আকাশ আগে থেকেই কালো হয়ে এসেছিল। বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। উত্তাল হয়ে ওঠে সমুদ্র। এমন পরিস্থিতিতে আগে পড়িনি যে তা নয়। কিন্তু সোমবার কোনও ভাবে হাল ধরে রাখা যাচ্ছিল না। লক্ষণ ভাল ঠেকছিল না। সকলে জাল তুলে কেঁদোদ্বীপের দিকে রওনা দিই। সার দিয়ে ফিরছিল বহু ট্রলার। আমি ছিলাম এফবি রাজনারায়ণ ট্রলারে। পিছনেই ছিল এফবি জয়কৃষ্ণ। হঠাৎ শুনি সেখানে মৎস্যজীবীরা আর্তনাদ করছেন। তাকিয়ে দেখি, ট্রলার ক্রমশ কাত হয়ে পড়ছে। সেখান থেকে ছিটকে পড়েছেন কেউ কেউ। দু’জন উল্টে যাওয়া ট্রলারের উপরে ছিলেন। চারজন দেখলাম প্রাণপণে বয়া ধরে ভেসে থাকার চেষ্টা করছেন।
আমরা ট্রলার নিয়ে ওদের কাছাকাছি পৌঁছই। আমাদের ট্রলার থেকে দড়ি ছুড়ে দেওয়া হয় সমুদ্রে। এক এক করে ৬ জনকে টেনে তুলি। উদ্ধারের কাজে আমাদের সঙ্গে ছিল আরও দু’টি ট্রলার। যাঁদের তোলা হল জল থেকে, তাঁরা ওঠার পরে থরথর করে কাঁপছিলেন। কেউ কেউ কেঁদে ফেললেন।
আমি প্রায় পঁচিশ বছর ধরে মাঝির কাজ করে আসছি। কিন্তু ওই দিন নিজের চোখে যা দেখলাম, তা ভেবে আমার মতো পোড় খাওয়া লোকেরও বুক কেঁপে উঠছে। সুনামির কথা শুনেছিলাম। চোখের সামনে যখন ৩০-৪০ ফুট উঁচু ঢেউগুলো ধেয়ে আসছিল, সে সময়ে সুনামির কথাই মনে পড়ে গেল। সমুদ্রের সে কী দাপট। আর সঙ্গে শোঁ শোঁ শব্দে বইছে হাওয়া। এ যাত্রায় ফিরতে পারব ভাবিনি। ইষ্ট দেবতার নাম জপছিলাম।
প্রায় ১০ ঘণ্টা ট্রলার চালিয়ে পৌঁছই কেঁদোদ্বীপের জঙ্গলের খালে। তখন সাড়ে ১০টা বাজে। পেটে খিদে ছিল। কিন্তু রান্না করে খাবার মতো অবস্থা ছিল না কারও। যাঁদের উদ্ধার করে আনা হয়েছিল, তাঁরা জানালেন দুপুর থেকে পেটে কিছু পড়েনি। তাই সকলের জন্য খাবার ব্যবস্থা করতেই হল। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রওনা দিলাম নামখানা ঘাটের দিকে।
আমরা মাছ ধরতে প্রায় ৮০-৯০ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে চলে যাই। সেখানে মাছ না পেলে আরও দূরে যেতে হয়। এই ঘটনার পরে ফের কী করে জলে নামব জানি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy