স্মরণ-সভা: মৌমিতা, দেবীর জন্য। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
এই ক’দিন আগেই মেয়ে দু’টো বাকিদের পাশে বসে ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে থাকত। ওদের হাসিঠাট্টার শব্দ শোনা যেত। বন্ধুরা মিলে পড়তে যেত খুনসুটি করতে করতে।
সে দিন পড়তেই বেরিয়েছিল। রাস্তার ধার ঘেঁষে সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎই ধেয়ে এল ট্রাক। যার ধাক্কায় মারা গেল মৌমিতা মল্লিক আর দেবী ঢালি। বনগাঁ-চাকদহ সড়কে গোপালনগর বাজার এলাকায় কয়েক দিন আগের ঘটনা। শ্রীপল্লি প্রিয়নাথ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ত দুই কিশোরী।
সোমবার স্কুল খুলেছে। এত দিনে সকলেই জেনে গিয়েছে, তাদের দুই সহপাঠিনীর কথা। যাদের মনে রেখে এ দিন নীরবতা পালন করল পড়ুয়ারা। পরে এলাকায় মৌনী মিছিল বেরোয়। সেখান থেকে দাবি ওঠে, রাস্তার ধারে বেআইনি ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক সরাতে হবে। না হলে একের পর এক দুর্ঘটনা কমানো যাবে না। থামবে না মৃত্যু মিছিল।
প্রধান শিক্ষক পরিমলকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘যাতে আর কোনও মৃত্যু না ঘটে, সে জন্য বনগাঁ-চাকদহ সড়কে বেআইনি ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক সরানোর ব্যবস্থা করুক পুলিশ প্রশাসন।’’
মৌমিতা ও দেবীর সহপাঠী একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী লাবণী মণ্ডল, মৌসুমী মণ্ডল, পিয়ালী প্রামাণিকেরা বলে, ‘‘ওই পথ ধরেই স্কুলে আসতে হয়। কিন্তু মৌমিতাদের ঘটনাটা ঘটে যাওয়ার পর ভয়ে ভয়ে থাকি। মনে হয়, কখন কী ঘটে যাবে।’’ রাস্তার পাশ থেকে দ্রুত ট্রাক সরানোর ব্যবস্থা হোক, চায় তারাও।
স্কুলের শিক্ষিকা চৈতালী দেবনাথ ছোট গাড়ি করে স্কুলে আসেন। তিনিও ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে এখন ভয় পাচ্ছেন। শিক্ষক সমরেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের বলা হয়েছে, তারা যেন রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময়ে সতর্ক থাকে। মোবাইলে কথা বলতে বলতে বা বন্ধুর সঙ্গে গল্প করতে করতে যেন না যায়।’’
বনগাঁ-চাকদহ সড়কটি এখন এলাকার মানুষের কাছে ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। সোমবার দুপুরেও ওই রাস্তায় একটি ছোট গাড়ি সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি ধাক্কায় জখম হয়েছেন ২ জন। ঘটনাটি ঘটেছে পোলতা এলাকায়। দুর্ঘটনার পরে প্রায় ৪০ মিনিট সড়কটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। শনিবার দুপুরেও গোপালনগর বাজারে এক প্রৌঢ় ট্রাকের ধাক্কায় জখম হন।
বেআইনি ট্রাকের পার্কিং সরাতে পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর আগে বহু প্রতিশ্রুতি মিলেছে। বহু বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান এখনও হয়নি। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বাণিজ্যের গতি না বাড়লে ওই সড়ক থেকে ট্রাক সরানো সম্ভব নয়। এত ট্রাক রাখার মতো পার্কিং ব্যবস্থা এলাকায় নেই।
মানুষের প্রশ্ন, বাণিজ্যের জন্য মানুষ প্রাণ হারাবে এটাও মেনে নেওয়া যায় না।
বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। জেলা ও স্থানীয় স্তরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ট্রাক সড়ক থেকে সরানোর জন্য নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে। শীঘ্রই সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy