Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
অকাল বৃষ্টিতে ক্ষতি চাষে, হেঁসেলেও টান পড়ার আশঙ্কা

মাঠেই পচছে আনাজ, ডাল 

জেলা উদ্যানপালন বিভাগের উপ অধিকর্তা হৃষিকেশ খাঁড়া জানান, এই বৃষ্টিতে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে বসিরহাট ১-২, বাদুড়িয়া, স্বরূপনগর, দেগঙ্গা, বারাসত ১-২, হাবড়া ২, আমডাঙ্গা এবং ব্যারাকপুরের ১ ব্লকের একটি অংশে। প্রাথমিক রিপোর্ট বুধবার কৃষি দফতরে পাঠানো হয়েছে। তবে তারপরেও বৃষ্টি হয়েছে।

বিপত্তি: ক্যাপসিকাম খেতে জমে আছে জল। আমিনপুরে ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ঘোষ

বিপত্তি: ক্যাপসিকাম খেতে জমে আছে জল। আমিনপুরে ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯ ০১:৪৪
Share: Save:

শীতের আনাজের দাম মেলেনি। গ্রীষ্মের আনাজ এবং শীতকালীন শস্যের ভাল দাম পাবেন বলে আশায় ছিলেন চাষিরা। কিন্তু তাতে জল ঢালল অকাল বর্ষণ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় আনাজ এবং ডাল শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। তবে অকাল বর্ষণ খরার ধান চাষের উপকারই করবে বলে তাঁদের মত। বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে আম এবং ফুল চাষ। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ফসল বাঁচাতে গেলে জমির জল বের করে ছত্রাক নাশক ছড়াতে হবে। তবে পিঁয়াজ, আলু এবং মুসুরের ক্ষতি কোনও ভাবে ঠেকানো যাবে না বলেই মনে করছেন জেলার কৃষি আধিকারিকেরা। চাষিরা বলছেন, বুধবারের টানা বৃষ্টিতে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় নষ্ট হয়েছে সর্ষে, তিল, ফুল এবং আমের মুকুলের।

জেলা উদ্যানপালন বিভাগের উপ অধিকর্তা হৃষিকেশ খাঁড়া জানান, এই বৃষ্টিতে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে বসিরহাট ১-২, বাদুড়িয়া, স্বরূপনগর, দেগঙ্গা, বারাসত ১-২, হাবড়া ২, আমডাঙ্গা এবং ব্যারাকপুরের ১ ব্লকের একটি অংশে। প্রাথমিক রিপোর্ট বুধবার কৃষি দফতরে পাঠানো হয়েছে। তবে তারপরেও বৃষ্টি হয়েছে। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে বলেই মনে করছেন কৃষি আধিকারিকেরা।

জেলায় প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আনাজ চাষ হয়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বেশির ভাগ জমিই জলমগ্ন হয়েছে। তার মধ্যে ৬-৭ হাজার হেক্টর জমির আনাজ নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা। এই সময়ে মূলত কুমড়ো জাতীয় আনাজ যেমন পটল, ঝিঙে, লাউয়ের বেশি ক্ষতি হবে। গোড়া পচে গাছ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেশি। পটল-ঝিঙে সবে উঠতে শুরু করেছিল। চাষিরা ভাল দামও পাচ্ছিলেন। গাছের ক্ষতি হওয়ায় তাঁদের দীর্ঘকালীন ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।

চাষিরা জানাচ্ছেন পেঁয়াজ প্রায় ওঠার মুখে এই বর্ষণ তাঁদের সর্বনাশ করে ছেড়েছে। জমি থেকে আর পেঁয়াজ তোলা যাবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা। তবে হৃষিকেশ বলেন, ‘‘যে সব পেঁয়াজের গাছ এখনও সবুজ আছে, সেগুলিতে ক্ষতির আশঙ্কা কম।’’ তিনি জানান, জেলায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। তার মধ্যে ছ’হাজার হেক্টর জমির আম গাছ ক্ষতির কবলে পড়েছে। কলা চাষেও ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে। দু’হাজার হেক্টরের মধ্যে ৮০০ হেক্টর জমির ফুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা অরূপ দাস জানান, আলু এবং মুসুর চাষে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। জেলায় প্রায় সাড়ে ন’হাজার হেক্টর জমিতে মুসুর চাষ হয়। ফসল ওঠার মুখে এই বর্ষণে প্রায় সব জমির মুসুরই নষ্ট হবে বলে তাঁর আশঙ্কা। প্রায় অর্ধেক জমির সর্ষে উঠে গেলেও মাঠে কাটা পড়ে রয়েছে অনেক গাছ। তার প্রায় সবটাই নষ্ট হবে। চাষিদের এখন করণীয় কী?

জেলার সহ-উদ্যান পালন অধিকর্তা শুভদীপ নাথ জানান, বৃষ্টি থামলে প্রথম কাজ, জমির জল বের করা। রোদ উঠলেই ফেনামিডোন ও ম্যানকোজেবের বা কার্বেন্ডাজিম ও ম্যানকোজেবের মিশ্রণ নির্দিষ্ট মাত্রায় আঠা সহযোগে স্প্রে করতে হবে। গোড়াপচা রোগ দেখা দিলে মেটালাক্সিল ও ম্যানকোজেবের মিশ্রণ বা থায়োফ্যানেট মিথাইল জলে গুলে গোঁড়া ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmers Vegetables Rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE