Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গাছের অকাল মৃত্যু বসিরহাটে

বসিরহাট ২ ব্লকের শ্রীনগর, মাটিয়া, গোপালপুর, ধান্যকুড়িয়া, খোলাপোতা, শিকড়া-কুলিনগ্রাম, হাড়োয়া এবং বাদুড়িয়া যাওয়ার রাস্তার দু’পাশে গাছগুলি ক্রমশ পাতা ঝরে শীর্ণকায় চেহারা নিচ্ছে।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৯ ০০:২১
Share: Save:

ফুল ফোটা বন্ধ হয়েছে। বন্ধ হয়েছে গরমের দিনে প্রাণ জুড়ানো ফুরফুরে হাওয়া। গত কয়েক মাসে সার সার গাছের হতশ্রী চেহারা বসিরহাটের বিস্তীর্ণ এলাকায়।

বসিরহাট ২ ব্লকের শ্রীনগর, মাটিয়া, গোপালপুর, ধান্যকুড়িয়া, খোলাপোতা, শিকড়া-কুলিনগ্রাম, হাড়োয়া এবং বাদুড়িয়া যাওয়ার রাস্তার দু’পাশে গাছগুলি ক্রমশ পাতা ঝরে শীর্ণকায় চেহারা নিচ্ছে। শুকনো ডাল ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। কেউ কেউ রাতের অন্ধকারে শুকিয়ে যাওয়া ডাল ভেঙেও নিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে হতশ্রী চেহারা গাছের।

মাটিয়া গামছা হাটের কাছে টাকি রাস্তার দু’পাশ বরাবর সার সার দাঁড়িয়ে থাকা বকুল, রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া, শিরিষ, বাবলা, মেহগনি, সুবাবুল, নিম, কামিনী, আম গাছের গা থেকে ছাল উঠে গিয়েছে। ডাল ভেঙে গিয়েছে। স্কুলের ছাত্রী কল্পনা মণ্ডল, কাকলি ঘোষদের কথায়, ‘‘কয়েক মাস আগেও দেখেছি কত ফুল ফুটত এ সব গাছে। গরমের দিনগুলিতে গাছের তলায় দাঁড়ালে ফুরফুরে হাওয়ায় শরীর জুড়িয়ে যেত। কিন্তু কিছু লোক গাছগুলোর সর্বনাশ করে ছাড়ছে।’’

কারা গাছের এমন হাল করছে, তা স্পষ্ট নয়। স্থানীয় বাসিন্দা কারও কারও দাবি, রাস্তার সামনে জমি ফাঁকা করতে কেউ কেউ গাছ মারতে গোড়ায় গরম জল, হিং, কার্বাইট-সহ নানা ক্ষতিকর জিনিস ফেলে। এ ক্ষেত্রেও সম্ভবত তেমনই কিছু ঘটছে। কারও আবার অনুমান, পোকার উপদ্রবেই গাছগুলির এই দশা।

কারণ যা-ই ঘটুক, শুকিয়ে যাওয়া গাছগুলি যে ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাতে ঝড়ে বা সামান্য হাওয়াতেও ভেঙে পড়ে বিপত্তি ঘটাতে পারে। যশোর রোডে শুকনো গাছের ডাল ভেঙে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে গত কয়েক বছরে। প্রাণহানিও ঘটেছে। বসিরহাটের মানুষও শুকনো গাছ নিয়ে সেই আতঙ্কে ভুগছেন। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, ইতিমধ্যে গাছের ডাল ভেঙে পড়ায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। গাড়ির সামনের কাচ ভাঙার খবরও পাওয়া গিয়েছে।

শ্রীনগর-মাটিয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রেমেন্দ্র মল্লিক বলেন, ‘‘এক রকম পোকার জন্যই রাস্তার পাশের দামী গাছগুলির পাতা-ছাল নষ্ট হয়ে অকাল মৃত্যু ঘটছে। লক্ষ লক্ষ টাকার গাছ বর্তমানে বিপজ্জনক অবস্থায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে। বিষয়টি বন দফতরকে জানানো হয়েছে।’’ প্রেমেন্দ্রর দাবি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে আসা কয়েকজন মরা গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে তার ভিতর থাকা পোকা বিক্রির উদ্দেশ্যে। কিন্তু পোকা বিক্রি করা হবে কেন, তা স্পষ্ট নয়। উপপ্রধানের বক্তব্য, গাছ মারতে গোড়ায় গরম জল ঢালা বা অন্য রাসায়নিক দেওয়ার কথা মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিমূলক। তিনি জানান, এক সময়ে যখন গাছে পোকা লাগে, সে সময়ে বন দফতরকে জানানো হয়েছিল। ওই সময়ে ব্যবস্থা নিলে হয় তো গাছগুলি বাঁচানো যেত। তা ছাড়া, সময় মতো মরা গাছ কাটলে যে পরিমাণ টাকা মিলত, মরে-পচে নষ্ট হওয়ার পরে বিক্রি করলে সেটুকু লাভও হবে না। এ বিষয়ে বন দফতরের বসিরহাট মহকুমার এক অফিসার বলেন, ‘‘এক ধরনের পোকা লাগায় গাছের অকাল মৃত্যু ঘটছে। পরিকাঠামোর অভাবে ওই পোকা মারা সম্ভব হচ্ছে না। রঘুনাথপুরে কিসান মান্ডি থেকে মাটিয়া পর্যন্ত টাকি রাস্তা চওড়া করার জন্য পূর্ত দফতর আবেদনে ৩০টি গাছ কাটার অনুমতি বন দফতর দিয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ গাছ মরে গিয়েছে।’’

তবে পোকা লাগুক কিংবা গাছ মারার চেষ্টা করা হোক—রাস্তার দু’ধারে গাছের অকাল মৃত্যুতে প্রকৃতিপ্রেমীরা ব্যথিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Trees Basirhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE