Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পিকনিক করতে বেরিয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু যুবকের

পরিবারের অভিযোগ, বন্ধুদের ক্রমাগত টিপ্পনীর মুখে আর ধৈর্য রাখতে পারেননি রাজু। একনাগাড়ে টিপ্পনী সহ্য করতে না পেরে নৌকা থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দেন। তার পাঁচ দিন পরে, গত শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার নোদাখালি খানা এলাকায় গঙ্গার ধার থেকে উদ্ধার হয় রাজুর দেহ।

রাজু পণ্ডিত

রাজু পণ্ডিত

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৪
Share: Save:

চার মাস পরেই বিয়ে ঠিক হয়েছিল। তার আগে বড়দিনে, ছুটির সকালে খোশমেজাজে বন্ধুদের সঙ্গে নৌকাবিহারে বেরিয়েছিলেন বছর আঠাশের রাজু পণ্ডিত। কিন্তু সেটাই যে তাঁর শেষ বেরোনো হবে, তা ওই যুবকের বাড়ির কেউই সম্ভবত ভাবতে পারেননি। পরিবারের অভিযোগ, বন্ধুদের ক্রমাগত টিপ্পনীর মুখে আর ধৈর্য রাখতে পারেননি রাজু। একনাগাড়ে টিপ্পনী সহ্য করতে না পেরে নৌকা থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দেন। তার পাঁচ দিন পরে, গত শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার নোদাখালি খানা এলাকায় গঙ্গার ধার থেকে উদ্ধার হয় রাজুর দেহ। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই যুবকের সঙ্গে থাকা ১২ জন বন্ধুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রাজুর দিদি শিবানীদেবী রবিবার জানান, বিষড়ার বাসিন্দা এক তরুণীর সঙ্গে আগামী এপ্রিলে বিয়ে ঠিক হয়েছিল তাঁর ভাইয়ের। এমনকী, আশীর্বাদও হয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যেই এই মর্মান্তিক ঘটনা।

পুলিশ জানিয়েছে, ২৫ ডিসেম্বর সকালে ১২ জন বন্ধুর সঙ্গে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার আটান্ন গেট এলাকায় পিকনিক করতে বেরিয়েছিলেন রাজু। পরিবারের তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগে জানানো হয়েছে, পিকনিকের অনেকটা আগে থেকেই বিভিন্ন কথা বলে রাজুকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন অন্য বন্ধুরা। একটা সময় ওই টিপ্পনীর মাত্রা এমন জায়গায় পৌঁছয় যে রাজু নৌকা থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দিতে বাধ্য হন। বহু খোঁজাখুঁজি করা হলেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। ঘটনার দু’দিন পরে রাজুর বন্ধুরা ফিরে আসেন। কিন্তু রাজু না ফেরায় তাঁর পরিবারের সন্দেহ হয়। এরই মধ্যে শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার নোদাখালি থানা থেকে রাজুর পরিবারের কাছে খবর আসে, গঙ্গার ধার থেকে একটি দেহ উদ্ধার হয়েছে। এর পরেই রাজুর পরিজনেরা গিয়ে দেহ শনাক্ত করেন। নোদাখালি থানাতেও অভিযোগ জানান। পুলিশ জানিয়েছে, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে রাজুর ১২ জন বন্ধুকে।

দুই দিদি ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে রাজাবাগান ঘাটের কাছে একচিলতে বাড়িতে থাকতেন রাজু। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে বলতে ছিলেন তিনিই। তরতাজা ওই যুবকের আকস্মিক মৃত্যুতে বিয়ের সব আনন্দ এক লহমায় মুছে গিয়েছে। আকাশ ভেঙে পড়েছে পরিবারের মাথায়। এ দিন শিবানীদেবী বলেন, ‘‘আমরা দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই। ভাইকে যারা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল, তারা যেন কেউ ছাড় না পায়।’’ একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই বৃদ্ধা মা শান্তি পণ্ডিত। ঘটনা শোনার পরেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি।

নেহাতই ছেলেমানুষি করে কাউকে উত্ত্যক্ত করার ফল কী হতে পারে, তা ফের প্রমাণ হয়ে গিয়েছে এই ঘটনায়। বছরখানেক আগে ভবানীপুরের এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল। এক জন নিরাপত্তারক্ষীকে বহু দিন ধরে উত্ত্যক্ত করতেন অন্য রক্ষীরা। এক দিন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় ওই রক্ষীর। ব্যাঙ্কের মধ্যেই নিজের বন্দুক থেকে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হন তিনি। কিন্তু তার পরেও স্কুল, কলেজ বা কর্মক্ষেত্রে উত্ত্যক্ত করার প্রবণতা বন্ধ হয়নি। যে কারণে সম্প্রতি পড়ুয়াদের নিজেদের মধ্যে ‘বুলিং’ রুখতে উদ্যোগী হয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর। প্রতিনিয়ত তা লক্ষ্য রাখতে শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই মৃত্যুর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Unnatural Death Young Man Picnic Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE