকার মানুষের প্রধান উৎসবও লক্ষ্মীপুজো। তবে সব থেকে বেশি উৎসাহ থাকে বাইচকে ঘিরে। চল্লিশ বছর ধরে বাইচের আসর বসছে। পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা আলাদা প্রতিযোগিতা হয়। প্রতিযোগিতায় যোগ নিতে নদিয়ার বগুলা থেকে এসেছিলেন সনাতন বল। বয়স ষাট ছাড়িয়েছে। বলছিলেন, ‘‘সতেরো বছর বয়েসে বাবা-মার হাত ধরে এ দেশে আসা। ও দেশে জরিরপাড় নদীতে বাইচ খেলেছি। এখনও মনের আনন্দে নেমে পড়ি জলে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা রমা মণ্ডলও বাইচে যোগ দেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার জন্ম এ দেশে। তবে বাপ-ঠাকুর্দার কাছে ও দেশে বাইচের কত গল্প শুনেছি। তা থেকেই আগ্রহ।’’

সঙ্ঘের সম্পাদক বিজিতেন বিশ্বাস ও হিসাব রক্ষক গুরুপদ হালদার বলেন, ‘‘আমাদের এই এলাকার মানুষেরা ও পার বাংলা থেকে আসা মানুষ। বিশেষ করে ফরিদপুর থেকে। ও দেশের মানুষের জনপ্রিয় খেলা এই বাইচ। ও পার বাংলার সেই সংস্কৃতি তুলে ধরে এখানকার প্রবীণ মানুষদের তাঁদের শৈশবের স্মৃতি ফিরিয়ে দিতেই বাইচের আয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kodalia river Torpids
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE