বালি-বোঝাই নৌকো। ফাইল চিত্র
গত এক বছরের মধ্যে ১৬টি বালির খাদান বন্ধ করেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। বরাহনগর থেকে বীজপুর পর্যন্ত এই খাদানগুলি সবই বেআইনি ভাবে চলছিল বলে অভিযোগ।
মুখ্যমন্ত্রীর কিছু দিন আগে নির্দেশ দেন, বেআইনি বালি খাদান বন্ধ করতে হবে। পরিবেশ আদালতও উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া-হুগলির ক্ষেত্রে সেই নির্দেশ জারি করেছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বেআইনি বালির খাদান বন্ধ করার বিষয়ে একাধিক বৈঠক করা হয়েছে। পরে একটি দল তৈরি করা হয়েছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, পুলিশ, সেচ ও প্রশাসনের অন্যান্য বিভাগগুলির আধিকারিকদের নিয়ে। তাঁরাই নিয়ম করে নজরদারি চালিয়েছেন গত বছর শেষের দিক থেকে। জেলাশাসক অন্তরা আচার্য নিজেও নিয়মিত হানা দিয়েছেন প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে।
ব্যারাকপুরের এসডিএলআরও শ্রীধর পাল বলেন, ‘‘জেলাশাসকের নেতৃত্বে কড়া নজরদারিতেই বেআইনি বালির খাদানগুলি বন্ধ করে বালির ট্রাক আটক করে ছবিটা বদলানো গিয়েছে।’’
কী বলছেন জেলাশাসক নিজে?
অন্তরাদেবী বলেন, ‘‘বেআইনি বালি খাদান বন্ধ করাটা প্রশাসনিক স্তরে সকলেরই লক্ষ্য ছিল। আমরা সেটা পূরণ করতে পেরেছি, এটাই সাফল্যের।’’
পরিস্থিতি যে সত্যিই বদলেছে, স্থানীয় মানুষজনও সে কথা মানছেন। আগের বর্ষাতেও বালি ঘাটে গঙ্গাজল আনতে গিয়ে নদীর ধারে যাওয়ার রাস্তায় কাদা মাড়াননি ব্যারাকপুর মণিরামপুরের বাসিন্দারা। ঘাটের ধারের কাঁচা পথে ভরা বর্ষায় বালি-বোঝাই ভারী ট্রাক নিয়মিত চলাচল করত। সেই বালিই রাস্তার উপরে পড়ে জল-কাদা জমতে দিত না। এ বার অবশ্য উল্টো চিত্র। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ঘাটে বালি-বোঝাই নৌকো প্রায় আসেই না। বালির ট্রাকের সংখ্যাও কমেছে। ফলে পথ এখন কাদায় মাখামাখি।
ভাটপাড়ার মেঘনা মিল-সংলগ্ন রাস্তা। এক বছর আগেও ইঞ্জিনের গোঁ গোঁ আওয়াজে সরগরম হয়ে থাকত এই পথ। গঙ্গার মাঝখান পর্যন্ত চোখে পড়ত লোহার পাইপ। মাঝ গঙ্গায় বসানো ছিল পাম্প। সাদা বালি উঠত হু হু করে। পাইপ দিয়ে সেই বালি এসে পড়ত গঙ্গার পাড়ে। ট্রাকের পর ট্রাক বোঝাই হত বালি। তারপর মুড়াগাছা, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে চৌমাথা, ওয়্যারলেস গেট, পানপুর মোড়, হালিশহর মালঞ্চ মোড়ে এসে দাঁড়াত সেই ট্রাক। সেখান থেকেই বালির দালালরা ক্রেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে নির্দিষ্ট গন্তব্যে ট্রাক পাঠিয়ে দিত।
বেআইনি কারবারে শাসক দলের নেতাদের জড়িয়ে থাকা নিয়ে কানাঘুষো ছিল বহু দিন ধরেই। কিন্তু ইদানীং সে সবও কানে আসছে কম। এক বালি কারবারির কথায়, ‘‘নেতা থেকে শুরু করে থানা— সকলেই হাত তুলে নেওয়ায় গত কয়েক মাসে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হয়েছে।’’
কিন্তু খাদান বন্ধ হওয়ায় সাদা বালির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। খোদ সেচ বিভাগই খড়দহে বাঁধ মেরামতি করতে গিয়ে সাদা বালির অভাবে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে এক দিন। চাহিদা থাকায় ফের বেআইনি কারবার শুরু হবে না তো, প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy