Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পাশাপাশি বসে ভোগ খান কল্যাণ-ফয়জল

বসিরহাট ১ ব্লকের সংগ্রামপুর-শিবহাটি পঞ্চায়েত এলাকায় শরৎ খালের উপরে মেরুদণ্ডী সেতু। নীচ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল গিয়ে মিশেছে ইছামতীতে।

পাশাপাশি: সহাবস্থানের পুজো। ছবি: সুজিত দুয়ারি

পাশাপাশি: সহাবস্থানের পুজো। ছবি: সুজিত দুয়ারি

নির্মল বসু ও সীমান্ত মৈত্র
বসিরহাট ও হাবড়া শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:১০
Share: Save:

সম্প্রীতির কালীপুজোয় মাতল বসিরহাটের ‘আমরা কজন’। হিন্দু-মুসলিম পরিবারের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চাঁদা তুলে পুজোর আয়োজন করেন এখানে। পাশাপাশি বসে পুজোয় ভোগও খান।

বসিরহাট ১ ব্লকের সংগ্রামপুর-শিবহাটি পঞ্চায়েত এলাকায় শরৎ খালের উপরে মেরুদণ্ডী সেতু। নীচ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল গিয়ে মিশেছে ইছামতীতে। সেতুর পাশে গড়ে উঠেছে হেলিপ্যাড। তৈরি হচ্ছে কর্মতীর্থ। আছে বড় ফুটবল মাঠ। বিদ্রোহী সঙ্ঘের পক্ষে ওই মাঠে স্থানীয় ছেলেদের ফুটবল প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ওই সঙ্ঘের পক্ষেই হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন মিলেমিশে ‘আমরা কজন’ নাম দিয়ে কালীপুজো করছেন গত সতেরো বছর ধরে।

সংগ্রামপুর-শিবহাটি পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জয় সরকার বলেন, ‘‘আমরা এখানে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ ঐক্যবদ্ধ ভাবে বসবাস করি। একে অন্যের অনুষ্ঠানে যোগ দেই। কেউ কেউ সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করেও যৌথ প্রতিরোধের মুখে সফল হতে পারেনি। একে অন্যের ধর্মীয় স্থান পাহারাও দিই আমরা। একত্রিত হয়ে কালীপুজো করছি। এক আসনে বসে দেবীর প্রসাদ খাচ্ছি।’’

পুজো কমিটির সভাপতি মণিশঙ্কর মণ্ডল, সম্পাদক বাপ্পা মণ্ডলদের কথায়, ‘‘পুজোর চাঁদা তোলা থেকে শুরু করে খিচুড়ি রান্না— সবটাই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে করেন।’’ পুজোর পাশাপাশি ফুটবল প্রশিক্ষণ, রক্তদান, ফুটবল প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-সহ নানা সামাজিক কাজ করা হয় বলে জানিালেন তাঁরা। জিন্না বিবি, রাকেশ গাজিরা জানালেন, সারা বছরই এখানে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে নানা অনুষ্ঠান পালন করেন।

গত আটচল্লিশ বছর ধরে সম্প্রীতির বাতাবরণে কালিপুজো হচ্ছে হাবড়ার সালতিয়া এলাকার ৩২ নম্বর রেলগেট পালপাড়ায়। কালীপুজোর আয়োজনে কল্যাণ সিংহ, মানস মল্লিকদের সঙ্গে সমান ভাবে ব্যস্ত ফয়জল মণ্ডল, রবিউল মণ্ডল, হাফিজুল আকুঞ্জিরা।

স্থানীয় একটি কালীমন্দিরকে ঘিরে এখানে ধুমধাম করে প্রতি বছর পুজোর আয়োজন করা হয়। সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সমাজসেবামূলক নানা কাজ হয়। মঙ্গলবার রাতে হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিম যুবকেরা খিচুড়ি রান্না করেছেন।

ফয়জল বলেন, ‘‘ইদে হিন্দুরাও আমাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যান। আমাদের জলসা অনুষ্ঠানেও তাঁরা সক্রিয় সহযোগিতা করেন।’’ কথা হচ্ছিল পুজো কমিটির সম্পাদক কল্যাণ সিংহের সঙ্গে। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে হিন্দু-মুসলিম বলে আলাদা কেউ নেই। সকলে মিলেমিশে থাকেন।’’

বাদুড়িয়ার ঢালিপাড়া-দাসপাড়া এলাকায় প্রতিবেশী সঙ্ঘের পুজোও হয় দুই সম্প্রদায়ের উদ্যোগে। সভাপতি জাকির মণ্ডল, সম্পাদক নবকুমার মণ্ডলরা বলেন, ‘‘এখানে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রতি অটুট। উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ মিলে পুজোর চাঁদাও তুলি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Community Communalism Hindu and Muslim Unity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE