যানজট: ইছামতী সেতু। ছবি: নির্মল বসু।
এক পাশে গাড়ির সারি। অন্য পাশে ভুট্টা, ফুচকা, আর ফলের দোকান। চলেছে লরি-সহ নানারকম গাড়িও। আবার এরই মাঝে চলছে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা-নামানোও।
এই হল বসিরহাটের ইছামতী সেতুর নিত্যদিনের ছবি। এই সব কারণে সেতুর রাস্তা ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় পথচারীদের হাঁটা-চলা থেকে শুরু করে অন্যান্য গাড়ির চলাচলও এখানে রীতিমতো বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সেতুর দু’পারের মানুষ। এ বিষয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের দাবি, সেতুর উপর স্পিড ব্রেকার, বিশেষ আলো এবং গার্ডরেল লাগানো হয়েছে। সেতুর উপর পার্কিং এবং জায়গা দখল করে বেচাকেনার উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর পরেও কেউ কথা না শুনলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বসিরহাট শহরের মাঝবরাবর বয়ে যাওয়া ইছামতী নদীর উপর ২০০১ সালে তৈরি হয়েছিল ২৮০ মিটার লম্বা কংক্রিটের এই সেতুটি। যার এক দিকে বসিরহাট পুরসভা, অন্য দিকে সংগ্রামপুর-শিবহাটি পঞ্চায়েত। সেতু পেরিয়ে ওল্ড সাতক্ষীরা রাস্তা দিয়ে কয়েক কিলোমিটার এগোলেই ঘোজাডাঙা সীমান্ত। যার অপর পারে বাংলাদেশের ভোমরা। ঘোজাডাঙা দিয়ে হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। যে কারণে ওই সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশো পণ্যবাহী লরি চলাচল করে। ফলে সেতুটির গুরুত্ব যথেষ্ট।সেতুর পাশে আছে মহকুমা শাসকের বাংলো, আদালত, সংশোধনাগার, পুরসভা, সেচ ও পূর্ত বিভাগ। সম্প্রতি সেতুর পারে জেলা পুলিশ সুপারের দফতর হয়েছে।
তা ছাড়া সেতুটির উপর থেকে বাংলাদেশি ধরা পড়ার ঘটনা ঘটে প্রায়শই। কয়েক বছর আগে সেতুর নীচ থেকে বেশ কিছু জিলেটিন স্টিক উদ্ধার হয়েছিল। বছরখানেক আগে জঙ্গিদের থেকে সেতু উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি-চিঠিও এসেছিল প্রশাসনের কাছে। এ সবের পর থেকে নিরাপত্তার দিক দিয়েও সেতুর গুরুত্ব কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। সেতুর এই বহুমুখী গুরুত্বের কথা চিন্তা করেই বোটঘাটে পুলিশ ফাঁড়ি করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও সেতুর উপর গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে, বসে দোকানও, রাতে অধিকাংশ পোস্টেই থাকে না আলো। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ উভয়পারের বাসিন্দা।
সম্প্রতি ওই সেতুর ঢালে নিয়ন্ত্রণ হারানো এক লরি এক দম্পতির প্রাণ কেড়ে নেয়। সে কথা জানিয়ে স্থানীয় শ্যামল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শয়ে শয়ে বড় পণ্যবাহী লরি চলে। প্রতিদিন সংগ্রামপুর, কামারডাঙা, মেরুদণ্ডী, বাজিতপুরের কৃষকেরা সাইকেলে, ভ্যানরিকশায়, বাইকে, যন্ত্রচালিত ভ্যানরিকশায়, ছোট গাড়িতে আনাজ নিয়ে বসিরহাট শহরের বাজারে আসেন। নিরাপত্তার কথা ভেবেই সেতুর উপর ব্যবসা বন্ধে প্রশাসনের উদ্যোগী হওয়া জরুরি।’’স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘‘সেতু পেরিয়ে বহু ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজে, অফিস-আদালতে যায়। ছোটখাটো দুর্ঘটনা তো এখানে ঘটেই। যে কোনও দিন বড় রকমের দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।’’ ছাত্রী স্বপ্না আঢ্য বলে, ‘‘টিউশন নিয়ে বাড়ি ফিরতে রাত হয়। সেতুর উপর দিয়ে সাইকেলে ফিরি। তখন এক দিকে বেপরোয়া গাড়ির দাপট। সেতুর ধারে দাঁড়িয়ে কিছু ছেলে কটূক্তিও করে। সেতুর নিরাপত্তার দিকটাও দেখা জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy